অর্থনীতিএনবিআরবিশেষ সংবাদ

প্রতিমাসে ৬ লাখ বিআইএন’র তথ্য যাচাই হয়

* বিডা, বন্ড অটোমেশন, অ্যাসাইকুডা, হাইটেক পার্ক বিআইএন এর তথ্য ব্যবহার করে
* ৩০টি তফসিলি ব্যাংক এ-চালানের জন্য বিআইএন এর তথ্য ব্যবহার করে
* একবছরে মূসক রিটার্ন বেড়েছে ১২ লাখ; রিটার্ন দাখিল আরো সহজ হচ্ছে
* সেবা সংস্থার ইন্টিগেশন হচ্ছে, ব্যবসার তথ্য লুকানোর সুযোগ সীমিত হচ্ছে

বিশেষ প্রতিনিধি: প্রতিনিয়ত বাড়ছে নতুন ব্যবসা সনাক্তকরণ নাম্বার (বিআইএন) সংখ্যা। সে সঙ্গে বাড়ছে মূসক রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা। মূলত ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেনতা বৃদ্ধির ফলে নিবন্ধন আর রিটার্ন-দুটোই বাড়ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছর মূসক নিবন্ধিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৭৫৬। অর্থাৎ নিবন্ধন প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৯২ শতাংশ। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছর রিটার্ন দাখিল বেড়েছে ১২ লাখ ১০ হাজার ৭৬৬টি। অর্থাৎ রিটার্ন প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৯৪ শতাংশ। আবার ২০২১-২২ করবর্ষে যেখানে আয়কর রিটার্ন দাখিল হয়েছে ২৫ লাখ ৪৮ হাজার; সেখানে মূসক রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৩০ লাখ ৪১ হাজার। যদিও নিবন্ধিত ই-টিআইএন ও বিআইএন এর সংখ্যার মধ্যে রয়েছে বিপুল ব্যবধান।

অপরদিকে, প্রতিনিয়ত বিআইএন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে বিআইএন এর তথ্য ব্যবহার বা যাচাই করে ৩০টি তফসিলি ব্যাংক। মূলত এ-চালানের মাধ্যমে মূসক পরিশোধের ক্ষেত্রে ব্যাংক বিআইএন এর তথ্য যাচাই করে। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডে প্রতিষ্ঠানের বিআইএন এর তথ্য যাচাই করে। এছাড়া বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বন্ড অটোমেশন, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, মাঠ পর্যায়ের ভ্যাট কর্মকর্তারা বিআইএন এর তথ্য যাচাই ও ব্যবহার করে। হিসেব অনুযায়ী, বতর্মানে মূসক নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪ লাখ ২৩ হাজার ৫৭০টি। কিন্তু প্রতিমাসে প্রায় ৬ লাখবার বিআইএন এর তথ্য যাচাই ও ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বিআইএন সার্ভারের সঙ্গে আইআরসি, ইআরসি, সিটি করপোরেশনসহ আরো সেবা সংস্থার ইন্টিগেশন বাড়ছে। বিআইএন যাচাই ও ব্যবহারকারী বাড়ছে। যার ফলে ব্যবসায়ীদের কোন তথ্য লুকানো বা গোপন করার সুযোগ সীমিত হচ্ছে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।

এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছর মূসক নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিলো ৩ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭টি। ২০২০-২১ অর্থবছর নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ছিলো ২ লাখ ৮১ হাজার ১২৩টি। অর্থাৎ সর্বশেষ অর্থবছর নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ৭৯ হাজার ৩৮৪টি। ২০২১-২২ অর্থবছর মূসক রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৩০ লাখ ৪০ হাজার ৫৭৪টি। নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানকে প্রতিমাসে মূসক রিটার্ন দাখিল করতে হয়। সে হিসেবে প্রতিমাসে গড়ে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৩৮১ রিটার্ন দাখিল হয়েছে। আবার ২০২০-২১ অর্থবছর মূসক রিটার্ন দাখিল হয়েছে ১৮ লাখ ২৯ হাজার ৮০৮টি। সে হিসেবে ২০২১-২২ অর্থবছর মূসক রিটার্ন বেড়েছে ১২ লাখ ১০ হাজার ৭৬৬টি।

অপরদিকে, ২০১৯-২০ অর্থবছর মূসক নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিলো ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫১টি। এর মধ্যে রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৯২ হাজার ২৯০টি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছর নিবন্ধন বেড়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৭৫৬টি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯২ শতাংশ। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছর মূসক রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৯২ হাজার ২৯০টি। আর ২০২১-২২ অর্থবছর রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৩০ লাখ ৪০ হাজার ৫৭৪টি। অর্থাৎ রিটার্ন বেড়েছে ২৯ লাখ ৪৮ হাজার ২৮৪টি। রিটার্ন প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩২৯৪ শতাংশ।

ভ্যাট অনলাইন এর হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে অনেক কাজে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মূসক সংক্রান্ত তথ্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। সেজন্য প্রতিনিয়ত বিআইএন এর তথ্য যাচাই ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইন্টিগেশনের ফলে ব্যবহার ও তথ্য যাচাই সহজ হচ্ছে। বর্তমানে এ-চালান ভেরিফিকেশনের জন্য প্রতিমাসে প্রায় দেড় লাখ বিআইএন এর যাচাই করা হয়। মূলত তফসিলি ব্যাংকগুলো এই তথ্য যাচাই করে। এছাড়া প্রতিমাসে মূসক রিটার্ন দাখিলের জন্য ৩ লাখ ৭০ হাজার, অনলাইন সিস্টেমে প্রতিমাসে প্রায় এক লাখ, নতুন নিবন্ধনসহ প্রায় এক লাখ বিআইএন এর যাচাই করা হয়। প্রায় এক হাজার ৮০০ ইউজার আইডি ভ্যাট ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন কেউ না কেউ লগইন করে থাকে। সব মিলিয়ে প্রতিমাসে প্রায় ৬ লাখ বিআইএন এর তথ্য যাচাই ও ব্যবহার করে বলে জানিয়েছেন ভ্যাট অনলাইনের কর্মকর্তারা। সূত্রমতে, ভ্যাট অনলাইন বা বিআইএন এর সঙ্গে ই-টিআইএন সার্ভারের সঙ্গে ইন্টিগেশন রয়েছে। ফলে কোন কোম্পানির বিআইএন সংক্রান্ত তথ্য ই-টিআইএন ব্যবহারকারীরা চাইলে যাচাই করে নিতে পারেন। এছাড়া বিআইএন সার্ভার অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড, বন্ড অটোমেশন, বিডা, হাইটেক পার্ক সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ৩০টি শিডিউল ব্যাংক বিআইএন এর সার্ভার থেকে ডাটা যাচাই করতে পারে। বিশেষ করে এ-চালান গ্রহণকারী ব্যাংকগুলো বিআইএন এর তথ্য যাচাই করতে পারে। বিআইএন সার্ভারের সঙ্গে ভবিষ্যতে আইআরসি, ইআরসি, আরজেএসসি, সিটি করপোরেশনের ইন্টিগেশন করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যার ফলে কোন ব্যবসায়ী বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যবসা সংক্রান্ত যেকোন তথ্য বা ডাটা লুকানোর কোন সুযোগ থাকবে না।

এই বিষয়ে এনবিআরের একজন সদস্য (মূসক) বলেন, বিআইএন এর তথ্যের ব্যবহার বাড়ছে। আইআরসি, ইআরসি, সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ইন্টিগেশনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কোন অ্যাপসের মাধ্যমে রিটার্ন দাখিল পদ্ধতি চালু করা চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে আরো সহজে রিটার্ন দাখিল করা যায়। ৭০ শতাংশ বিআইএন জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য আপডেট হয়েছে। বাকি ৩০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের এনআইডির তথ্য আপডেট চলছে। যার ফলে কোন প্রতিষ্ঠান চাইলেই ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য লুকাতে পারবে না। বর্তমানে নিবন্ধিত বিআইএন সংখ্যা ৪ লাখ ২৩ হাজার ৫৭০টি।

অপরদিকে, এনবিআরের গবেষণা ও পরিসংখ্যান অনুবিভাগের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে নিবন্ধিত ই-টিআইএন প্রায় ৮০ লাখ। এর মধ্যে বিদায়ী ২০২২-২৩ করবর্ষে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের আয়কর বিবরণী (রিটার্ন) দাখিল করেছে প্রায় ২৪ লাখ (৩০ নভেম্বর পর্যন্ত)। আর ২০২১-২২ করবর্ষে মোট রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৪৮ হাজার। আর মূসক নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪ লাখ ২৩ হাজার ৫৭০টি। এর মধ্যে ২০২১-২২ করবর্ষে মূসক রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৩০ লাখ ৪০ হাজার ৫৭৪টি। মূসক আর আয়কর রিটার্ন তুলনা করলে মূসক রিটার্ন দাখিলের সংখ্যাই বেশি।

সূত্র-শেয়ার বিজ (২৬ মার্চ ২০২৩)

###

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button