আইন-আদালতএনবিআরবিশেষ সংবাদ

‘আবারো’ কমিশনার বেলাল চৌধুরীর সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক

## ২০১২ ও ২০০৯ সালে তদন্ত করে কোন অবৈধ সম্পদ পায়নি দুদক

## এনবিআর তদন্ত করে বেলাল চৌধুরীর কোন অবৈধ সম্পদ পায়নি

## আড়াই টন ভায়াগ্রা আটক করে মাফিয়াদের রোষানলে পড়েন তিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: একই সংস্থা তিনবার তদন্ত করেছে। নিয়েছে তাঁরসহ পরিবারের সকলের সম্পদের হিসাব। তদন্তে কোন অবৈধ সম্পদ পায়নি। বলা হচ্ছে কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরীর কথা। তিনি বেনাপোল কাস্টম হাউসের সাবেক কমিশনার। বর্তমানে তিনি শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যপর্ণ পরিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর বিরুদ্ধে তিনবার তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। যাতে কিছুই পায়নি। এবার আবারো কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের হিসাব চেয়ে বৃহস্পতিবার (১ জুন) দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের সই করা চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে আগামী ২১ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিলের অনুরোধ করা হয়েছে। দুদক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। অপরদিকে, এর আগে অভিযোগের বিষয়ে দুদকের অনুরোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বেলাল হোসাইন চৌধুরীর অবৈধ সম্পদের তদন্ত করেও কিছুই পায়নি।

বেলাল হোসাইন চৌধুরীর রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বাসার ঠিকানায় পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে দুদকের স্থির বিশ্বাস যে, আপনি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ বা সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। আপনার নিজ ও আপনার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে-বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী কমিশনে দাখিল করবেন। এ আদেশ প্রাপ্তির ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে সম্পদ বিবরণী দাখিলে ব্যর্থ হলে কিংবা মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দাখিল করলে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ৫(২) ধারা মোতাবেক আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

দুদকের আবারো সম্পদের হিসাব চাওয়ার বিষয়ে বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার থাকাকালে আমার বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল। কিন্তু অনুসন্ধানে আমার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ না পেয়ে অভিযোগটি নিষ্পত্তি (নথিভুক্ত) করা হয়েছিল। এ ছাড়া দুদকে দাখিল করা একই ধরনের অভিযোগের বিষয়ে এনবিআর তদন্ত করে। এনবিআরের সদস্য (শুল্কনীতি ও আইসিটি) সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া স্যারের নেতৃত্বে তদন্ত করেও আমার বিরুদ্ধে কিছুই পাওয়া যায়নি। অভিযোগ আমার নামে যেসব বাড়ি ও ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো অন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে। তিনি বলেন, দুদকের সাবেক এক উপপরিচালক আহসান আলীর করা মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমার আয়কর ফাইলে যা আছে সেটাই আমার প্রকৃত সম্পদ, এর বাইরে আমার কোনো সম্পদ নেই। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দুদক চিঠি দিয়েছে, আমি আমার সম্পদের হিসাব জমা দেব।

সূত্রমতে, বেলাল হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে কিছু সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সঙ্গে যোগসাজশে দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নামে-বেনামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে। তার বিরুদ্ধে বাড়ি, গাড়ি ও অবৈধ সম্পদসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৯ সালে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর দুদকের হাজির হওয়ার জন্য তলবও করা হয়েছিল।

এনবিআরের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে এনবিআর ও দুদকে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে ৪৮০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির কথা বলা হলেও বিষয়টি তদন্তে সুনির্দিষ্ট বিল অব এন্ট্রি সংক্রান্ত কোনো তথ্য মেলেনি। অভিযোগে শেখ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নামীয় এক ব্যবসায়ীর মালিকানা হিসেবে মেসার্স ট্রিনা অ্যাসোসিয়েশনের কথা বলা হলেও বাস্তবে ওই ব্যক্তি কোনো সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নন। অবৈধ সম্পদের অভিযোগে বেলাল চৌধুরীর নামে ধানমন্ডির ১৫/এ, রোড নম্বর-৪-এর ১৫ নম্বর বাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়। তদন্তে দেখা গেছে, ওই বাড়ির মালিক ও বসবাসকারী মো. আতিকুল করিম ও পাপ্পু। ওই বাড়িতে একটি ডেভেলপার কোম্পানি রয়েছে। এছাড়া অভিযোগে ১৫০ কোটি টাকা মূল্যের ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাড়িটি বেলাল চৌধুরীর নামে উল্লেখ করা হয়। তদন্তকালে ওই বাড়ির মালিকানা হিসেবে স্থানীয় তিন ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। এরা হলেন-উজির আফজাল, নাজির আফজাল ও তৈয়ব আফজাল।

ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়িটিও বেলাল চৌধুরীর নামে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছিল অভিযোগে। কিন্তু এনবিআরের তদন্তে দেখা গেছে, ওই বাড়িটি সাবেক নৌবাহিনীর প্রধান মরহুম মাহবুব আলী খানের নামে। বাড়িটির বর্তমান মালিক সৈয়দ ইকবাল মান্দ বানু। তার দুই মেয়ে জোবায়দা রহমান ও বিন্দু। অভিযোগে বসুন্ধরা জি-ব্লকে ১০ কাঠা জমির ওপর ৭৫ কোটি টাকা মূল্যের ৬ তলা বাড়ির কথা বলা হলেও ওই তথ্যেরও সত্যতা পায়নি তদন্ত কমিটি। অভিযোগে বেলাল চৌধুরীর নামে যশোর এসপি অফিসের পাশে ১৫ কাঠা জমির ওপর ১৫ তলা ভবন নির্মাণ, ২ কোটি টাকা দিয়ে সিভিল সার্জন অফিসের পাশে ৩৩ শতাংশ জমি ক্রয় করে ৭৫ কোটি টাকা দিয়ে ১০ তলা ভবন নির্মাণের কথা বলা হয়। কিন্তু তদন্তে এর কোনো সত্যতাই মেলেনি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও নোয়াখালী শহরে ৭৫ কোটি টাকা দিয়ে ১০ কাঠা জমির ওপর ৬ তলা বাড়ি নির্মাণের যে কথা অভিযোগে বলা হয়েছে, তারও সত্যতা মেলেনি। যদিও ৪৫ নিউ ইস্কাটনে যে ফ্ল্যাটে বেলাল চৌধুরী পরিবার নিয়ে বসবাস করেন সেই ফ্ল্যাটের মালিকানার সত্যতা পায় এনবিআর।

সূত্রমতে, বেলাল হোসাইন চৌধুরী বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার থাকাকালীন আড়াই টন ভায়াগ্রা আটক করেন। জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এই ভায়াগ্রা আমদানি চক্রের গড়ফাদার ও মাফিয়াদের রোষানলে পড়েন তিনি। এ ছাড়া চোরাচালান ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে ভূমিকা রাখায় তিনি শক্রুতে পরিণত হন। মাফিয়ারা তার বিরুদ্ধে নামে-বেনামে অভিযোগ ও চিঠি দিয়েছেন। বেলাল চৌধুরী কর্মজীবনে মেধা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। যাতে তিনি সার্টিফিকেট অব মেরিট, উদ্ভাবনী কাজের জন্য আইএফসিসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে পুরুস্কার পেয়েছেন।

###

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button