অর্থনীতিএনবিআরকর্পোরেটজাতীয়প্রযুক্তিবিশেষ সংবাদ

জালিয়াতি করে আমদানি হচ্ছে ‘মাইক্রোওয়েভ ওভেন’

** সাধারণ মাইক্রোওয়েভ ওভেন ৯০০-১৩৫০ ওয়াট বিদ্যুতে চালানো সম্ভব, কনভেকশন টাইপ ওভেন পরিচলনে ২৪০০-৩০০০ বেশি ওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়
** বাটারফ্লাই চার বছর আট মাসে মাইক্রোওয়েভ ওভেন আমদানিতে প্রায় ১০ কোটি ৪২ লাখ টাকা শুল্ককর ফাঁকি দিয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি: সাধারণ মাইক্রোওয়েভ ওভেন ৯০০-১৩৫০ ওয়াট বিদ্যুতে চালানো সম্ভব। কিন্তু কনভেকশন টাইপ মাইক্রোওয়েভ ওভেন চালাতে বিদ্যুৎ খরচ হয় ২৪০০-৩০০০ বা আরও বেশি ওয়াট। সাধারণ মাইক্রোওয়েভ ওভেন আমদানিতে মোট শুল্ককর ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু কনভেকশন টাইপ মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর মোট আমদানি শুল্ককর ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। দেশের বড় কোম্পানি থেকে শুরু করে আমদানিকারক-সবাই কনভেকশন টাইপ মাইক্রোওয়েভ ওভেনকে সাধারণ মাইক্রোওয়েভ ওভেন ঘোষণা দিয়ে আমদানি করে আসছে। অর্থাৎ অসত্য এইচএস কোড ঘোষণায় শুল্ককর ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। কাস্টম হাউসের গাফিলতির সুযোগ ও কর্মকর্তারা ওভেনের ফাংশন ভালো করে বুঝতে না পারার সুযোগে সূক্ষ্ম জালিয়াতির মাধ্যমে মাইক্রোওয়েভ আমদানি করা হচ্ছে।

বাটারফ্লাই গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের একটি চালান আটকের পর ওভেন আমদানিতে সূক্ষ্ম কারসাজির মাধ্যমে শুল্ককর ফাঁকির বিষয়টি সামনে এসেছে। কাস্টমস গোয়েন্দা ২০২২ সালে চালানটি আটক করে। আটকের পর দেখা গেছে, শুধু বাটারফ্লাই গ্রুপের প্রতিষ্ঠান চার বছর আট মাসে একইভাবে অসত্য এইচএস কোডে ওভেন আমদানিতে প্রায় ১০ কোটি ৪২ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছে। এনবিআর বলছে, কাস্টম হাউসগুলো সঠিক এইচএস কোডে মাইক্রোওয়েভ ওভেন শুল্কায়ন না করলে শুল্ককর ফাঁকি থামবে না।

এনবিআর সূত্রমতে, এইচএস কোড জালিয়াতির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে ‘মাইক্রোওয়েভ ওভেন’ আমদানি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠে। বিশেষ করে উচ্চ শুল্কের মাইক্রোওয়েভ ওভেন নিম্ন শুল্কের এইচএস কোডে শুল্কায়ন করে খালাস নেয়া হচ্ছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ছোট আমদানিকারকরা দীর্ঘদিন ধরে এমন সূক্ষ্ম কারসাজির মাধ্যমে শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে আসছে। অভিযোগ উঠার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক কার্যালয় ২০২২ সালের ১৪ মে বাটারফ্লাই গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বাটারফ্লাই মার্কেটিং লিমিটেডের আমদানি করা মাইক্রোওয়েভ ওভেনের একটি চালান খালাস স্থগিত করে। কায়িক পরীক্ষায় এইচএস কোডের সূক্ষ্ম জালিয়াতির মাধ্যমে শুল্ককর ফাঁকির প্রমাণ পায় কাস্টমস গোয়েন্দা। পরে ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনারকে চিঠি দেয়া হয়। একইসঙ্গে মাইক্রোওয়েভ ওভেন আমদানিতে যেসব প্রতিষ্ঠান একই ধরনের জালিয়াতি ও কারসাজি করছে, তা যাচাই করা হয়।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনারকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, বাটারফ্লাই মার্কেটিং লিমিটেড ১৪ মে আমদানি করা চালানটি ৮৫১৬.৫০.০০ এইচএস কোডে মাইক্রোওয়েভ ওভেন ঘোষণা করেছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চালানটি লক করা হয়। পরে কায়িক পরীক্ষা করে সাধারণ মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর জায়গায় ‘কনভেকশন টাইপ মাইক্রোওয়েভ ওভেন’ পাওয়া যায়। কাস্টমস আইন এর প্রথম তফসিল ও ডব্লিউসিও প্রণীত এক্সপ্লানেটোরি নোটস (ব্যাখ্যামূলক নোটস) অনুযায়ী ৮৫১৬.৬০.০০ এইচএস কোডে শ্রেণিবিন্যাসযোগ্য বা শুল্কায়নযোগ্য। এক্ষেত্রে আমদানিকারক কাস্টমস আইনের ৩২ ধারা লঙ্ঘন করে অসত্য বা মিথ্যা এইচএস কোড ঘোষণা করেছেন। অসত্য এইচএস কোড ঘোষণায় মাইক্রোওয়েভ ওভেন খালাস ও শুল্ককর ফাঁকির চেষ্টা করায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কমিশনারকে কায়িক পরীক্ষার প্রতিবেদন দেয়া হয়। আমদানিকারক কাস্টমস গোয়েন্দার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে হাউসের অ্যাসেসমেন্ট কমিটিতে উত্থাপন করেন। ওই কমিটিতে কাস্টমস গোয়েন্দার পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেয়া হয়।

অপরদিকে, কাস্টম হাউস ১৬ জুন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে অ্যাসেসমেন্ট কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। যাতে ফাস্ট শিডিউল, এক্সপ্লেমেন্টারি নোটস এবং পণ্যের নমুনা বিশ্লেষণ করে মাইক্রোওয়েভ ওভেন (কনভেনশনাল টাইপ) এর এইচএস কোড ৮৫১৬.৫০.০০ এর পরিবর্তে এইচএস কোড ৮৫১৬.৬০.০০ মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অ্যাসেসমেন্ট কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস বাটারফ্লাইকে ৩৫ লাখ ৩৪ হাজার ২০৫ টাকা শুল্ককর ফাঁকির বিপরীতে ৭২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও তিন লাখ টাকা বিমোচন জরিমানা করে বিচারাদেশ দেয়া হয়। ২৫ আগস্ট এই বিচারাদেশ দেয়া হয়। এছাড়া কাস্টমস গোয়েন্দার দেয়া আরো একটি প্রতিবেদনে বাটারফ্লাই মার্কেটিং লিমিটেডের অপর একটি চালানে একইভাবে অসত্য এইচএস কোড ঘোষণা দেয়ায় ১ নভেম্বর রায় দেয় কাস্টম হাউস। তাতে ৫৭ লাখ ৭ হাজার ২২০ টাকা শুল্ককর ফাঁকি দেয়ায় ১ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, ১০ লাখ টাকা বিমোচন জরিমানা করা হয়। অপরদিকে প্রতিষ্ঠান কাস্টম হাউসের বিচারাদেশে সংক্ষুদ্ধ হয়ে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপীলাত ট্রাইব্যুনাল মামলা দায়ের করে।

অন্যদিকে, আপীলাত ট্রাইব্যুনাল ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেয়। আদেশে বলা হয়, ‘এই ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক আপীল মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আপীলকারী যদি ঘোষণা অনুযায়ী প্রযোজ্য শুল্ককরাদি নগদে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান এবং তর্কিত শুল্ককরাদি, অর্থদণ্ড ও বিমোচন জরিমানার সমপরিমাণ নি:শর্ত ব্যাং গ্যারান্টি দাখিল করেন, তবে এই আদেশ প্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে আপীলকারীর অনুকূলে পণ্যচালানটি খালাসের নির্দেশ প্রদান করা হলো।’ এই আদেশ মোতাবেক পণ্যচালান সাময়িক শুল্কায়ন করে ছাড় প্রদান করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। পরে ১ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল আগের আদেশ বাতিল করেন এবং বিচার্য বিষয় আপীলকারীর অনুকূলে নিষ্পত্তি করা হয়। তবে চট্টগ্রাম কাস্টম থেকে ট্রাইব্যুনালে রেসপন্ডেন্ট পক্ষ হিসেবে আপীল আবেদনের উপর কোনো দফাওয়ারী জবাব দেয়নি। অবশ্যই পরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস উচ্চ আদালতে এই বিষয়ে আপীল করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এনবিআর সূত্রমতে, মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর সঠিক এইচএস কোড নির্ধারণ ও মামলা নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি যুগ্ম পরিচালক মো. শামসুল আরেফিন খান সই করা চিঠি দেয়া হয়েছে।

এনবিআর সূত্রমতে, কাস্টমস গোয়েন্দা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে বাটারফ্লাই মার্কেটিং লিমিটেডের দুইটি চালানের প্রতিবেদন দেয়। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি একটি চালানে অসত্য এইচএস কোড ঘোষণায় শুল্ককর ফাঁকি দিয়েছে ৩৫ লাখ ৩৪ হাজার ২০৫ টাকা। ফাঁকি প্রমাণিত হওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার এই চালানে ৭২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও ৩ লাখ টাকা বিমোচনযোগ্য জরিমানা দেয়। এছাড়া একই প্রতিষ্ঠানের অপর একটি চালানে অসত্য এইচএস কোডে ৫৭ লাখ ৭ হাজার ২২০ টাকা শুল্ককর ফাঁকি দেওয়ায় এক কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা বিমোচনযোগ্য জরিমানা করা হয়। কাস্টমস গোয়েন্দা বাটারফ্লাই মার্কেটিং লিমিটেডের ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত (চার বছর আট মাস) আমদানি করা একই ধরনের কনভেনশনাল মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর চালান অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডে যাচাই করে। এতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি এই চার বছর আট মাসে মিথ্যা এইচএস কোডে মাইক্রোওয়েভ ওভেন আমদানিতে প্রায় ১০ কোটি ৪২ লাখ টাকা শুল্ককর ফাঁকি দিয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম উদ্যোগ নিলে ফাঁকি দেয়া এই শুল্ককর আদায় করা সম্ভব হবে।

কাস্টমসের হিসাব অনুযায়ী, এইচএস কোড-৮৫১৬.৬০.০০-তে আমদানি করা পণ্যের মোট শুল্ককর ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। এর মধ্যে রয়েছে ২৫ শতাশ কাস্টমস ডিউটি (সিডি), ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক (এসডি), ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর (এআইটি), ৫ শতাংশ আগাম কর (এটি) ও ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি)। এই এইচএস কোডে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে-ইলেকট্রিক ওভেন, কুকিং স্টভস, কুকিং প্লেটস, বয়েলিং রিংগস, গ্রিলেরস এন্ড রোস্টারস, রেঞ্জস। আর এইচএস কোড-৮৫১৬.৫০.০০-তে আমদানি করা পণ্যের মোট শুল্ককর ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে রয়েছে ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর, ৫ শতাংশ আগাম কর ও ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি। এই এইচএস কোডে আমদানি করা পণ্য হলো মাইক্রোওয়েভ ওভেন।

অপরদিকে, কাস্টমস গোয়েন্দার অনুসন্ধান অনুযায়ী, আমদানিকারকরা ৮৫১৬.৫০.০০ এইচএস কোডে ঘোষণা দিয়ে মাইক্রোওয়েভ ওভেন খালাস নিচ্ছে। এই সাধারণ মাইক্রোওয়েভ ওভেন ৯০০ থেকে ১৩৫০ ওয়াট বিদ্যুতে চালানো সম্ভব। আর ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ মোট শুল্ককর দিয়ে এই মাইক্রোওয়েভ ওভেন খালাস নেয়া হয়। কিন্তু আমদানিকারকরা এই মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ঘোষণা দিয়ে বেশি কনভেকশন টাইপের ওভেন বা মাইক্রোওয়েভ ওভেন খালাস নিয়ে যাচ্ছে। আর এই মাইক্রোওয়েভ ওভেন পরিচলন করতে ২৪০০ থেকে ৩ হাজারের বেশি ওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। এই ওভেন ৮৫১৬.৬০.০০ এইচএস কোডে মোট ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশে শুল্ককর দিয়ে শুল্কায়ন হওয়ার কথা। সাধারণ মাইক্রোওয়েভ ওভেন ঘোষণায় কনভেকশন টাইপের এই মাইক্রোওয়েভ ওভেন খালাস নিয়ে যাচ্ছে আমদানিকারকরা। মাইক্রোওয়েভ ওভেন ও কনভেকশন টাইপের মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর শুল্ককরের পার্থক্য ৩০ দশমিক ৭২ শতাংশ। অর্থাৎ দেশি-বিদেশি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো মাইক্রোওয়েভ ওভেন আমদানিতে এইচএস কোড বদলে দিয়ে সূক্ষ্ম কারসাজির মাধ্যমে শুল্ককর ফাঁকি দিয়েছে আসছে।

এনবিআর সূত্রমতে, মাইক্রোওয়েভ ওভেন (কনভেনশনাল টাইপ) যথাযথ এইচএস কোড বিষয়ে মতামত চেয়ে কাস্টমস গোয়েন্দা চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে কাস্টমস গোয়েন্দার মহাপরিচালককে একটি চিঠি দেয়া হয়। যাতে মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর বিশ্লেষণ ও যাচাই করা বলা হয়েছে, মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর আমদানির দলিলাদি ও চালান কায়িক পরীক্ষা করে প্রমাণিত হয়েছে যে, কনভেকশন টাইপ মাইক্রোওয়েভ ওভেনসমূহ গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের। অর্থাৎ এক্সপ্লেন্টারি নোটে স্পষ্ট ব্যাখ্যায় আছে বিধায় অ্যাসেসমেন্ট কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস বিচারাদেশ দিয়েছে। তবে আপীলাত ট্রাইব্যুনাল পণ্যটির রাসায়নিক পরীক্ষা করতে বলেছে। কিন্তু পণ্যটি কোনো রাসায়নিক পণ্য নয় বিধায় রাসায়নিক পরীক্ষার সুযোগ নেই। পণ্যটি মূলত টেকনিক্যাল, স্পেসিফিকেশন, ফ্যাংশনালি। এবং ব্যবহার বিবেচনায় নিয়ে বিসিটি, এক্সপ্লেন্টারি নোট এর ব্যাখ্যার আলোকে এইচএস কোড ৮৬১৬.৬০.০০ প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, ৮৫১৬.৫০.০০ কোডে মাইক্রোওয়েভ ওভেন শ্রেণিবিন্যাসযোগ্য হলেও সঙ্গে কনভেনশন বৈশিষ্ট্য থাকলে তার মাধ্যমে সাধারণ মাইক্রোওয়েভ ওভেন থেকে অনেক বেশি মেনু ও ফিডার যুক্ত হয়। মাইক্রোওয়েভসহ যেকোনো ধরনের ওভেন কনভেশন টাইপ হলে তা সাধারণ ওভেন বা মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর তুলনায় কাঙ্খিত বস্তুর চারপাশ থেকে সমানভাবে তাপ দিতে পারে। ফলে সাধারণ ওভেন বা মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর তুলনায় খুব দ্রুত তা রান্না করা যায়। এছাড়া বাটারফ্লাই এর পণ্য চালানে যে দুই ধরনের পণ্য, যার একটি লাইটওয়েভ কনভেকশন ওয়েভ এবং অন্যটি মাইক্রোওয়েভ কনভেকশন ওভেন রয়েছে। তাতে কনভেকশন বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন আনতে হয়েছে। সাধারণ মাইক্রোওয়েভ ওভেন ৯০০ থেকে ১৩৫০ ওয়াট বিদ্যুতে চালানো সম্ভব হলেও কনভেকশন টাইপ ওভেন বা মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর কনভেকশন সংক্রান্ত কাজে ২৪০০-৩০০০ বা ততোধিক ওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। ফলে কোনো কনভেকশন টাইপ ওভেন এর তাপ সরবরাহ মাইক্রোওয়েভ এর মাধ্যমে হলেও তার কার্যক্রম সাধারণ মাইক্রোওয়েভ ওভেন থেকে যথেষ্ট ভিন্নতা রয়েছে। ব্যবহারের ফাংশনালিটিতে রয়েছে যথেষ্ট পার্থক্য। আর এই চালানে রয়েছে লাইটওয়েভ কনভেকশন ওভেন, যা তাপ সরবরাহের প্রযুক্তিতে মাইক্রোওয়েভ কনভেকশন ওভেন থেকে আরও ভিন্ন। লাইটওয়েভ কনভেকশন ওভেন এর তাপ সরবরাহের জন্য বাড়তি রয়েছে হ্যালোজেন লাইট। সুতরাং কনভেকশন ওভেন এর ব্যবহারের ফাংশনালিটি এবং টেকনিক্যালিটি সব মিলিয়ে এই পণ্য চালানের পণ্যসমূহকে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারের জন্য কনভেকশন টাইপ ওভেন হিসেবে বিবেচনা করা যুক্তিসঙ্গত। ফলে ফাস্ট শিডিউল ও এক্সপ্লেন্টারি নোট অনুযায়ী যেহেতু কনভেকশন টাইপ ওভেনসমূহ এইচএস কোড ৮৫১৬.৬০.০-এ শ্রেণিবিন্যাসযোগ্য। ফলে বাটারফ্লাই এর চালাটির পণ্যসমূহের ক্ষেত্রে আমদানিকারক ঘোষিত ৮৫১৬.৫০.০০ কোডে শুল্কায়নের সুযোগ নেই।

অপরদিকে, অসত্য এইচএস কোড এর মাধ্যমে মাইক্রোওয়েভ ওভেন আমদানির বিষয়ে বক্তব্য জানতে বাটারফ্লাই গ্রুপের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও কোম্পানি সেক্রেটারি মো. শাহজাহান মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এই বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। তিনি গ্রুপের সাপ্লাই চেইন অথবা লিগ্যাল হেডের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। তবে নাম্বার না দেয়ায় কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এই বিষয়ে এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাধারণ মাইক্রোওয়েভ ওভেন আর কনভেকশন টাইপ মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর শুল্কায়ন এক হতে পারে না। বৈশিষ্ট্য আর ব্যবহার বিবেচনায় দুইটির আলাদা এইচএস কোড, শুল্ককর করে দেয়া আছে। যেসব প্রতিষ্ঠান সাধারণ মাইক্রোওয়েভ ওভেন ঘোষণায় কনভেকশন টাইপ মাইক্রোওয়েভ ওভেন আমদানি করেছে ও করছে, তাদের চিহূিত করতে কাস্টমসকে কাজ করা উচিত। কাস্টম হাউস সচেতন না হলে শুল্ককর ফাঁকি হবেই। এনবিআর থেকে এই বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া উচিত বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।

*** সূত্র: দৈনিক শেয়ার বিজ (২৮ জানুয়ারি ২০২৪)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button