গণঅভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, ‘গত ৫ আগস্টের আন্দোলন হলো, প্রায় দুই হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, ৫০ হাজার মানুষ অসুস্থ হয়ে কাতরাচ্ছেন। তবু আমরা আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছি। এখনও অনেক লোক আসছেন ফটোসেশন করতে। তারা কেন ছবি তুলছেন, আমি বুঝি না। তারা হয়তো বোঝানোর চেষ্টা করছেন, আমার (তাদের) সঙ্গে উপদেষ্টার সম্পর্ক আছে। আমি মনে করি, এটার কোনো মূল্য নেই।’
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের হোটেল রেডিসনে ‘বাংলাদেশের বিকশিত অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে অভিগমন’ শীর্ষক দিনব্যাপী সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) চট্টগ্রাম শাখা এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের উদ্দেশে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছেন, ‘একটি রেজুলেশন নেন, সকলে একত্রিত হয়ে ৫০ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্স বাড়িয়ে দেন। দেখবেন দেশটি ভালো হয়ে যাবে।’ শেখ বশির উদ্দিন আরও বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় দেশে অপরিকল্পিত বিনিয়োগ হয়েছে। এ জন্য শিল্প খাতকে বাঁচাতে কৃষিতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আমাদের শিল্প খাত উচ্চ শুল্ককরের দ্বারা পরিচালিত। শিল্প খাতের লোকজন ট্যাক্স (কর) পরিশোধ করেন না কিন্তু ভ্যাট দেন। আমাদের মতো দরিদ্র অর্থনীতির দেশে ভ্যাট ও ট্যাক্সের মধ্যে একটা সংযোগ দরকার।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে রাজনীতিবিদ, আমলা, বিচারক, বিভিন্ন বাহিনীসহ সবাই মিলে একটি দুর্নীতির জোট তৈরি করেছিল। শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি যে পরিমাণ হত্যা মামলার আসামিকে ক্ষমা করেছেন তা ইতিহাসে নেই।’
তিনি বলেন, ‘অবৈধ আর্থিক বহিঃপ্রবাহ, অলিগার্কের উত্থান, গুটিকয়েক লোকের হাতে সম্পদের কেন্দ্রীকরণ, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস এবং ব্যাপক দুর্নীতি দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করেছে। এ কারণে ছাত্র-নাগরিক বিদ্রোহের মাধ্যমে গঠিত নতুন সরকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জুলাই-আগষ্টের শহীদদের মর্যাদা দিতে দেশের সব শিল্পখাতে সেক্টর ধরে সংস্কার করা হবে।’
শ্বেতপত্রে এসেছে দেশ থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা চুরি হয়েছে উল্লেখ করে শেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘এত এত টাকা চুরির জন্য কি ১০০ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ৩০০ প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) দায়ী নন? এমন প্রশ্ন তোলার এখনই সময়। এ দেশটা আমাদের সন্তানদের জন্য গড়তে হবে। কিন্তু দেশের মধ্যে একটা সময় নানা কিছু ঘটল। ওই যে বয়ানটা ছিল, সেটা আমরা বিশ্বাস করেছিলাম। আমরা অনেকেই নিশ্চুপও ছিলাম। কিন্তু কিছু বাচ্চা ছেলে এর প্রতিবাদ করল। পরে জনতাও যোগ দিলেন, পরিবর্তন এলো। এখন আমরা যদি আবার গতানুগতিকভাবে একই জিনিসের চর্চা করি, দক্ষতার মূল্যায়ন না করি, তবে এটি গ্রহণযোগ্য হবে না।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘দুই হাজার কোটি সম্পদ মূল্যের কারখানাকে সরকার কি করে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিল? দেশে প্রাইভেট সেক্টরে প্রায় ২৫০ রকমের দুর্নীতি হয়। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে রাজনৈতিক সংস্কারের চেয়ে অর্থনৈতিক সংস্কারই প্রধান চ্যালেঞ্জ।’
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘১৯৭২ সালে ট্যাক্সের ৯০ শতাংশ আসতো ইন্ডিরেক্ট ট্যাক্স থেকে আর বাকি ১০ শতাংশ আসতো ডিরেক্ট ট্যাক্স থেকে। এত বছরেও কিন্তু পরিবর্তন হয়নি। এখনো দুই তৃতীয়াংশ আসে ইন্ডিরেক্ট ট্যাক্স থেকে। অর্থাৎ গরীবের ট্যাক্স আদায় করা হয় অথচ তারা জানেও না। আর ডিরেক্ট ট্যাক্স প্রদানকারীরা নীতি নির্ধারকদের কাছাকাছি থেকে, তা আরো কমাতে পারেন। এটি আমাদের পিছিয়ে পড়ার কারণ।’