৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন আজ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি, বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দীর্ঘ বিরতির পর ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়ে শিক্ষার্থীরা প্রকাশ করছেন উচ্ছ্বাস।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মোসাদ্দেকুর মমিন বলেন, বহু বছর পর জাকসুতে নির্বাচন হচ্ছে। শুরুতে কিছুটা কম থাকলেও ভোট নিয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এখন বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিবেচনা অনুযায়ী ভোট দেবেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি, তখন চারটি বিভাগে ২১ জন শিক্ষক ও ১৫০ জন শিক্ষার্থী ছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাকসু, আর সেই বছরই অনুষ্ঠিত হয় প্রথম নির্বাচন। তখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগের প্রভাব বেশি ছিল। প্রথম নির্বাচনে গোলাম মোর্শেদ সহসভাপতি (ভিপি) এবং শাহ বোরহানউদ্দিন রোকন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন। দু’জন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, গোলাম মোর্শেদ সরাসরি রাজনীতিতে না থাকলেও জাসদ ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

১৯৭২, ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে পরপর তিন বছর জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে আর ধারাবাহিকতা থাকেনি। সব মিলিয়ে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে নির্বাচন হয়েছে ৯ বার। তারপর আর হয়নি। ১৯৭৩ সালের জাকসু নির্বাচনটি ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সেই নির্বাচনে ঢাকা থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে গিয়ে ব্যালট পেপার নিয়ে নেন। ভোটের হার হয়ে যায় ৯০ শতাংশের বেশি।

১৯৭৩ সালে জাকসুর সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হককে আল-বেরুনী হলে তার নিজ কক্ষে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি তখন ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। এর আগে, ১৯৭২ সালে জাকসুর প্রথম জিএস শাহ বোরহানউদ্দিনও নারায়ণগঞ্জে খুন হন। দু’জনই স্থানীয় রাজনৈতিক কোন্দলের শিকার হন। ১৯৭৩ সালের জাকসু নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষে জিএস প্রার্থী নুরুল হক জানান, মোজাম্মেলকে হত্যা করার পর খুনিরা চলে যাওয়ার সময় সর্বহারা পার্টির নামের স্লোগান দিয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন। এরপর ১৯৮০, ১৯৮১, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সালের নির্বাচনে ছাত্রদল এককভাবে জয়ী হয়ে জাকসু ও হল সংসদের ১০৭টি পদের মধ্যে ১০৫টি পদ দখল করে।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত মঙ্গলবার। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮টির মধ্যে ২৩টি পদে জয়ী হয়েছে ছাত্রশিবির। আজ জাকসুর ভোটগ্রহণ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোট অনুষ্ঠিত হবে ২৫ সেপ্টেম্বর, আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ অক্টোবর।

ভোটার ১১৭৪৩ জন

জাকসুতে মোট ভোটার সংখ্যা ১১,৭৪৩, যার মধ্যে ছাত্রী ৫,৭২৮ এবং ছাত্র ৬,০১৫ জন। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। একই সঙ্গে ২১টি হল সংসদের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় সংসদের পদে প্রার্থী সংখ্যা: সহসভাপতি (ভিপি) ৯, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ৮, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) ৬ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) ১০। প্রতিটি হলে পদসংখ্যা ১৫। ২১টি হল সংসদে মোট ৩১৫টি পদে ৪৭৭ জন প্রার্থী লড়ছেন। ছাত্রীদের ১০টি আবাসিক হলে ১৫০টি পদে ৫৯টিতে কোনো প্রার্থী নেই। ৬৭টি পদে একজন করে প্রার্থী রয়েছে, ফলে ভোট হবে মাত্র ২৪টি পদে।

সুষ্ঠু ভোটের আশা

জাকসুতে সম্প্রীতির ঐক্য চ্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থিতা বাতিল নিয়ে বিক্ষোভ ও উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। নিয়মিত ছাত্রত্ব না থাকায় তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন। তিনি আদালতে গিয়েছিলেন। হাইকোর্ট প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। তবে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত এ আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। ফলে তাঁর আর নির্বাচন করা হচ্ছে না। নির্বাচন নিয়ে এর বাইরে এখন পর্যন্ত প্রার্থীদের বড় কোনো অভিযোগ নেই।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!