২৮৫ কোটি টাকায় চট্টগ্রামে বার্ন ইউনিট, মার্চে নির্মাণ শুরু

চট্টগ্রামে ২৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ শয্যার বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট নির্মাণের কাজ আগামী মার্চে শুরু হবে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সংলগ্ন গোয়াছিবাগান এলাকায় এটি নির্মিত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম চীন থেকে চলতি মাসের মাঝামাঝিতে দেশে পৌঁছাবে এবং প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য থাকার ঘর প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রকল্পটি ‘চায়না এইড প্রজেক্ট’ হিসেবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন।

তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘১৫০ শয্যার বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নির্মাণকাজ আগামী মার্চ মাসের শুরুতে শুরু হবে। ২০২৬ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার সময়সীমা নির্ধারিত আছে। চলতি মাসে ভৌত প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে সব নির্মাণ সরঞ্জাম সরবরাহ করছে চীন।’

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বার্ন ইউনিট নির্মাণে ব্যয় হবে ২৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকার অনুদান হিসেবে দেবে ১৮০ কোটি। বাকি ১০৫ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। গত বছরের ৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে ২০২৩ সালের মার্চে চীন সরকারের সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি হয়। যেহেতু চীন সরকার প্রকল্পে ৬৩ শতাংশ অর্থ অনুদান দিচ্ছে, তাই তাদের নির্বাচিত ঠিকাদারই অবকাঠামো নির্মাণ করবে। অবকাঠামো নির্মাণের যন্ত্রপাতি, প্রকৌশলী ও উপকরণ সরবরাহ করবে দেশটি। প্রকল্প শেষে এক বছর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে তারা। অন্যদিকে পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ সংযোগসহ বিভিন্ন পরিষেবা দেবে বাংলাদেশ।

বার্ন ইউনিট পরিচালনার জন্য এক হাজার ৬৫ জন জনবল প্রয়োজন হবে। গত বছরের মে মাসে জনবলের প্রস্তাবনা পাঠানো হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। এতে এক হাজার ৬৫ পদ সৃজনের প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ২০১২ সালে অনানুষ্ঠানিকভাবে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২৬ শয্যা নিয়ে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা শুরু করে। যদিও এটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট হিসেবে পরিচিত, তবে হাসপাতালের অর্গানোগ্রামে এর কোনো অস্তিত্ব নেই এবং অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও নেই।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ জানান, ২৬ শয্যার ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ, এমনকি মেঝেতেও রোগী ভর্তি রাখা হয়। পোড়া রোগীদের জন্য আইসিইউ ও এইচডিইউ প্রয়োজন, তবে চমেক হাসপাতালে এসব সুবিধা নেই, ফলে রোগীদের ঢাকা পাঠাতে হয়। এছাড়া, অপারেশন থিয়েটারও নেই।

২০১৬ সালে চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করে চীন সরকার। এরপর চীনা প্রতিনিধি দল ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চমেক হাসপাতাল এলাকায় সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেন। এর পরের কয়েক বছর ওই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা কয়েক দফা বৈঠক করলেও নির্মাণের পরিকল্পনা আটকে ছিল স্থান নির্বাচনে। সর্বশেষ ২০২২ সালে চীন সরকার চমেক হাসপাতাল সংলগ্ন গোঁয়াছিবাগান এলাকায় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট তৈরির স্থান নির্বাচন করে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের জানায়।

৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন আয়োজন করে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ক্যাব নেতারা বলেন, চট্টগ্রামে বিভিন্ন ভারী শিল্প থাকলেও ১৫ বছরেও বার্ন হাসপাতাল নির্মিত হয়নি। ফলে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে আহতদের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ কম। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে মাত্র ২৬ শয্যায় প্রতিদিন ৯০০-১,০০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন, যা অত্যন্ত অপ্রতুল। তাই দ্রুত বার্ন ইউনিট নির্মাণের দাবি জানানো হয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!