হিমাগার ভাড়া ১ টাকা বাড়িয়ে ৮ টাকা, ক্ষুব্ধ চাষিরা

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন হিমাগারে আলু রাখার ভাড়া প্রতি কেজিতে ১ টাকা বাড়িয়ে ৮ টাকা করেছে। আগে এক বস্তায় ৮০ কেজি আলু রাখা গেলেও এবার ৫০ কেজির বেশি রাখা যাবে না, এবং খরচ কেজি অনুযায়ী গুনতে হবে। চাষিরা এ ভাড়া বাড়ানোকে অযৌক্তিক দাবি করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

বিগত কয়েক বছর ধরে দেশে আলুর দামে অস্থিরতা রয়েছে। হিমাগারের ভাড়া বাড়লে এর প্রভাব খুচরা পর্যায়ে আলুর দামেও পড়বে, ফলে ভোক্তাদের বেশি দামে আলু কিনতে হবে।

ব্যবসায়ী ও চাষিরা বলছেন, হিসাব করলে তাদের আলু রাখার খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। হিমাগার মালিকদের কোনো খরচ না বাড়লেও তারা এবারের উৎপাদন দেখে ভাড়া বাড়িয়েছেন সিন্ডিকেট করে। ভাড়া না কমালে তাদের কম দামে আলু এখনই বাজারে বিক্রি করতে হবে, যাতে তাদের পড়তে হবে লোকসানে।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে আলু রাখার ভাড়া কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ আট টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছর ছিল সাত টাকা। এছাড়া, এবার ৫০ কেজির বেশি বস্তা রাখার সুযোগ নেই।

এ কারণেই কৃষকদের মনে হচ্ছে ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে। অর্থাৎ আগে কৃষকরা সাত টাকা কেজিদরে প্রতি বস্তা ৩৫০ টাকা ভাড়া দিতেন। কিন্তু প্রতি বস্তায় আলু রাখা হতো ৮০ কেজি পর্যন্ত। এই বাড়তি আলুর জন্য কোনো অতিরিক্ত ভাড়া নেয়নি হিমাগারগুলো। এখন বস্তায় যত কেজি আলু থাকবে তার জন্য আট টাকা দরে ভাড়া পরিশোধ করতে হবে।

জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নূরুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর পর এবছর আলুর উৎপাদন ভালো হলেও বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ সমিতি কেজিপ্রতি আলুর ভাড়া আট টাকা নির্ধারণ করেছে, যা আগে ছিল চার টাকা। তিনি এ ভাড়া বাড়ানোকে কৃষকদের শোষণ বলে অভিহিত করেছেন এবং এটা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, আগে কৃষকরা বস্তাপ্রতি ৩৫০ টাকা দিয়ে আলু রাখতেন, তবে কেজির হিসাব করতেন না। এখন ৫০ কেজির বেশি বস্তা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার ফলে কৃষকদের ভাড়া দ্বিগুণ হতে পারে।

রাজশাহীর আলুচাষি ও জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নূরুল ইসলাম বলেন, এবছর আলুর উৎপাদন ভালো ও দাম স্বস্তিদায়ক হলেও কোল্ড স্টোরেজ সমিতি প্রতি কেজি আলুর ভাড়া চার টাকা থেকে বাড়িয়ে আট টাকা করেছে। তিনি বলেন, মালিকরা কৃষকদের শোষণ করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা মেনে নেয়া যায় না।

কৃষকদের মতে, গত বছর হিমাগারে আলু রাখার জন্য পেইড বুকিং ছিল ২১০-২২০ টাকা, এবং লুজ বুকিংয়ের ভাড়া ছিল ২৮৫ টাকা পর্যন্ত। সাধারণত ৫০ কেজি পর্যন্ত আলু রাখার নিয়ম থাকলেও কৃষকরা বেশি আলু রাখার সুযোগ পেতেন। পূর্বে প্রতি কেজি আলুর ভাড়া গড়ে পাঁচ টাকা ছিল, যা এখন বাড়িয়ে আট টাকা দাবি করা হচ্ছে।

ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে গত রোববার রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন কৃষকরা। এর আগে তারা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে মোহনপুর উপজেলা সদর এলাকায় আলু ফেলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। অনেকে শুয়ে পড়েন মহাসড়কে।

কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়নের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ২০২১ সালে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণে খরচ ছিল পাঁচ টাকা, পরের বছর সাড়ে পাঁচ টাকা, পরবর্তী বছর ছয় টাকা এবং গত বছর সাত টাকা ছিল। খরচ বাড়ার কারণে প্রতি বছর কেজিপ্রতি ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে এবছর মজুতদাররা এক হয়ে পরিকল্পিত আন্দোলনে নেমেছেন।

বিদ্যুৎ বিলসহ কোনো খরচ না বাড়লেও এ ভাড়া বৃদ্ধি অযৌক্তিক বলে দাবি করেন কৃষকরা। তবে এ বিষয়ে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘২০২১ সালে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণের খরচ ছিল পাঁচ টাকা, পরের বছর সাড়ে পাঁচ টাকা, তারপর ছয় টাকা এবং গত বছর সাত টাকা নির্ধারিত ছিল। খরচ বাড়ার কারণে প্রতি বছর কেজিপ্রতি ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এবছর মজুতদাররা এক হয়ে পরিকল্পিত আন্দোলনে নেমেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘৫০ কেজির বেশি বড় বস্তা রাখলে শ্রম আইনে মামলা হয়। কোল্ড স্টোরের ক্যাপাসিটিও কমে যায়। সে কারণে সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের ব্যাংকঋণের সুদের হার চড়া। হিমাগার শিল্প পুরোপুরিই কৃষিভিত্তিক শিল্প হলেও ১২ টাকা হারে বাণিজ্যিক বিল দিতে হচ্ছে। রেয়াতি সুবিধা পাচ্ছি না। এসব কারণেই এ সিদ্ধান্ত।’

মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, কৃষকরা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা জানেন না, তবে বর্তমানে চলমান আন্দোলনটি তাদের মতে, কয়েক বছর ধরে আলু মজুত করে মুনাফা করা ব্যক্তিদের চক্রান্ত, যারা কৃষকদের আন্দোলনে মাঠে নামিয়েছেন।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার ৪ লক্ষ ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ১৩ লাখ ৬৭ হাজার টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল। এখন পর্যন্ত ১২ শতাংশ আলু তোলা হয়েছে এবং ফলন ভালো হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

দেশে বর্তমানে সাড়ে তিনশ হিমাগার চালু রয়েছে, যার মোট ধারণক্ষমতা প্রায় ৩০ লাখ টন আলু, যা দেশের মোট আলু উৎপাদনের এক চতুর্থাংশ। সিজনে এসব হিমাগার প্রায় পুরোপুরি আলু দিয়ে পূর্ণ থাকে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!