মুড়ি বিক্রেতা থেকে ৭০০ কোটি টাকার মালিক

সোনা চোরাচালানের অভিযোগে অভিযুক্ত আবু আহমেদ ওরফে সোনা আবু বিদেশ পালানোর চেষ্টা করেও রক্ষা পাননি। গতকাল রোববার তিনি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পুলিশের হাতে আটক হন। পরে আজ সোমবার চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার পুলিশ তাঁকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসে।

ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক আহমেদ বলেন, ডবলমুরিং থানার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনের একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আবু আহমেদ। বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছেন খবর পেয়ে বিমানবন্দরে তাঁকে আটকানো হয়। পরে তাঁকে ডবলমুরিং থানার মামলায় আজ বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আবু আহমেদ ওরফে সোনা আবু ১৯৯১ সালে শ্রমিক ভিসায় দুবাই গেলেও পরে সোনা চোরাচালান ও হুন্ডি কারবারে জড়িয়ে পড়েন। সিআইডির তদন্তে তাঁর ৭২১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ মেলে, যার মধ্যে রয়েছে ভবন, প্লট, বিলাসবহুল বাড়ি ও দুবাইয়ে তিনটি দোকান। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ২১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন করেছেন। কোতোয়ালি থানার মামলায় সিআইডি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, যেখানে তাঁর অর্থ পাচার ও চোরাচালানের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

২০১৩ সালের ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের হিলভিউ আবাসিক এলাকার বাসার সামনে থেকে হঠাৎ অপহৃত হন আবু। তখনই প্রথম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে উঠে আসে আবু নামের রহস্যময় এক বিত্তশালীর নাম। প্রায় ১০ বছর আগের সেই অপহরণের ঘটনায় আবু এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান অজ্ঞাত একদল দুর্বৃত্তের হাত থেকে। পরে ঘটনার পাঁচ মাস পর ২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়েরের পর অপহরণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তবে সোনা চোরাচালানের হোতা হিসেবে আবুর নাম প্রথম আলোচনায় আসে ২০১৪ সালে। ওই বছর ঢাকায় চোরাচালানের সোনা উদ্ধারের পরপর তিনটি ঘটনায় দৃশ্যপটে চলে আসেন আবু। এর মধ্যে ১০৫ কেজি ওজনের সোনার প্রথম চালানটি ধরা পড়ে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। পরে একই বিমানবন্দরে ৫২৫টি সোনার বারসহ ধরা পড়ে বিপুল পরিমাণ সৌদি মুদ্রার অপর একটি চালান। ৬১ কেজি সোনাসহ আরেকটি চালান ধরা পড়ে ঢাকার নয়াপল্টন থেকে। এসব ঘটনায় ঢাকা বিমানবন্দর থানা ও পল্টন থানায় আবুর বিরুদ্ধে মামলা হয়।

২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের বাহার মার্কেট থেকে তৎকালীন নগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে তিনটি সিন্দুকভর্তি সোনা ও টাকা উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে একটি সিন্দুক থেকে ২৫০টি সোনার বার এবং আরেকটি থেকে ৬০ লাখ টাকা পাওয়া যায়। এ ঘটনায় আবু আহমেদ ও তাঁর ম্যানেজার এনামুল হককে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। গ্রেপ্তারের পাঁচ মাস পর, ২০১৬ সালের আগস্টে, আবু আহমেদ কারাগার থেকে মুক্তি পান।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!