৬৫টি পণ্য ও সেবায় ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) বাড়ানো হলেও সেটি সামগ্রিক মূল্যষ্ফীতিকে তেমন প্রভাবিত করবে না বলে মনে করছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এতে পণ্যের দামও বাড়বে না বা সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন তিনি। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা এমন মন্তব্য করেন। বুধবার (১ জানুয়ারি) মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনের সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এই সংশোধনীর ফলে ৪৩টি পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন করে ভ্যাট আরোপ হচ্ছে।
সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে মানুষের জীবনযাপনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না— জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এতে জিনিসপত্রের দামের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না। অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের ডিউটি (শুল্ক) জিরো করে দিয়েছি। আপনি ছাড়টা দেখবেন। মূল্যস্ফীতির মূল ওয়েটের ইন্ডিকেটরগুলো হলো চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। আমরা যে সকল জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছি – এগুলো আমাদের মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই কম গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘তিন তারকার ওপর যে রেস্তোরাঁগুলো— সেগুলোর ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। ভাতের রেস্টুরেন্ট বা অন্য রেস্টুরেন্ট থেকে তো যাবে না। থ্রেসহোল্ড আছে, যাদের টার্নওভার ৫০ লাখ টাকার ওপর, তাদের ক্ষেত্রে এটা আসবে। অন্য কোনো ব্যবসা তো এটার মধ্যে আসছে না।’
বিমানভাড়ায় ভ্যাট বৃদ্ধি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘বিমানের ভাড়ার ক্ষেত্রে আগে ৫০০ টাকা ভ্যাট ছিল। সেটি ২০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিমানে এখন লোকজন মোটামুটি চড়ে। তারা ২০০ টাকা বেশি দিতে পারবে না বলে মনে হয় না। এগুলো মার্জিনাল।’ সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নেপাল, ভুটান ধরেন বা বিশ্বের অন্য দেশ, এত লো (নিম্ন) ট্যাক্স কোথাও নেই। সব জিনিসের ওপরে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ক্ষেত্রে আমরা সবসময় বলেছি, সেখানে আমরা (কর) প্রায় জিরো করে নিয়ে আসবো।’ উপদেষ্টা বলেন, ‘চূড়ান্তভাবে ভোক্তা ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিচ্ছে না। ইনপুটের জন্য সে রিবেট পাবে। জিজ্ঞেস করেন, সেটা ওরা জানে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ মাস পর এই সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হচ্ছে- এ বিষয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটা করার কারণটা হলো যে ছাড় দিয়েছি, সেটা হিসাব করে… কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। আর আমাদের রাজস্ব গ্যাপ এত বেশি, আমি তো আর বড় করে ডেফিসিট ফাইন্যান্সিং করে এগোতে পারব না।’ আইএমএফের পরামর্শে এটি করা হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘না, সবদিক চিন্তা-ভাবনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মনে হয় না কষ্ট হবে। জনগণের স্বস্তি না পাওয়ার তো কোনো কথা না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইটি খাতে আমরা বরাদ্দ কমাব না, বরং আমরা বৃদ্ধি করব। কিন্তু আমাদের রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। ধার করে বেশিদিন চলা যায় না।’ ট্যাক্স এবং কাস্টমস পর্যালোচনা এখনো বাকি আছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা। ওসব ক্ষেত্রেও কর বাড়বে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা এখন বলবো না।’
নতুন বছরে অর্থনীতিকে কোন জায়গায় নিয়ে যেতে চান- সাংবাদিকের এমন এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘অর্থনীতি মোটামুটি স্ট্রং তো হয়েছে, এখন দরকার স্থিতিশীলতা। আমি বলবো না, সবক্ষেত্রে এটা হয়েছে। ব্যাংকখাতে কিছু শৃঙ্খলা ফিরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করছে, কিছু কিছু দুর্বল ব্যাংককে সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।’
** ৬৫ পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়ছে, দাম বাড়তে পারে
** বিমান টিকেটে আবগারি শুল্ক বাড়ছে, বাড়বে দাম
** সিগারেটের প্যাকেট প্রতি দাম বাড়ছে ১০ টাকা, শুল্ক ১.৫%