সিগারেটের প্যাকেটে সরকার নির্ধারিত মূল্য বা লিখিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে সিগারেট বিক্রি করায় দেশের রিটেইল চেইনশপ ‘মীনা বাজার’ জরিমানা করা হয়েছে। রোববার (১৯ জানুয়ারি) জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রিনা বেগম শুনানি শেষে এই জরিমানা করেন।
সূত্রমতে, ২০২৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার। মো. হামিদুল ইসলাম নামের একজন ক্রেতা সুপারশপ মীনা বাজার বনশ্রী আউটলেট থেকে ২০ শলাকার এক প্যাকেট ‘বেনসন অ্যান্ড হেজেজ, ষ্পেশাল ফিল্ডার’ ক্রয় করেন। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটি) এর এই সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা ‘সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি)’ ৩১০ টাকা। কিন্তু এই ক্রেতার কাছ থেকে নেয়া হয় ৩২৫ টাকা। অর্থাৎ এমআরপি মূল্যের চেয়ে এক প্যাকেটে ১৫ টাকা বেশি নেয়া হয়। একই কায়দায় এই আউটলেটে বিএটির সব ব্র্যান্ডের সিগারেটে এমআরপি মূল্যের চেয়ে বেশি নেয়া হচ্ছে। অথচ সরকার এমআরপি মূল্যের বাইরে বাড়তি মূল্যের উপর কোন রাজস্ব পায় না। কোম্পানি, ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটর ও মীনা বাজারের মতো খুচরা বিক্রেতাদের পকেটে রাজস্বের এই বাড়তি টাকা চলে যাচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, হামিদুল ইসলাম নামের দেশের এই সচেতন ক্রেতা ‘এমআরপি’ মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করায় মীনা বাজারের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ৩ মার্চ প্রমাণসহ জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে প্রতিকারের জন্য ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬(১) অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের করেন। অধিদপ্তর প্রমাণাদিসহ রোববার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রিনা বেগম উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনেন এবং নথি-পত্র যাচাই করেন। এতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মীনা বাজারকে দুই হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন। শুনানিতে অভিযোগকারী এবং মিনা বাজারের একজন প্রতিনিধি ও তাদের পক্ষে একজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) সূত্রমতে, সম্প্রতি ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘স্বপ্ন’র একটি আউটলেটে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে বিএটির উৎপাদিত সিগারেট প্যাকেটে মুদ্রিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে অনেকটা বেশি দামে বিক্রি হতে দেখেন। স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ স্বীকার করার পর তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে ভোক্তা অধিদপ্তর এক শুনানিতে উপর্যুক্ত জরিমানা স্বপ্ন ও বিএটিকে ২৫ হাজার টাকা করে পরিশোধের আদেশ দেয়। অপর একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবাদুস সালাম (মেট্রো-৪) স্বপ্ন সুপার শপকে দশ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
বাংলাদেশে সবধরনের পণ্য সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) এ বিক্রি হলেও তামাকজাত দ্রব্য বিশেষত সিগারেট এমআরপির চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে বলে বহু বছর ধরে তামাক কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে; যা ভোক্তা অধিকার সংক্ষেণ আইন, ২০০৯ এর পরিপন্থী। এভাবে অবৈধভাবে ব্যবসার মাধ্যমে তামাক কোম্পানিগুলো প্রতিবছর ৫ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর গবেষণায় দেখা গেছে, কোম্পানিগুলো সিগারেটের খুচরা বিক্রিতে প্যাকেটে মুদ্রিত এমআরপির চেয়ে ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দাম নেয়; যা প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন।
** বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করতে বিএটি-স্বপ্নর চুক্তি!
** ‘খুচরা’ আর ‘সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য’র ফাঁকে রাজস্ব ফাঁকি
** নিম্নস্তরে দাম-শুল্ক বাড়ানো, ষড়যন্ত্র দেখছে দেশীয় কোম্পানি
** খুচরা বিক্রেতার ‘লাভ’ বিএটির পকেটে
** বিএটির পকেটে রাজস্বের ৫০০ কোটি টাকা!
** বিএটি চার অর্থবছরে ফাঁকি দিয়েছে ৩৭৯ কোটি টাকা