## সুতা, মেশিনারিজ ও ববিন আমদানির ঘোষণা দিয়ে মদ আমদানি করা হয়েছে
## ঈশ্বরদী ও কুমিল্লা ইপিজেডের দুইটি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে
## আইপি জালিয়াতি করা হয়েছে, চট্টগ্রাম খালাস হওয়ার পর নারায়নগঞ্জে আটক
নিজস্ব প্রতিবেদক: সিএন্ডএফ এজেন্ট ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের যোগসাজসে আইপি জালিয়াতি করে দুই কনটেইনার মদ খালাস নিয়েছেন আমদানিকারক। এসব মদ খালাসে আমদানিকারক কুমিল্লা ও ঈশ্বরদী ইপিজেডের দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করেছেন। যদিও চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটের আওতাভুক্ত ওই দুই প্রতিষ্ঠান পূর্বেই নিজেদের চালান খালাস নিয়েছে। তবে ভুয়া আইপি ব্যবহার করে চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে খালাস নেওয়া দুই কনটেইনার মদের চালান নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকা থেকে জব্দ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ও কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা ইপিজেডের হেশি টাইগার কোম্পানি লিমিটেডের নামে ২০ জুলাই টেক্সটার্ড ইয়ান ঘোষণায় পণ্য খালাসের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অফ এন্ট্রি দাখিল করে আমদানিকারক। চীন থেকে আসা ওই চালান খালাস নিতে আমদানিকারক বিল অফ এন্ট্রিতে (৫৪০২৩৩০০) এইসএস কোড উল্লেখ করে ৬৫৫ প্যাকেটের ১৯ হাজার ৬৫০ কেজি পণ্য থাকার ঘোষণা দেন। যার আমদানি মূল্য দেখানো হয়েছে ১৫ হাজার ৭২০ মার্কিন ডলার; যা বাংলাদেশি টাকার ১৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৫ টাকা এবং এই চালান খালাসের জন্য আমদানিকারক ২০ জুলাই আট লাখ ৬৫ হাজার ১৬৭ টাকার রাজস্ব পরিশোধ করে। আর এই চালান খালাসে ভুয়া আইপি নাম্বার ব্যবহারেও চালাকি করে আমদানিকারক। আমদানিকারক আইপি নাম্বার উল্লেখ করেন আইই-২৭০৫২২০০৩০। প্রকৃত পক্ষে কুমিল্লা ইপিজেডের হেশি টাইগার কোম্পানি লিমিটেডের যেই চালানটির আইপি জালিয়াতি করা হয়েছে ওই চালানটি গত ২৭ এপ্রিল খালাস নিয়ে মূল আমদানিকারক। এবং এই ওই চালানটি মূল এইপি নাম্বার আইই-২৭০৪২২০০৩০। এছাড়া চালানটি চীন থেকে আমদানিও হয়নি, ওই চালনটি এসেছে তাইওয়ানের তাওসিয়াং থেকে। ওই চালানের মূল এইসএস কোড ৩৯০২১০০০ এবং তাতে ৬৪০ প্যাকেটে ১৬ হাজার কেজি পণ্য ছিল। যার প্রকৃত আমদানি মূল্য ২৯ হাজার ৮৩২ মার্কিন ডলার।
অপরদিকে, এই প্রতারক আমদানিকারক অন্য এক বিল অফ এন্ট্রিতে ঈশ্বরদী ইপিজেডের বিএইচকে টেক্সটাইল লিমিটেডের নাম ব্যবহার করে। সেই চালানে চীন থেকে রোভিং মেশিন ববিন আমদানির ঘোষণা দেন। ২০০১৫৬ সি-নাম্বার উল্লেখিত এই চালানে ৬৭৫ প্যাকেটে ২০ হাজার ৭৫০ কেজি পণ্য আসার কথা। যার এইসএস কোড উল্লেখ করা হয়েছে ৮৪৪৫১৯০০০ এবং আমদানি মূল দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার; যা বাংলা টাকার দেখানো হয়েছে ১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫৭৩ টাকা। যার বিপরীতে গত ২০ জুলাই আমদানিকারক শুল্ক পরিশোধ করেছে এক লাখ ৬১ হাজার ৯৪৫ টাকা। প্রকৃক্ষে যেই ভুয়া আইপি ব্যবহার করে মদের চালান খালাস নেওয়া হয়েছে তার মূল চালান ঈশ্বরদী ইপিজেডের বিএইচকে টেক্সটাইল লিমিটেডের গত ১২ মে পণ্য খালাস নিয়েছে। ওই চালানের প্রকৃত মূল্য ছিল ২৫ হাজার মার্কিন ডলার।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, এই চালনটি খালসে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সিএন্ডএফের যোগসাজস রয়েছে। কোন কনটেইনার বিল অফ এন্ট্রি, আইপি নাম্বার, স্ক্যানিং ইত্যাদি কর্যক্রম সম্পন্ন না করে বন্দর থেকে কনটেইনার বের হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু এই দুই কনটেইনারে ভুয়া আইপি নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে। যার চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা নিরিক্ষা করেনি। এবং এই চালান খালাসে সর্বশেষ কাজ করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের পক্ষে রাজস্ব কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন এবং সিএন্ডএফ এজেন্ট জাফর আহম্মেদ। অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়। এই চালান ২০ জুলাই রাত ৮টা ৩৪ মিনিটে রাজস্ব কর্মকর্তা নাছির উদ্দিনের আইডি থেকে শুল্কায়ন সম্পন্ন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, কুমিল্লা ইপিজেডের হেশি টাইগার কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক সোয়েব আজিজ জানিয়েছেন, এই চলানের বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারবো না। আমার পূর্বে চালন খালাস নিয়েছি। আর জাফর আহমেদ নামের কোন সিএন্ডএফের সাথে আমাদের কোন কাজও হয়নি। আমরা মেঘ দূত নামের চট্টগ্রামের একটি সিএন্ডএফের মাধ্যমে নিয়মিত পণ্য খালাস করি।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মদ ভর্তি দুইটি কনটেইনার খালাস হবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কমিশনার এবং জয়েন্ট কমিশনারের (জেটি) তত্ত্বাবধানে কাস্টম হাউস চট্টগ্রামের এআইআর টিম, আনস্টাফিং, স্ক্যানিং ও গেট ডিভিশনের সার্বিক প্রচেষ্টায় এবং র্যাব ও কাস্টমস গোয়েন্দার তত্ত্বাবধানে সারারাত কার্যক্রম শেষে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বের হয়ে যাওয়া চালান দুটি সম্বলিত গাড়ি সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জে আটক করা হয়। আইপি জালিয়াতি করে কুমিল্লা ও ঈশ্বরদী ইপিজেডের দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম অপব্যবহার করে মেশিনারি ও ববিন ঘোষণায় চালান দুটি খালাস করা হয়। দুইটি চালানের ইনভেন্ট্রি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উচ্চ শুল্কের পণ্য হওয়ায় বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি হয়েছে এ দুটি চালানে। সিঅ্যান্ডএফ হিসেবে ছিল চট্টগ্রামের ডবলমুরিংয়ের ৬৯৯ কেবি দোভাষ লেনের জাফর আহমেদ। দুইটি চালানে তরল মদ পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র উপকমিশনার নুর উদ্দিন মিলন জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাস্টম হাউস চট্টগ্রামের এআইআর টিম, আনস্টাফিং, স্ক্যানিং ও গেট ডিভিশনের সার্বিক প্রচেষ্টায় এবং র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় চালানটি আটক করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গাড়ির দুই চালকে আটক করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে যে শাখা থেকে পণ্য খালাস হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট চালন খালাসে ব্যক্তিদের খোঁ খবর নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে একটি কনটেইনারে প্রাপ্ত বিভিন্ন ব্রান্ডের মদের পরিমাণ ১৬ হাজার ১১৭.৫ লিটার। যার শুল্কায়নযোগ্য মূল্য প্রায় এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং জড়িত রাজস্ব প্রায় আট কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
কাস্টমস গোয়েন্দার উপপরিচালক শেখ মো. মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, কাস্টমস গোয়েন্দার মহাপরিচালক তথ্য পায় যে, জাফর আহমেদ নামক সিএন্ডএফ এজেন্টের ঘোষিত দুইটি চালানে অবৈধ পণ্য রয়েছে। হাউসের এনসিটি ইয়ার্ডের গেইটের ভেরিফিকেশন নাম্বার (১৬৭ ও ১৬৮) অনুযায়ী অবৈধ পণ্য নিশ্চিত হয়। পরে কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ইয়ার্ডের গেইটে গিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হয়। কর্মকর্তারা দেখতে পান, সন্ধ্যা ৬টা ২৪ ও ৬টা ২৫ মিনিটে গেইট দিয়ে দুইটি চালান খালাস হয়ে গেছে। এ ছাড়া আমদানিকারক দুইটি প্রতিষ্ঠানের আইপি যাচাই করে তা জাল পাওয়া যায়। পরে বন্দরের নিরাপত্তা শাখা হতে খালাস নেয়া দুইটি কার্ভাড ভ্যানের চালককে ফোন দেয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি। পরে র্যাবের সহায়তায় কাস্টমস গোয়েন্দার তত্ত্বাবধানে সোনারগাঁও থেকে দুইটি চালান জব্দ করা হয়। ভুয়া আইপি সত্ত্বেও কিভাবে শুল্কায়ন হয়েছে এবং স্ক্যানিং ও গেইট ডিভিশনকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে চালান দুইটি খালাস হয়েছে-তা তদন্ত করবে কাস্টমস গোয়েন্দা।
###