ছয় এয়ারলাইন্সের কাছে বেবিচকের পাওনা ৭৭২২ কোটি টাকা

কয়েক বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া তিনটিসহ দেশি ছয়টি এয়ারলাইন্সের কাছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) পাওনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু বিমান বাংলাদেশের কাছেই পাওনার পরিমাণ ৬ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিপুল অঙ্কের এ অর্থ আদায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি বারবার তাগাদা দিয়ে এলেও আদায় হচ্ছে সামান্য। এমন প্রেক্ষাপটে বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ এয়ারলাইন্সগুলোর লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেবিচক।

এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, “আমরা অবশ্যই দেনা নিয়ে প্রেসারাইজ করব। লাইসেন্স নবায়ন না করতে দেওয়া কোনো সতর্কবার্তা নয়। দেন পরিশোধ না করলে আমরা আইনের মধ্যে থেকে ব্যবস্থা নিব। তবে আমরা এটাও চাই না যে কোনো এয়ারলাইন্স বসে যাক। তারা অপারেট করুক আমরা এটাই চাই।”

বিমানবন্দর ব্যবহারের ফি, ল্যান্ডিং, পার্কিং, রুট নেভিগেশন বিলের পাশাপাশি ভ্যাট, আয়কর ও সারচার্জ হিসেবে এয়ারলাইন্সগুলোর কাছে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত এ পরিমাণ অর্থ পাওনা হয়েছে; যা প্রতিমাসে বাড়ছে।

সময়মত বকেয়া পরিশোধ না করায় জরিমানা হিসেবে বিপুল হারের সারচার্জের মুখে পড়ছে এয়ারলাইন্সগুলো, যা বকেয়ার পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান ছাড়াও বর্তমানে চালু বেসরকারি দুই এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা ও নভো এয়ারের কাছ থেকেও পুরো বকেয়া আদায় করতে পারছে না বেবিচক।

তবে বছর কয়েক আগে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও জিএমজি এয়ারলাইন্সের বকেয়া আদায় নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। এখন এগুলোর সম্পত্তি বিক্রির পথে হাঁটার কথা বলেছেন বেবিচকের চেয়ারম্যান।

চালু এয়ারলাইন্সগুলোর বকেয়া আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা প্রত্যেকটা এয়ারলাইন্সের সঙ্গে কথা বলেছি এবং চিঠি দিয়েছি। পাওনাটা আদায়ের চেষ্টা করছি। বিমানসহ যাদের কাছে বাকি আছে, সবাই বলেছে ধাপে-ধাপে দেবে।”

বকেয়া আদায়ের বিষয়ে গত ডিসেম্বরে বেবিচকের মাসিক সমন্বয় সভায় এয়ারলাইন্সগুলোকে ডেকে আলাদাভাবে বৈঠক করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সভায় এয়ারলাইন্সগুলোর ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বকেয়ার তথ্য তুলে ধরা হয় এবং তা পরিশোধ করা না হলে লাইসেন্স নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বেবিচকের সূত্রে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি পাওনা রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে। বাড়তে বাড়তে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩২৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনা ৯১৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা; বাকি ৫ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা বকেয়া হয়েছে সারচার্জ, ভ্যাট ও আয়কর বাবদ।

তথ্য বলছে, ইউএস-বাংলার কাছে পাওনা ১৭২ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনা পরিমাণ ১৪০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বাকি ৯ কোটি ৯ লাখ টাকা ঋণের ওপর আরোপিত সারচার্জ। এছাড়া ভ্যাট ও আয়কর হিসাবে এয়ারলাইন্সটির বকেয়া ২২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আরেক বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা নভো এয়ারের কাছে পাওনা ২৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনা ২২ কোটি ৯ লাখ টাকা, বাকি ৩ কোটি ৭ লাখ টাকা সারচার্জ। ভ্যাট হিসাবে বকেয়া আছে ৪ কোটি ৬ লাখ টাকা।

বেবিচকের নিয়মানুযায়ী, কোনো এয়ারলাইন্স সময়মত পাওনা অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সেটিকে পাওনার ওপর প্রতিবছর অতিরিক্ত ৭২ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। তবে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো বিভিন্ন সময়ে এ সারচার্জ কমানোর দাবি জানিয়ে আসছে। বতর্মানে এ তিন এয়ারলাইন্সের পাশাপাশি নতুন চালু হওয়া এয়ার অ্যাস্ট্রার কাছে বেবিচকের বকেয়া পাওনা এখনও জমেনি।

এদিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে পাওনার পরিমাণ ৪০৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনা ১৪১ কোটি টাকা। বাকি ২৩৭ কোটি টাকা আগের দেনার ওপর আরোপিত সারচার্জ। এছাড়া ভ্যাট ও আয়কর রয়েছে ২৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বন্ধ ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে পাওনা ৩৮৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনা ৫৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, এর ওপর আরোপিত সারচার্জ ৩২৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ভ্যাট ও আয়কর রয়েছে ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আরেক বন্ধ জিএমজি এয়ারলাইন্সের কাছে পাওনা ৩৯৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনা ৫৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, সারচার্জ ৩৩৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আর ভ্যাট ও আয়কর ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!