জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (ইএনডিএস) সংশ্লিষ্ট সব পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে জরুরি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (ইএনডিএস) সংশ্লিষ্ট সব পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে জরুরি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতি আদেশে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য তালিকায় ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মাধ্যমে ধূমপানকে ই-সিগারেট বা ভ্যাপিং বলে। এ যন্ত্রের ভেতরে নিকোটিন, পানি ও সুগন্ধির দ্রবণ থাকে। ই-সিগারেটে নিকোটিন তরল আকারে থাকে, যা তাপে ধোঁয়া তৈরি হয়। সিগারেটের বিকল্প হিসেবে অনেকে ই–সিগারেট ব্যবহার করেন। ই-সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা এখনো অজানা। এ নিয়ে নেই কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা ভেবে এটি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। ভারতেও ই–সিগারেট উৎপাদন, আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কানাডাসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশেও ই-সিগারেট নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশে তরুণসহ বিভিন্ন বয়সী লোক সিগারেটের বিকল্প হিসেবে দিন দিন ই-সিগারেটে ঝুঁকছেন। তবে বাংলাদেশে ই-সিগারেট ও এর বিভিন্ন উপাদান উৎপাদিত হয় না। কিন্তু আইনে নিষিদ্ধ না হওয়ায় বাংলাদেশে ই-সিগারেট আমদানি ও বিপণন নিষিদ্ধ নয়। নিষিদ্ধ না হওয়ায় এর মান নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারিতেও সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নেই।
রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতানে ই-সিগারেটের যন্ত্র ও এর উপাদান কিনতে পাওয়া যায়। কোথাও কোথাও গড়ে উঠেছে ভ্যাপিং ক্লাবও। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও এ–সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেখা যায়। এগুলো মূলত চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা। এটি ৫৫০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে কিনতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া সুগন্ধিযুক্ত দ্রবণ (ভ্যাপ জুস), ব্যাটারি, ফিল্টার ও কয়েলও বিপণিবিতানগুলোতে কিনতে পাওয়া যায়।
মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ই-সিগারেটের তরল মিশ্রণের (ই-লিকুইড) মধ্যে থাকে প্রপেলিন গ্লাইসল, গ্লিসারিন, পলিইথিলিন গ্লাইসল, নানাবিধ ফ্লেভার এবং নিকোটিন। গরম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রাসায়নিকগুলো থেকে সাধারণ সিগারেটের ধোঁয়ার সমপরিমাণ ফরমালডিহাইড উৎপন্ন হয়। এ ছাড়া ই-সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকে অতিসূক্ষ্ম রাসায়নিক কণা যা ভীষণ ক্ষতিকারক। এর থেকে গলা-মুখ জ্বালা, বমিভাব এবং কাশি দেখা দিতে পারে। এছাড়া ই-সিগারেটের প্রধান উপকরণ নিকোটিন থেকে দ্রুত আসক্তি তৈরি হয়। যা থেকে ফুসফুসের বিভিন্ন অসুখ হতে পারে। এর মধ্যে যেভাবে রাসায়নিক নিকোটিন ব্যবহার করা হয়; এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে মৃত্যুও হতে পারে।এর ধোঁয়ায় এমন কিছু উপাদান আছে যেগুলো থেকে ক্যানসার হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাধারণ সিগারেটের চেয়ে ই-সিগারেট দশগুন বেশি ক্ষতিকারক। সবচেয়ে বড় কথা, ই-সিগারেট দিয়ে ধুমপান কখনো ছাড়া যায় না।