আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঋণের নামে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা বের হয়ে গেছে। ব্যাংক থেকে ঋণ প্রাপ্তির মধ্যে অন্যতম গ্রুপ ছিল এস আলম গ্রুপ। জনতা ব্যাংকের প্রধান তিন শাখার একটি সাধারণ বীমা ভবন করপোরেশন শাখা থেকে এস আলম গ্রুপকে দেওয়া হয় ১০ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা, যা শাখার মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৯৭ শতাংশ। এই ঋণ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল ছিল না, তবুও অন্য শাখা থেকে অর্থ এনে তা দেওয়া হয়। একক ঋণসীমা লঙ্ঘন করা হয়েছে। বর্তমানে এস আলম গ্রুপের সব ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে।
জনতা ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের জুন শেষে সাধারণ বীমা ভবন করপোরেশন শাখা ৪৪৭ জন গ্রাহকের অনুকূলে বিতরণকৃত ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ হাজার ৯৪১ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে গেছে। এই শাখার মোট বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে এস আলম গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় ১০ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা, যা শাখার মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৯৭ শতাংশ। ব্যাংকের শাখায় জুন শেষে আমানত স্থিতি ছিল মাত্র ১০১ কোটি টাকা। অর্থাৎ শাখায় পর্যাপ্ত আমানত না থাকা সত্ত্বেও অন্য শাখা থেকে অর্থ এনে এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া হয়েছিল।
ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬(খ)(১) অনুযায়ী, কোনো একক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপকে একটি ব্যাংক তার মূলধনের সর্বোচ্চ ১৫% ফান্ডেড এবং ১০% নন-ফান্ডেড ঋণ দিতে পারবে। এখানে ‘গ্রুপ’ বলতে এমন কোনো ঋণগ্রহীতা বা তার সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি বোঝানো হয়। জুন পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ছিল ২,৩১৪ কোটি টাকা। এর মানে, কোনো একক গ্রুপকে ফান্ডেড হিসেবে সর্বোচ্চ ৩৪৭ কোটি ১০ লাখ এবং নন-ফান্ডেড হিসেবে ২৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া যাবে। মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৫৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা দেওয়া সম্ভব।
তবে এস আলম গ্রুপের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে এস আলম ট্রেডিং কোম্পানির ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা, এস আলম রিফাইন্ড সুগারের ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, এস আলম সুপার এডিবল অয়েলের ৭৮৬ কোটি, এস আলম ভেজিটেবল অয়েলের ১ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা ও গ্লোবাল ট্রেডিংয়ের এক হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ঋণসীমা লঙ্ঘন করে বেশি দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা বা ৩৬৫ শতাংশ । একই গ্রুপের অপর একটি প্রতিষ্ঠান এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। এই প্রতিষ্ঠানকে মূলধনের ১ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বা ৯৪ শতাংশ বেশি দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালের ২৬ জুলাই দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে জনতা ব্যাংকের প্রধান ৩ শাখার বৈদেশিক ঋণ কার্যক্রম বন্ধে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ওই সময় এস আলমের ক্ষমতার দাপটে তা একদিন পর তুলে নিতে হয়। তিন শাখা হলো—লোকাল অফিস, জনতা ভবন করপোরেশন ও সাধারণ বিমা ভবন করপোরেশন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, জনতা ব্যাংকের মোট ঋণের ৭৬ শতাংশ এই ৩ শাখায়। আর প্রভাবশালীরা এই ৩ শাখারই গ্রাহক। তাদের কাছে ওই সময় হারতে হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। যদি ওই সময় ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করা যেত তাহলে ব্যাংকের এত বড় ক্ষতি হতো না। কারণ ২০২২ সালের পরই ব্যাংক থেকে অধিকাংশ ঋণ বের হয়।
জানতে চাইলে সাধারণ বীমা ভবন করপোরেশন শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক বাদল কান্তি দাস বলেন, আমাদের ঋণগুলো শাখাভিত্তিক হয় না। এটা সেন্ট্রাল থেকে নির্ধারণ করা হয়। কারণ আমরা কাউকে ঋণ দিতে হলে হেড অফিস থেকে ধার করতে হয়। এস আলমের সব ঋণ খেলাপি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। ব্যাংকের পক্ষ থেকে এখন তাদের বিরুদ্ধে মামলা লড়তেছে।
** এস আলমের ৪৬৯ একর জমি ক্রোকের নির্দেশ
** এস আলমের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি
** এস আলমের অ্যাকাউন্টে ২.৪২ লাখ কোটি টাকার লেনদেন
**এস আলম গ্রুপের ৫১০৯ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ
**এস আলম : ২ এলসিতেই পাচার ১০ হাজার কোটি টাকা
**পাচার করে ১৮ কোম্পানিতে এস আলমের বিনিয়োগ
**এস আলমের সেই দুই প্রতিষ্ঠানের বিন লক, হিসাব জব্দ
**এস আলম: আমদানি না করেই পাচার ১৬ কোটি টাকা
** এস আলমের জামাতা হাতিয়েছেন ৩৭৪৫ কোটি টাকা
** এস আলমের স্টিল, তেল মিল ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নিলামে
** এস আলমের পিএসের হিসাবে ১২৬৬ কোটি টাকা
** এস আলমের ১৭৫০ কোটি খেলাপি ঋণে বাড়তি সুবিধা
** ফার্স্ট সিকিউরিটিতে থেকে লুট ৩৮ হাজার কোটি

