অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (৯ মাসে) বরাদ্দের অন্তত ৬০ শতাংশ ব্যয় না হলে শেষ প্রান্তিকের অর্থছাড় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ থাকবে। এ নির্দেশনা দিয়ে গত সোমবার সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বর্তমানে এমনভাবে বাজেট বাস্তবায়ন করছে যে এতে আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাজেট বাস্তবায়নের গতি ধীর হচ্ছে, যার ধারাবাহিকতা দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকেও থাকছে। বাজেট বাস্তবায়নের হার বেশি দেখা যায় চতুর্থ অর্থাৎ শেষ প্রান্তিকে গিয়ে। এ কারণে সরকারি ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
পরিপত্রে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে বাজেট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ও অগ্রগতির চিত্র দিতে বলা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিকল্পনায় রাজস্ব আদায়, কেনাকাটা, ব্যয় এবং বৈদেশিক অনুদান ও ঋণ সংগ্রহের বিষয়গুলো থাকতে হবে। প্রথম প্রান্তিক সঠিকভাবে শেষ না হলে দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকেই অর্থছাড় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বুধবার বলেন, বিষয়টি সার্বিক সুশাসনের সঙ্গে জড়িত। আর তাই এ পরিপত্র পরিপালনের বিষয়টি আসতে হবে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক দুই দিক থেকেই। বাজেট বাস্তবায়নের এ দুর্বলতম দিক যেহেতু একধরনের ‘কালচার’ হয়ে গেছে, ফলে শুধু একটি পরিপত্র জারির মাধ্যমে ভালো কোনো সুফল আশা করা কঠিন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ১ শতাংশও বাস্তবায়ন হয়নি। বাস্তবায়ন হয়েছে আধা শতাংশের চেয়ে সামান্য বেশি, অর্থাৎ মাত্র দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। পরিমাণের দিক থেকে জুলাইয়ে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার মতো কম।
গত ১৮ আগস্ট একনেক বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, জুলাইয়ে এডিপি বাস্তবায়ন এক শতাংশেরও কম হওয়া গ্রহণযোগ্য নয়; আগের মতো অজুহাতও এবার মানা হবে না। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক শেষ হবে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এর আগে সব মন্ত্রণালয়কে বাজেট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে এবং প্রান্তিক শেষে এক মাসের মধ্যে পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন জমা দিতে হবে অর্থ বিভাগে।
অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মেরামত, সংরক্ষণ, নির্মাণ, পূর্তকাজ ও মালামাল ক্রয়সহ বিভিন্ন খাতে পদক্ষেপ নেয় অর্থবছরের শেষ দিকে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। এতে প্রতি বছর সরকারকে অপরিকল্পিত ঋণের বোঝা বহন করতে হয়। অথচ আগেভাগে পরিকল্পনা করা হলে এসব ঋণ এড়ানো এবং ঋণজনিত ব্যয়ও কমানো সম্ভব।