৮০ হাজার টাকার জমি কিনতে কর ২৫ লাখ টাকা!

কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার চরধুরুং মৌজায় প্রতি শতক জমির সরকার নির্ধারিত দাম ৮০০ টাকা অনুযায়ী এক একর (১০০ শতক) জমির মূল্য দাঁড়ায় ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু এই জমির দলিল নিবন্ধন করতে ক্রেতাকে দিতে হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা উৎস কর, সঙ্গে নিবন্ধন ফি ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে আরও ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ মাত্র ৮০ হাজার টাকা মূল্যের এক একর জমি কিনতে খরচ হচ্ছে মোট ২৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। নতুন অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে জেলার ৮১টি মৌজায় জমি ক্রয়-বিক্রয়ে এমনই আকাশচুম্বী উৎস কর আরোপ করা হয়েছে।

জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ২৪ জুন একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। এতে বলা হয়েছে, জেলার ৮১টি মৌজায় জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে নাল জমিতে প্রতি শতক ২৫ হাজার, আবাসিক জমিতে প্রতি শতক ৫০ হাজার এবং বাণিজ্যিক জমিতে প্রতি শতক এক লাখ টাকা উৎস কর দিতে হবে। নতুন অর্থবছরে এই তিন শ্রেণির জমিতে উচ্চ হারে কর আরোপের পর থেকে সংশ্লিষ্ট মৌজাগুলোতে জমি ক্রয়-বিক্রয় প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা রেজিস্ট্রার রেজাউল করিম বকসী জানান, নীতিমালাটি কার্যকর হওয়ার ফলে লাভের তুলনায় ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। রাজস্ব বৃদ্ধি লক্ষ্য থাকলেও উল্টো রাজস্ব আদায় বহুগুণ কমে গেছে। বিষয়টি ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

২০২০ সালের এক গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী, কক্সবাজারে পর্যটন সম্প্রসারণ এবং দ্বীপ ও উপকূলীয় এলাকার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে ৮১টি মৌজার জমির ওপর কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। কউকের অধীনে যাওয়ার পর এসব জমির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ২৪ মে এক প্রজ্ঞাপনে নাল, আবাসিক ও বাণিজ্যিক—এই তিন শ্রেণির জমি ক্রয়-বিক্রয়ে যথাক্রমে প্রতি শতকে ২৫ হাজার, ৫০ হাজার ও এক লাখ টাকা উৎস কর নির্ধারণ করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এত উচ্চ হারে উৎস কর মূলত সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য প্রযোজ্য। তবে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের কারণে কক্সবাজার জেলাকেও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কউকের আওতায় থাকা জমির পরিধি কুতুবদিয়া থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত। এমনকি সেন্ট মার্টিন দ্বীপসহ পুরো টেকনাফ ও কুতুবদিয়া উপজেলার সব জমিই কউকের অন্তর্ভুক্ত। কুতুবদিয়া দ্বীপের রাজাখালী মৌজার সব জমি সাগরে বিলীন হয়ে গেলেও, গত ২০ বছরে সেখানে কোনো জমির নিবন্ধন হয়নি। তবুও সেই মৌজার জমিতে প্রতি শতক নাল জমির জন্য ১ হাজার ৮৭৯ টাকা উৎস কর ধার্য রয়েছে। অতিরিক্ত করের কারণে কুতুবদিয়া ও টেকনাফে ১ থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত কোনো সাফকবলা দলিল নিবন্ধন হয়নি।

গত মঙ্গলবার কক্সবাজার সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, গত তিন সপ্তাহে দলিল নিবন্ধনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। অল্প কিছু জমি ক্রয়-বিক্রয় হলেও তা মূলত বায়নানামা দলিল, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, পারিবারিক হেবা ঘোষণা ও দান ঘোষণা দলিলের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে—যেগুলো থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয় না। রাজস্ব আদায়ের একমাত্র দলিল হলো সাফকবলা দলিল।

জেলাব্যাপী আকস্মিক উচ্চ উৎস কর বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। সুবল দেব নামের একজন বলেন, মফস্বল এলাকায় আগে উৎস কর ফি ছিল ২ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি লাখে দুই হাজার টাকা। এখন প্রতি শতকে ২৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। ১০ শতক জমি নিবন্ধনের জন্য এসে আমি হতবাক হয়েছি। তিনি আরও বলেন, রেজিস্ট্রার অফিসে ১০ শতক জমির জন্য উৎস কর দিতে হবে আড়াই লাখ টাকা। এর পাশাপাশি প্রতি লাখে স্ট্যাম্প শুল্ক ১.৫ শতাংশ, রেজিস্ট্রেশন ফি ১ শতাংশ এবং স্থানীয় সরকার ফি ৩ শতাংশ দিতে হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আবুল হোছাইন বলেন, জীবনের ৪০ বছর ধরে দলিল লেখকের পেশায় রয়েছি। কিন্তু আকস্মিকভাবে আরোপিত এই আকাশছোঁয়া উৎস করের মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনো হইনি।

** জমি নিবন্ধনে উৎসে কর হার কমেছে
** জমি বিক্রির অপ্রদর্শিত টাকা কর দিয়ে সাদা করা যাবে
** বাজেটে জমির মূল্য নির্ধারণে বড় পরিবর্তন আসছে
** জমির মূল্য ব্যবধান কমাতে নতুন নীতিমালা
** বাজেটে জমি-ফ্ল্যাটের নিবন্ধন কর কমেতেছে!
** ভূমি মালিকানা সনদ চালু হচ্ছে জুলাইয়ে
** অনিশ্চিত ‘ভূমি মালিকানা আইন’, অধরাই স্মার্ট কার্ড

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!