৬ হাজার কোটি ব্যয়েও ১৩ কোটি লিটার পানি নষ্ট

গত দেড় দশকে চট্টগ্রাম ওয়াসার উৎপাদন প্রায় ৩১ কোটি লিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ওয়াসার দৈনিক গড় উৎপাদন ৪৫ কোটি লিটার হলেও গ্রাহকদের কাছে পৌঁছায় মাত্র ৩১ কোটি লিটার। বাকি সাড়ে ১৩ কোটি লিটার পানি নষ্ট হচ্ছে, যা সিস্টেম লস নামে পরিচিত। অথচ, ওয়াসা এই সময়ের মধ্যে সরবরাহ উন্নয়ন, লাইন স্থাপন এবং নির্মাণে ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করেছে, তবে তার সুফল এখনও মেলেনি কর্তৃপক্ষ ও গ্রাহকদের কাছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের দৈনিক পানি চাহিদা প্রায় ৫৬ কোটি লিটার। তবে ওয়াসার সক্ষমতা প্রায় ৫০ কোটি লিটার সরবরাহ করার। প্রতিদিন যে পরিমাণ পানি উৎপাদিত হয়, তার প্রায় ৩০ শতাংশ ‘সিস্টেম লস’ (কারিগরি অপচয়) হিসেবে হারিয়ে যায়। এর ফলে, কাগজে-কলমে ওয়াসার গড় উৎপাদন ৪৫ কোটি লিটার হলেও গ্রাহকদের কাছে পৌঁছায় মাত্র ৩১ কোটি লিটার। বাকি ১৪ কোটি লিটার নষ্ট হয়ে যায়, যার বিলও আসে না। এর ফলে বছরে প্রায় ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি লিটার পানি নষ্ট হয়। এছাড়া, গত সপ্তাহ থেকে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানির পরিমাণ কমে গেছে, এবং সামনে পানিতে লবণাক্ততা বাড়লে উৎপাদন আরও কমে যাবে। কারণ, ওয়াসার প্রধান পানির উৎস হালদা ও কর্ণফুলী নদী, এবং শুল্ক মৌসুমে নদীর পানি স্তর নিচে নেমে যাবে, যার ফলে নদী থেকে পানি নেয়া সম্ভব হবে না এবং জোয়ারের সময় লবণাক্ততা বেড়ে যাবে। এই সমস্যাগুলো মোকাবিলার জন্য ওয়াসার হাতে বিকল্প সোর্স নেই।

পানির উৎপাদন, সরবরাহ এবং অপচয় কমাতে গত এক দশকে চট্টগ্রাম ওয়াসা ছয় হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের (ফেজ-১) আওতায় প্রায় ৪৫ কিলোমিটার পুরোনো পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ৯১৯ কোটি টাকা ঋণে বাস্তবায়িত হয়। এছাড়া, বিশ্বব্যাংকের ১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা ঋণে ১ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় ১৫০ কিলোমিটার পুরোনো পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের (ফেজ-২) আওতায় ৭০০ কিলোমিটার পাইপলাইন প্রতিস্থাপনে ৩ হাজার ৮২ কোটি টাকা ব্যয় করা হয় এবং জাইকা এর জন্য ২ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা ঋণ দেয়। এসব প্রকল্প ২০১১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হয়। তবে এতসব উন্নয়ন কাজের পরও পাইপলাইনে লিকেজের কারণে বছরে গড়ে ৩০ শতাংশ পানি অপচয় হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির গ্রাহকের সংখ্যা ৯৮ হাজার ৭৫৫। এর মধ্যে অনেক গ্রাহক ওয়াসার সংযোগ আছে, কিন্তু পানি ব্যবহার করে না। আবার কিছু এলাকা আছে পানির সংযোগ আছে, কিন্তু নিয়মিত পানির সরবরাহ করা হয় না। এছাড়া অনেক গ্রাহক আছে তাদের পানির ব্যবহার কম। অথচ এসব গ্রাহককে ন্যূনতম বিল হিসাবে প্রতি মাসের বিল ৬৪২ টাকা পরিশোধ করতে হয়, যা গ্রাহকের জন্য বৈষম্যমূলক।

পশ্চিম বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা ও ওয়াসার পানি ব্যবহারকারী মাহবুবুল আলম বলেন, একজন গ্রাহক যতটুকু পানির ব্যবহার করবে ততটুকু বিল দেবে। আমরা গ্রাহক ততটুকু বিল পরিশোধ করব। আমাদের একটি সংযোগের ব্যবহার নেই। অথচ ওয়াসা গত ১০ বছর ৬৪২ টাকা ন্যূনতম বিল আদায় করে যাচ্ছে। এটা বৈষম্যমূলক ও নিপীড়নমূলক।

ওয়াসা বিল শাখার কর্মকর্তারা বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির উৎপাদন ও সরবরাহ অনেক বেড়েছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দৈনিক আরও ছয় কোটি লিটার পানি যোগ হবে, যা নগরবাসীকে আরও বেশি পানি সরবরাহ নিশ্চিত করবে। তবে সিস্টেম লস কমানো যায়নি, যা নিয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ চিন্তিত। বর্তমানে এক হাজার লিটার পানি উৎপাদন করতে ওয়াসার খরচ হচ্ছে ৩১ টাকা, কিন্তু এটি গ্রাহকদের কাছে ১৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অর্থাৎ, ওয়াসা সেবা প্রদান করতে কাজ করছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা কমল দে বলেন, জাইকার অর্থায়নে নতুন পানি সরবরাহ লাইন নির্মিত হয়েছে, তবে পুরোনো লাইনগুলোতে এখনও বেশি লিকেজ রয়েছে, যার ফলে সিস্টেম লস হচ্ছে। সিস্টেম লস কমানোর জন্য বিশেষ মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আশা করেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সিস্টেম লস কমবে, যা গ্রাহকদের বিল নির্ধারণে সহায়ক হবে। ওয়াসা এ বিষয়ে কাজ করছে।

**ঢাকা ওয়াসা:সেবা ছাড়াই ৩৮৩৪ কোটি টাকা আদায়

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!