৬৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ শহিদ-আহতদের জন্য

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের সহায়তা এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রমে বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ৭৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৪২ কোটি টাকা চলতি সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, এবং সংস্কার কার্যক্রমসহ নিহত ও আহতদের সহায়তায় আগামী (২০২৫-২৬) বাজেটেও ৪০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে। এই বরাদ্দ থেকে সহায়তা ও সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে, যার মধ্যে ১০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে সংস্কার কর্মসূচির জন্য। আজ জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে এ আর্থিক চিত্র তুলে ধরবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

ডিসি সম্মেলনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বাজার মনিটরিং এবং মোবাইল কোর্ট অভিযান জোরদার করার পাশাপাশি অর্থ সংকট মোকাবিলায় রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করার নির্দেশনা দেওয়া হবে। বিশেষভাবে ভূমি উন্নয়ন ও হস্তান্তর কর, মোটরযান কর, এবং সব ধরনের ইজারা, সরকারি ভাড়া, ফি, টোলের আওতা সম্প্রসারণের বিষয়েও নির্দেশনা থাকবে।রোববার শুরু হওয়া সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে অর্থ উপদেষ্টা অংশগ্রহণ করবেন। সেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হতাহতদের আর্থিক সহায়তা, ক্ষতিগ্রস্ত পুলিশ স্থাপনা পুনর্নির্মাণ ব্যয়, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন কার্যক্রমে ডিসিদের সহায়তা, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হবে।

জুলাইয়ের শহিদ ও আহতদের সহায়তা বাজেট :অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শহিদদের ‘জুলাই শহিদ’ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান শুরু করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ সহায়তার জন্য ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা শহিদ পরিবারের ৮২৬ জন সদস্য এবং আহতদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। আহতদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, যা শিগগির প্রকাশিত হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শহিদ পরিবারের প্রতি সদস্যকে ১০ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহতদের ‘ক্যাটাগরি এ’-এর অন্তর্ভুক্তদের ২ লাখ টাকা, এবং ‘ক্যাটাগরি বি’ যোদ্ধাদের ১ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে।২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে শহিদ ও আহতদের সহায়তার জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। শহিদ পরিবারের প্রতি সদস্যকে ২০ লাখ টাকা, গুরুতর আহত ‘ক্যাটাগরি এ’-এর যোদ্ধাদের ৩ লাখ টাকা এবং মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে। ‘ক্যাটাগরি বি’ যোদ্ধাদের জন্য ২ লাখ টাকা এবং মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা বরাদ্দ থাকবে।

অগ্রাধিকার পাচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ : অর্থ উপদেষ্টা মনে করেন এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এরমধ্যে ঘনিয়ে আসছে রোজা। একশ্রেণির ব্যবসায়ী প্রতিবছর নানা অজুহাতে রোজার বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেন। ফলে রোজার আগে ডিসি সম্মেলনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ডিসিদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দেবেন অর্থ উপদেষ্টা। বিশেষ করে বাজারে নিয়মিত টাস্কফোর্স অভিযান নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা কোল্ডস্টোরেজ এবং গুদামঘর মনিটরিং জোরদারের নির্দেশনা দেওয়া হবে ডিসিদের। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিত্যপণ্যের বাজারমূল্য নিজ নিজ জেলার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা এবং দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হবে।

অর্থ সংকট মোকাবিলায় রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করার নির্দেশনা : অর্থ উপদেষ্টা তার মতে, সরকারের ব্যয় বাড়ানোর জন্য রাজস্ব আহরণের বিকল্প নেই। একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, জিডিপির অনুপাতে কর আদায়ে বাংলাদেশ অনেক দেশ থেকে পিছিয়ে আছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে নন-এনবিআর কর থেকে ৩,১৩৯ কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত আয় থেকে ২৮,২৬১ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে।

জনপ্রতিনিধিশীল ও কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সংবিধান পর্যালোচনা ও মূল্যায়নের জন্য সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনকে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনকে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনকে ৭৬ লাখ টাকা, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনকে ৯৫ লাখ টাকা এবং পুলিশ সংস্কার কমিশনকে ৮৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সরকার।

আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত পুলিশের স্থাপনা পুনর্নির্মাণ : জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন স্থাপনা পুনর্নির্মাণে প্রায় ৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া, আন্দোলনের পর ট্রাফিক পুলিশ আত্মগোপন করে চাকরিতে ফিরে আসেনি, যার ফলে ট্রাফিক বিভাগ জনবল সংকটে পড়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬ এর ১০ ধারা অনুযায়ী সহায়ক পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যার জন্য ৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন পরিচালনায় ডিসিদের সহায়তা :জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার আন্দোলনে শাহাদত, আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী ব্যক্তিদের কল্যাণে এবং তাদের পরিবারকে আর্থিক, মানবিক, কর্মসংস্থান ও চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করতে ‘জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হয়। ফাউন্ডেশনের প্রতিদিনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ভবিষ্যতে এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ডিসিদের সহায়তা চাইবেন অর্থ উপদেষ্টা। এছাড়া, জুলাই অভ্যুত্থান কেন্দ্রিক তারুণ্য উৎসবের জন্য ৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণ ও বিভিন্ন প্রকাশনার জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!