৫০ বছর ধরে বহু শিশুকে লালন করেছি, আর কতকাল?

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে অর্থ উপদেষ্টা

** ভ্যাটের হার ৯ শতাংশ করা হবে, পরিকল্পনার হচ্ছে-এমন কিছু বলিনি-এনবিআর চেয়ারম্যান
** ভ্যাটের পরিমাণ না বাড়িয়ে ক্ষেত্র বাড়ানো যায় কি না, দেখার অনুরোধ রাখেন: প্রশাসক এফবিসিসিআই

কর আহরণ না বাড়ালে দেশ বিপদে পড়বে উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেছেন, সুরক্ষা দেওয়ার দিন এখন আর নেই। ভ্যাট দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত সেমিনারে তিনি বলেন, ট্যাক্স রেভেনিউ যদি না বাড়াই, আমরা নিজেরাই বিপদে পড়ব। আমরা বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যখন কথা বলি, তারা বলে, তোমাদের এতো লোক কিন্তু ভ্যাট এতো কম, অব্যাহতি দিচ্ছ। আরেকটা জিনিস…ব্যবসায়ীরা আছেন…ব্যবসা করার জন্য আমারে একটু অব্যাহতি দেন।… আর আর্গুমেন্ট তো আছেই। শিশুকে লালনপালন করা।

বিভিন্ন খাতে কর কমিয়ে ও প্রণোদনা দিয়ে সহযোগিতা করার বিষয়টি সামনে এনে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা পঞ্চাশ বছর ধরে বহু শিশুকে লালন করেছি, ট্যাক্স অব্যাহতি দিয়ে, ইনিসেনটিভ দিয়ে। আর কতকাল শিশুকে লালন করব? আমি উদাহরণ দিলাম না, আপনারা অনেকেই বুঝতে পারেন যে, যেসব শিশু এখনও শিশুই রয়ে গেছে। শারীরিক দিক থেকে বড় হয়ে গেছে, কিন্তু তারা নিজেদেরকে বলে এখনও প্রোটেকশন দিতে। এই প্রোটেকশনের দিন কিন্তু চলে গেছে। ২০২৬ সালে এসে উন্নয়শীল দেশে উত্তরণ হওয়ার জন্য এসব থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। এসব কিছু মাথায় রেখেই সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা ট্যাক্স দিবেন। কর্মকর্তাদের করদাতাদের প্রতি সদয় হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা, তারাও একটু একটু ফ্রেন্ডলি হবেন। মানে জোর করে একেবারে আদায় করে নিয়ে আসবেন না। যদি অসুবিধে হয় শুনবেন, তাদের যথাসম্ভব কমপ্লায়েন্স করে তাদেরকে একটু সহায়তা করা।

সেমিনারে অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, আমাদের কর জিডিপি অনেক কম। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের থেকে অনেক কম। এ নিয়ে বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে সবসময়ই কথা শুনতে হয়। আশা করি, এ বিষয়ে এনবিআর ব্যাপক কাজ করবে। বাজেট ডেফিসিট আমরা পূরণ করি ঋণ নিয়ে। রেভিনিউ কমে গেলে ঋণ বেড়ে যাবে। আমরা ঋণে জর্জরিত হয়ে যাব। এজন্য অনেক সময় আয় দেখে ব্যয় কমাই। কিন্তু এতে উন্নয়ন কাজ কমে যায়। আমাদের গ্রোথ ধরে রাখতে রেভিনিউ বাড়াতে হবে।
WhatsApp Image 2024 12 10 at 4.08.04 PM 2
এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা ভ্যাট সংগ্রহের কাজটি যতটা সততার সাথে, নিষ্ঠার সাথে করবে, রাজস্ব আদায় তত গতিশীল হবে। আমরা যারা কেনাকাটা করি, তাদের মধ্যে ভ্যাট দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। ভ্যাটের পরিমাণ না বাড়িয়ে এর ক্ষেত্র বাড়ানো যায় কি না, সেটি দেখার অনুরোধ রাখেন তিনি। এই রেট বাড়তির কারণে ভ্যাট ফাঁকির প্রবণতা দেখা দেয়। এটা কমালে ব্যবিসায়ীদের আগ্রহী করে তুলবে, বলেন তিনি। ইপিজেড বা অন্যান্য জায়গায় যারা ব্যবসা শুরু করে, স্টার্টআপ আছে তাদের জন্য দুই-তিন বছর ভ্যাটেও অব্যাহতি দেওয়া যায় কি না তাও এনবিআর দেখতে পারে বলে মন্তব্য করেন হাফিজুর রহমান।

ব্যবসায়ী নেতা আবদুল খালেক বলেন, ভ্যাট ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করার কোনো বিকল্প নেই এবং সেটা কোনো ঐচ্ছিক বিষয় হতে পারে না, আবশ্যিক হতে হবে। বৈষম্য কমিয়ে ভ্যাট ব্যবস্থাকে উৎপাদন সহায়ক করতে হবে। জাইকার গবেষণা বলছে, আমাদের প্রতিবছর ২০-২৫ লাখ তরুণ জব মার্কেটে আসছে। তাদেরকে চাকরি দেওয়া কিন্তু অসম্ভব। ফলে আমাদেরকে ব্যবসায়িকবান্ধব পরিবেশ তৈরি, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, শিল্প সম্প্রসারণ ছাড়া কোন উপায় নেই। সেক্ষেত্রে এনবিআরের আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের অনেক বড় একটা দায়িত্ব আছে। আমরা এখনো কেন কলোনিয়াল স্টাইলে রাজস্ব আহরণ করবো। এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আমাদের এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে রাজস্ব ফাঁকি হবে না, আবার রাজস্ব নিমত্তনমূলক হবে না।
Vat

সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জই হলো ট্যাক্স রেভিনিউ কীভাবে বাড়াব। নানা কারণেই শুল্ক বাড়ানো যাবে না। আমাদের মূল সোর্স হচ্ছে ভিএটি এবং আয়কর। ব্যবসায়ীরা হচ্ছে এক্ষেত্রে কালেক্টিং এজেন্ট। ভ্যাট আদায় করা তাদের দায়িত্ব। কিন্তু আমরা এক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘাটতি দেখছি। এ সময় তিনি বলেন, আমি আবারও বলছি ব্যবসায়ীরা ভ্যাট পেয়ার না, ভ্যাট দিবে ক্রেতারা। তারা কেবল সরকারের পক্ষে ভ্যাট কালেক্টিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে অনেক কাজের সুযোগ আছে। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরাও একই কথা বলেন যে, আমাদের ভ্যাট আদায় বাড়ানোর অনেক সুযোগ আছে। আমাদের রেজিস্টার্ড ভিএটি পেয়ার ৪-৫ গুণ বাড়ানোর সুযোগ রিয়েছে। এখন ৫ লাখের বেশি আছে, আমি তো মনে করি, এটি ২০-২৫ লাখ করা সম্ভব। ভ্যাটের হার ৯ শতাংশ করার কোন পরিকল্পনা নেই। আমি কখনো বলিনি ৯ শতাংশ করা হবে।

WhatsApp Image 2024 12 10 at 4.48.00 PM
মূল প্রবন্ধে মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর আমূল বদলে গেছে রাজস্ব প্রশাসনের চিত্র। রাজনৈতিক চাপমুক্ত হয়ে বড় সংস্কারের পথে হাঁটছে এনবিআর। ৫ আগস্টের পর মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ৯৪টি নিরীক্ষা শেষ করে ১৫৯.৬৬ কোটি টাকার মূসক ফাঁকি উদঘাটন করেছে। আদায় করেছে ৬১.১৬ কোটি টাকা। ভ্যাট অনুবিভাগ গত ৩ মাসে ৯ হাজার ৮২৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন প্রদান, ভ্যাট আইন ও বিধি সংস্কারে ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভ্যাট আদায়ে সঠিক পরিসংখ্যানের অভাব, করদাতার সন্তুষ্টি, কর সংস্কৃতির অভাব, নিম্ন দেশজ উৎপাদনশীলতা ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অটোমেশনের পথে হাঁটছে ভ্যাট বিভাগ।

অপরদিকে, সারাদেশের সব ভ্যাট কমিশনারেট ১০ ডিসেম্বর ভ্যাট দিবস এবং ১০-১৫ ডিসেম্বর ভ্যাট সপ্তাহ-২০২৪ পালন করছে। সব কমিশনারেটে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!