৪৪৯ কোটি আত্মসাৎ: আসামি পুতুল, সালমানসহ ৩৫

সূচনা ফাউন্ডেশনের অনুকূলে অর্থ প্রদান ও কর ফাঁকির মাধ্যমে প্রায় ৪৪৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং প্রায় ৯৩১ কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১১ জন ট্রাস্টি, সালমান এফ রহমান ও আজিজ খানসহ ৮ জন ব্যবসায়ী এবং এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যানসহ মোট ১৬ জনকে আসামি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

মামলার আসামিরা হলেন- সূচনা ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ট্রাস্টি ও চেয়ারপার্সন প্রফেসর ডা. মাজহারুল মান্নান, ট্রাস্টি ও সাবেক ক্রীড়া মন্ত্রী মো. নাজমুল হাসান পাপন, ট্রাস্টি সায়ফুল্লাহ আব্দুল্লা সোলেনখী, সূচনা ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার মো. শামসুজ্জামান, ট্রাস্টি জ্যান বারী রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রাণ গোপাল দত্ত, এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য প্রফেসর রুহুল হক, শিরিন জামান মুনির, এম এস মেহরাজ জাহান ও সদস্য ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া, হামিদ রিয়েল এস্টেটের চেয়ারম্যান ইন্তেকাবুল হামিদ, সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান ওরফে সালমান এফ রহমান, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. আজিজ খান, সাবেক এমপি এ কে এম রহমাতুল্লাহ, ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দীন হাসান রশিদ, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও বিল ট্রেড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান এনায়েতুর রহমানকেও মামলার আসামি করা হচ্ছে। মামলায় এনবিআরের যারা আসামি হচ্ছেন তারা হলেন- সাবেক মুখ্যসচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, এনবিআরের সাবেক সদস্য (কর অডিট, ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন) মীর মুস্তাক আলী, সাবেক সদস্য (ইন্টারন্যাশনাল ট্যাক্সেস) চৌধুরী আমির হোসেন, সাবেক সদস্য (কর নীতি) পারভেজ ইকবাল, সাবেক সদস্য (শুল্ক নীতি) মো. ফরিদ উদ্দিন, সাবেক সদস্য (শুল্ক নিরীক্ষা) মো. ফিরোজ শাহ আলম, সাবেক সদস্য (মূসক নীতি) ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন, সাবেক সদস্য (লিগ্যাল) ডা. মাহবুবুর রহমান, সাবেক সদস্য (কর তথ্য ব্যবস্থাপনা ও সেবা) মো. লোকমান চৌধুরী, সাবেক সদস্য (মূসক) মো. রেজাউল হাসান, সাবেক সদস্য (কর জরিপ ও পরিদর্শন) মো. জিয়া উদ্দিন মাহমুদ, সাবেক সদস্য (কর প্রশাসন) আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক সদস্য (শুল্ক রপ্তানি ও বন্ড) এ এফ এম শাহরিয়ার মোল্লা ওরফে আবু ফয়সাল মো. শাহরিয়ার মোল্লা, সাবেক সদস্য (শুল্ক ও ভ্যাট শাখা) সুলতান মো. ইকবাল, সদস্য (বোর্ড প্রশাসন) তন্দ্রা সিকদার এবং সাবেক সদস্য (কর আপিল ও অব্যাহতি) কালীপদ হালদার।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ধারা ১২০বি/১৬১/১৬২/১৬৩/১৬৪/১৬৫(ক) ২১৭/২১৮/২০১/৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, সূচনা ফাউন্ডেশন নামীয় নামসর্বস্ব ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অবৈধভাবে বিপুল অঙ্কের অর্থ প্রদান করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে আসামিরা আয়কর আইনের ক্ষমতার অপব্যবহার করে কর মওকুফ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেন। যার মাধ্যমে তারা ৪৪৭ কোটি ৯৫ লাখ ৩০ হাজার ১৯৩ টাকা আত্মসাৎ করেন।

অন্যদিকে সূচনা ফাউন্ডেশন ২০১৫–২০১৬ করবর্ষ থেকে ২০২৪–২০২৫ পর্যন্ত মোট ৯৯ লাখ ৪ হাজার ৫৩১ টাকা আয়কর প্রদান না করে প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। এ প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া কর জমার রেকর্ডপত্র তৈরি করে অডিট প্রতিবেদনে ‌‌‘আয়কর খরচ’ হিসেবে প্রদর্শন করে। এর মাধ্যমে ওই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন আর্থিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বা বিনিময়ে অবৈধ পারিতোষিক গ্রহণ করে তা দলীয় বা ব্যক্তিগত ব্যবহারে আত্মসাৎ করার পূর্বপরিকল্পনায় সূচনা ফাউন্ডেশন নামীয় প্রতিষ্ঠানের অধীনে ১৪টি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। ওই ব্যাংক হিসাবে জমা ও উত্তোলনের মাধ্যমে মোট ৯৩০ কোটি ৯৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৫৯ টাকার লেনদেন করে মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ করেছেন আসামিরা।

** ৪৪৭ কোটি টাকার গরমিল সূচনা ফাউন্ডেশনে
** পুতুলের ফাউন্ডেশনে ২৬৩ কোটি টাকার লেনদেন
** পুতুলের ফাউন্ডেশনের কর অব্যাহতি বাতিল
** পুতুলের ফাউন্ডেশনে অনুদান দিতো এস আলম ও বেক্সিমকো
** পুতুল ও জয়ের দুই প্রতিষ্ঠানের কর নথি চায় দুদক
** পুতুলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ, তথ্য দিতে বাধা

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!