৩৯ করদাতার আয়কর ‘প্রধান সহকারীর’ পকেটে

করদাতাদের থেকে আয়কর আদায় করা হয়েছে। তাও আবার এক বা দুইজন নয়—৩৯ জন করদাতা। আদায় করা সেই আয়কর মেরে দিয়েছেন সার্কেলের প্রধান সহকারী। করের টাকা আত্মসাৎ করেই ক্ষান্ত হননি। সেই টাকা জায়েজ করতে ‘জাল চালান’ তৈরির আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। বানানো হয়েছে জাল চালান। কর অঞ্চলের অধীন একটি সার্কেলের প্রধান সহকারী মূল দায়িত্বে থাকেন। সে হিসেবে করদাতাদের দেওয়া আয়কর প্রধান সহকারীর কাছে রাষ্ট্রের আমানত। সেই আমানত তিনি রক্ষা না করে পকেটস্থ করেছেন। অর্থাৎ রক্ষক বক্ষক হয়ে গেছেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি—করের টাকা আত্মসাৎ ও জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সেই প্রধান সহকারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশাল কর অঞ্চলে। ওই কর অঞ্চলের আওতাধীন সার্কেল-১৯ (গলাচিপা) এর প্রধান সহকারী মো. মুজাহিদুল ইসলাম। ১৮ ডিসেম্বর তাকে বরখাস্ত করে আদেশ জারি করা হয়েছে। বরখাস্ত করেন বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার সাধন কুমার।

বরিশাল কর অঞ্চল সূত্র জানিয়েছে, প্রধান সহকারী মো. মুজাহিদুল ইসলাম। তিনি বরিশাল কর অঞ্চলের আওতাধীন পটুয়াখালী জেলার সার্কেল-১৯ (গলাচিপা) কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি সার্কেল-১১ (ভোলা) কর্মরত রয়েছেন। সার্কেল-১৯ থাকাবস্থায় তিনি ৩৯ জন করদাতা থেকে আয়কর হিসেবে মোট ১ লাখ ৫৭ হাজার ২৫৫ টাকা নেন। এই টাকা তিনি নিয়ম বর্হিভূতভাবে নগদে গ্রহণ করে আত্মসাৎ করেন। এছাড়া করদাতাদের দেওয়া আয়করের ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৫৪১ টাকা আত্মসাৎ করেন। এই টাকা আত্মসাৎ করতে তিনি ৩৬টি জাল চালান তৈরি করেন। করদাতাদের দেওয়া মোট তিনি ৫ লাখ ২০ হাজার ৭৯৬ টাকা প্রধান সহকারী জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। অথচ আয়কর বাবদ করদাতাদের দেওয়া এই টাকা তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার কথা। অভিযোগ পাওয়ার পর চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি সার্কেল থেকে মো. মুজাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ২ (খ) অনুযায়ী এই মামলা দায়ের করা হয়।
6767d9ecc0dc0251808711 page 001
সূত্র আরও জানায়, মামলা করার পর অভিযোগনামা বরিশাল কর অঞ্চলে পাঠানো হয়। সেই অনুযায়ী এই প্রধান সহকারীকে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়। একইসঙ্গে ব্যক্তিগত শুনানি নেয়া হয়। অভিযোগনামা অনুযায়ী মো. মুজাহিদুল ইসলাম জবাব দাখিল করেন। কারণ দর্শানো নোটিশে তিনি করের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। শুনানিতে অংশ গ্রহণের অনুরোধ জানান। ৬ মার্চ ব্যক্তিগত শুনানি নেওয়া হয়। পরে বরিশাল কর অঞ্চল থেকে অভিযোগ তদন্তে অতিরিক্ত কর কমিশনার ও পরিদর্শী রেঞ্জ-১ এর মোহাম্মদ আমিরুল করিম মুন্সী তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তে ৩৯ জন করদাতার করের টাকা নগদে দিয়ে আত্মসাৎ এবং জাল চালান তৈরি করে করের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। পরে তদন্ত কর্মকর্তা এই কর্মচারীর বিরুদ্ধে কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১৮ ডিসেম্বর এই প্রধান সহকারীকে বরখাস্ত করা হয়। সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৪(৩) (ঘ) অনুযায়ী তাকে চাকরি হতে বরখাস্ত করা হয়। মো. মুজাহিদুল ইসলাম বর্তমানে সার্কেল-১১, ভোলায় প্রধান সহকারী হিসেবে কর্মরত রয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!