করদাতাকে শত কোটি টাকার কর সুবিধা দেয়া হবে। সেজন্য কর্মকর্তাকে কয়েক কোটি টাকা ঘুস দিতে হবে। দফারফা হওয়ার পর করদাতার প্রতিনিধি একজন আয়কর আইনজীবীর (আইটিপি) মাধ্যমে ৩৮ লাখ টাকা দিয়েছেন৷ যার বিনিময়ে করদাতার সব স্পর্শকাতর নথি সেই আইনজীবী সরবরাহ করেছেন সহকারী কর কমিশনার। ঘুস নিয়ে স্পর্শকাতর নথি সরবরাহ করায় সাময়িক বরখাস্ত হলেন সেই সহকারী কর কমিশনার। জান্নাতুল ফেরদৌস মিতু নামের সেই কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সই করা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কর অঞ্চল-৫, ঢাকার সহকারী কর কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌস মিতু। তিনি এই কর অঞ্চলের সার্কেল-৯৩ এর করদাতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ থেকে ৩৮ লাখ টাকা ঘুস নিয়েছেন। যার বিনিময়ে এই করদাতার মনোনীত প্রতিনিধিকে (আয়কর আইনজীবী বা আইটিপি) স্পর্শকাতর আয়কর নথির অধিকাংশ পূর্ববর্তী রেকর্ড সরবরাহ করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে পুরোনো আয়কর রিটার্ন, অর্ডার শিট, কর নির্ধারণী আদেশ, আপীল ও ট্রাইব্যুনালের আদেশ এবং অন্যান্য ডকুমেন্টসসমূহ। সেজন্য এই সহকারী কর কমিশনারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি-১২ অনুযায়ী সহকারী কর কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌস মিতুকে এনবিআরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগপূর্বক চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।
এনবিআরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, করদাতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ এসএ গ্রুপের কর্ণধার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএ পরিবহন। তিনি কর অঞ্চল-৫, সার্কেল-৯৩ এর করদাতা। এই করদাতার কাছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা কর বকেয়া রয়েছে। সার্কেলে অ্যাসেসমেন্ট, উপকর কমিশনারের কর নির্ধারণ, আপিল ও ট্রাইব্যুনালের রায় করদাতার বিপক্ষে গেছে। এরপরও তিনি কর পরিশোধ করেন না। তাঁর মনোনীত আয়কর আইনজীবী মো. ওবায়দুল হক সরকার। তাঁকে দিয়ে সার্কেল-৯৩ এর সহকারী কর কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌস মিতুর সঙ্গে প্রায় কোটি টাকা ঘুসের দফারফা হয়। ৩৮ লাখ টাকা দেওয়ার পর সহকারী কর এই আয়কর আইনজীবীকে করদাতার আয়কর সংক্রান্ত স্পর্শকাতর ফাইল (পুরোনো আয়কর রিটার্ন, অর্ডার শিট, কর নির্ধারণী আদেশ, আপীল ও ট্রাইব্যুনালের আদেশ এবং অন্যান্য ডকুমেন্টসসমূহ) দিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে। বিষয়টি এনবিআরের নজর আসার পর এনবিআরের একটি গোয়েন্দা সংস্থা তা যাচাই করে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নথিগুলো উদ্ধার করে। একইসঙ্গে সহকারী কর কমিশনারের ঘুস গ্রহণের প্রমাণও উদ্ধার করে। যার ভিত্তিতে সহকারী কর কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌস মিতুকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে ওই গোয়েন্দা সংস্থা আয়কর নথিগুলো খতিয়ে দেখা শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
** কর নথি গায়েব: উপকর কমিশনার বরখাস্ত
** নথি গায়েব করে ১৪৬ কোটি ফাঁকি, আসামি ৩ কর্মকর্তা
** কর্মকর্তা বদলিতে ১৪৬ কোটির কর হলো ‘শূন্য’, নথি গায়েব
** প্রতীক গ্রুপকে সুবিধা দিয়ে চাকরি হারালেন দুই কর্মকর্তা
** ‘একজন প্রবাসী শ্রমিক ৭৩১ কোটি টাকা এনে বলছেন এটা করমুক্ত’
** দুই কর কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসর
** তিন সদস্য ও এক কমিশনার বাধ্যতামূলক অবসরে
** সংযুক্তির ৭ দিন পরই কমিশনারকে অবসরে পাঠানো হলো