৩৩টি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের দাম কমেছে

সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) উৎপাদিত ৩৩টি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের দাম কমানো হয়েছে। প্রকারভেদে এসব ওষুধের মূল্য সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। তালিকায় রয়েছে অতিপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক, নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বর, উচ্চ রক্তচাপ, গ্যাস্ট্রিক আলসার, কৃমিনাশক, ব্যথানাশক, হাঁপানি ও ভিটামিনের ওষুধ। আগামী সপ্তাহে আরও পাঁচটি ওষুধের দাম কমতে পারে।

প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন শাখা থেকে পাওয়া নথি পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে। একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম ওষুধের দাম কমানো হলো। বর্তমানে ইডিসিএল প্রায় ১৪০ ধরনের ওষুধ উৎপাদন করে। ধাপে ধাপে সব ওষুধের দাম কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এতে সরকার সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ সংগ্রহ করতে পারবে এবং সরকারি হাসপাতালে রোগীরা আরও বেশি ওষুধ বিনামূল্যে পাবেন।

জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ইডিসিএল উৎপাদিত ওষুধের দাম কমানো একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এতে সরকারের উল্লেখযোগ্য অর্থ সাশ্রয় হবে। তাঁর মতে, উৎপাদন খরচ কম থাকলে ইডিসিএলের মতো বেসরকারি কোম্পানিগুলোরও দাম কমানো সম্ভব। সরকার যদি এভাবে দাম কমানোর ব্যবস্থা করতে পারে, তবে সাধারণ মানুষ এর সুফল পাবে।

এসেনসিয়াল ড্রাগসের ওষুধ নিবন্ধন খাতার তথ্য অনুযায়ী, অ্যাজমা বা হাঁপানি প্রতিরোধে ব্যবহৃত মন্টিলুকাস্ট ট্যাবলেটের দাম ১০ টাকা ৬৭ পয়সা থেকে কমিয়ে পাঁচ টাকা করা হয়েছে। পাকস্থলীর এসিড নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ওমিপ্রাজল ক্যাপসুলের দাম দুই টাকা ৭৫ পয়সা থেকে পাঁচ পয়সা কমে দাঁড়িয়েছে দুই টাকা ৭০ পয়সা। ব্যথা উপশমে ব্যবহৃত কেটোরোলাক ইনজেকশন ভায়ালের দাম ৩০ টাকা থেকে কমে ২৩ টাকা হয়েছে। ক্যান্সারের কেমোথেরাপিতে বমি প্রতিরোধী অনডানসেট্রন ইনজেকশন ভায়ালে কমেছে তিন টাকা। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে ব্যবহৃত সেফট্রিয়াক্সোন ইনজেকশনের দাম ১১৫ টাকা থেকে কমে ৯০ টাকা হয়েছে। নিউমোনিয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত সেফটাজিডিম ইনজেকশন ১৫০ টাকা থেকে কমে ১০০ টাকা হয়েছে। শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধী সেফট্রিয়াক্সোন ইনজেকশনের দাম ১৭৫ থেকে ১৬০ টাকায় নেমে এসেছে। সেফুরোক্সিম ইনজেকশনে কমেছে ১০ টাকা এবং গ্যাস্ট্রিক এসিড নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ইসোমিপ্রাজল ইনজেকশনের দামও ১০ টাকা কমেছে। মেরোপেনের দাম ৪৫০ টাকা থেকে কমে ৩৪৩ টাকা এবং ওমিপ্রাজল ইনজেকশনের দাম ৬৪ টাকা থেকে কমে ৫২ টাকা করা হয়েছে।

গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ক্লিনিক তালিকাভুক্ত ৩২টি ওষুধের মধ্যে ২২টির দাম কমানো হয়েছে। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ অ্যান্টাসিড ট্যাবলেটের দাম ৬৮ পয়সা, প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের দাম এক টাকা ১১ পয়সা এবং সালবিউটামল ট্যাবলেটের দাম ১৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃমিনাশক অ্যালবেনডাজল ট্যাবলেটের দাম এক টাকা কমেছে। ক্লোরামফেনিকল আই ড্রপ ও প্যারাসিটামল সাসপেনশনের দাম তিন টাকা করে কমানো হয়েছে। অ্যামলোডিপিন ট্যাবলেটের দাম দুই টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে দুই টাকা ৩১ পয়সা এবং মেটফর্মিন ট্যাবলেট তিন টাকা ২৫ পয়সা থেকে কমে দুই টাকা করা হয়েছে।

এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামাদ মৃধা জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও এসেনসিয়াল ড্রাগসের যৌথ উদ্যোগে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ক্রয় প্রক্রিয়ায় পূর্বের সিন্ডিকেট ভাঙার ফলে দরপত্রে বেশি সংখ্যক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করছেন, যার কারণে কাঁচামাল আগের তুলনায় সস্তায় কেনা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি কর্মঘণ্টা ও কর্মদক্ষতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলস্বরূপ গত বছরের তুলনায় ৫৯ কোটি টাকার বেশি ওষুধ উৎপাদিত হয়েছে এবং উৎপাদন খরচও ৩০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা কমেছে। ধাপে ধাপে ইডিসিএলের অন্যান্য ওষুধের দাম কমানোও সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ও ডেল্টা ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, সরকারি ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে বেসরকারি কোম্পানির তুলনা সম্ভব নয়। কারণ, ইডিসিএলে ওষুধের জন্য কোনো বিপণন ব্যয় থাকে না এবং নতুন ওষুধ ও কাঁচামাল উৎপাদন ও তৈরি করার খরচও থাকে না। তাদের ক্রেতা নির্দিষ্ট হওয়ায়, কাঁচামালের দাম কমায় ইডিসিএল ওষুধের দাম কমাতে পারলেও বেসরকারি কোম্পানিগুলো তা করতে পারবে না।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান জানান, ইডিসিএলকে আধুনিকায়ন ও কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে পুনর্গঠন করে শক্তিশালী করা হয়েছে। কর্মচারী সংখ্যা ৭০০ কমলেও প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এটি দৈনিক প্রায় ৭০ লাখ ট্যাবলেট উৎপাদন করছে, যার ফলে ওষুধ উৎপাদনের খরচ আগের তুলনায় কমেছে। পাশাপাশি, বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত ওষুধের দামও স্থিতিশীল রয়েছে বা কিছু ক্ষেত্রে কমেছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!