## ৫ মাসে ১৩টি বিল অব এন্ট্রিতে বন্ড সুবিধায় ৩০১ টন কাপড় আমদানি
## আমদানি করা কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরি করে রপ্তানি করার তথ্য নেই
## কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণের প্রমাণ পেয়েছে বন্ড কমিশনারেট
রাসেল মো. শাহেদ: শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা হয়েছে প্রায় ৩০১ টন কাপড়। ১৩টি বিল অব এন্ট্রিতে বন্ড সুবিধায় এই কাপড় আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু এই কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরি করা হয়নি। এমন কী পোশাক রপ্তানিও করা হয়নি। বন্ড কর্মকর্তারা পরিদর্শনে গিয়ে কোন কাপড় পায়নি। প্রতিষ্ঠান বলছে, রপ্তানি করা হয়েছে। কিন্তু রপ্তানির স্বপক্ষে কোন প্রমাণ দিতে পারেনি। শুল্কমুক্ত সুবিধার এই কাপড় অবৈধভাবে অপসারণ করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। যাতে প্রায় সাত কোটি টাকার শুল্ককর ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। এনবিআর সূত্রে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর উত্তরখান মাউছাইদ এলাকার পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান জে এফ কে ফ্যাশন লিমিটেডের বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ পায় ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানটি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে পোশাক তৈরি না করে অবৈধভাবে অপসারণের মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠে। ২০১৬ সালে বন্ড লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয় বন্ড কমিশনারেট। বন্ড কমিশনারেট প্রিভেন্টিভ টিম প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় প্রিভেন্টিভ টিমের সদস্যরা ১৩টি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে আমদানি করা তিন লাখ এক হাজার ৪০৪ কেজি বা ৩০১ টন বিভিন্ন ধরনের ফেব্রিক্স বা কাপড়ের মজুদ দেখাতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান। এসব কাপড় ২০২১ সালের নভেম্বরে দুইটি, ডিসেম্বরে দুইটি, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তিনটি, মার্চ মাসে তিনটি ও এপ্রিল মাসে তিনটি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে আমদানি করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কাপড়ের মজুদ দেখাতে ব্যর্থ হয়।
প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, এই কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরি করে রপ্তানি করা হয়েছে। সেই রপ্তানির ইউডি, মাস্টার এলসি, বিবিএলসি, বি/ই, শিপিং বিল সংশ্লিষ্ট বিএল, ইনভয়েস ও প্যাকিং লিস্ট দেখাতে বলা হলে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তা দেখাতে ব্যর্থ হন। এসব দলিলাদি ২৯ মে দাখিল করবেন বলে প্রিভেন্টিভ টিমের কাছে একটি বিবৃতি দেন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তিন মাস অতিবাহিত হলেও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ রপ্তানির স্বপক্ষে কোন দলিলাদি বা প্রমাণ দেখাতে পারেনি। প্রিভেন্টিভ টিমের কর্মকর্তাদের ধারণা করছেন, যেহেতু শুল্কমুক্ত সুবিধার কাপড় বন্ড গুদামে নেই, রপ্তানির কোন প্রমাণও নেই। সেহেতু প্রমাণিত হয় যে, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বন্ড সুবিধার করে শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে এসব কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণ করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। খোলাবাজারে বিক্রি করা এসব কাঁচামালের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ৮ কোটি ২২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৪৯ টাকা। যাতে প্রযোজ্য শুল্ককর ৭ কোটি ৩৬ লাখ ৫৬ হাজার ৪৫৫ টাকা।
অপরদিকে, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আরো অনিয়ম পেয়েছেন বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর একটি বিল অব এন্ট্রিতে শতভাগ পলিয়েস্টার সলিড ডাউড ওভেন ফেব্রিক্স আমদানি করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের বিল অব এন্ট্রির সংশ্লিষ্ট ইউডিতে শতভাগ নাইলন ৩১০-টি টাফেটা, ডাব্লিউ আর, ওয়েট ৬০-৬৫ জিএসএম নামের কাঁচামাল অনুমোদিত রয়েছে। ইউডিতে অনুমোদিত বর্ণনার সাথে বিল অব এন্ট্রিতে ঘোষিত কাঁচামালের বর্ণনার মিল না থাকায় ৩০ জুন প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়েছে। আমদানি করা এই কাঁচামালে প্রযোজ্য শুল্ককর ৫৭ লাখ ২২ হাজার ২৬৬ টাকা। এ ছাড়া বাকি ১২টি বিল অব এন্ট্রিতে আমদানি করা কাঁচামালের বিল অব এন্ট্রি আর ইউডিতে অনুমোদিত পণ্যের মিল না থাকায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থেকে আইসিডি কমলাপুর কাস্টম হাউস কমিশনারকে চিঠি দেয়া হয়েছে। বাকি ১২টি বিল অব এন্ট্রিতে আমদানি করা কাঁচামালের প্রযোজ্য শুল্ককর ৬ কোটি ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার ১৮৮ টাকা। এই শুল্ককর পরিশোধে প্রতিষ্ঠানকে দাবিনামা সম্বলিত কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়েছে। ২ আগস্ট এই নোটিশ জারি করা হয়। লিখিত ব্যাখ্যা দিতে প্রতিষ্ঠানকে ৩০ দিনের সময় দেয়া হয়েছে। জবাব না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই বিষয়ে জেএফকে ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কফিল উদ্দিন আহমেদ কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রির প্রশ্নই আসে না। আমি প্রতি মাসে ৩ থেকে ৫ মিলিয়নের পণ্য রপ্তানি করি। আমি কোন ভাড়া বাড়িতে নয়, আমার নিজস্ব জায়গায় বিশাল ফ্যাক্টরি। আমাদের চলমান ব্যবসা-বাণিজ্য।’বন্ড কমিশনারেটের প্রিভেন্টিভ দল ফ্যাক্টরিতে কোন কাঁচামাল বা পণ্য পায়নি। রপ্তানির স্বপক্ষে আপনারা কোন কাগজ দেখাতে পারেননি-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ফ্যাক্টরিতে তো সব ডকুমেন্ট থাকে না। রপ্তানির সব ডকুমেন্ট আমাদের কাছে রয়েছে।’সময় দেয়া হলেও কাগজ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা সব কাগজ দিয়েছি।’শুল্ককর ফাঁকির অভিযোগে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়েছে। আপনারা কাঁচামাল বাইরে বিক্রি করে শুল্ককর ফাঁকি দিয়েছেন কিনা-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ফাঁকির প্রশ্নই উঠে না। আমরা কোন নোটিশ পাইনি।’
###