## মোট নিবন্ধিত ৭৯,০৬,৯২৬ ই-টিআইএন এর ৩৪.২৩% ইনক্টিভ বা নিষ্ক্রিয়
## মোট নিবন্ধিত ই-টিআইএন এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছর ৩১.৫৮% রিটার্ন দিয়েছে
## নিষ্ক্রিয় ই-টিআইএন বছরের পর বছর বাতিল হচ্ছে না, সিস্টেমে বাতিল করার সুযোগ নেই
বেসরকারি চাকরিজীবী হাফিজুল ইসলাম। ই-টিআইএন নিয়ে নিয়মিত রিটার্ন দাখিল করেন। ২০১৮ সালে স্ত্রী রোকেয়া ইসলামের নামে একটি ই-টিআইএন নিয়েছেন, কিন্তু রিটার্ন দাখিল করেননি। ২০২০ সালে স্ত্রী মারা গেছেন। মালেশিয়া প্রবাসী হারুনুর রশিদ। বিদেশ যাওয়ার আগে একটি জমি বিক্রয় করতে ই-টিআইএন নেন, কিন্তু রিটার্ন দেননি। ব্যাংক কর্মকর্তা প্রদীপ দত্ত নিয়মিত রিটার্ন দাখিল করতেন। দুই বছর আগে তিনি মারা গেছেন। কিন্তু তার ই-টিআইএন নিষ্ক্রিয় ও কর ফাইল বাতিল করা হয়নি। রোকেয়া ইসলাম, হারুনুর রশিদ বা প্রদীপ দত্ত নয়-এমন লাখ লাখ নিষ্ক্রিয় করদাতা বা ই-টিআইএনধারী কর অঞ্চলগুলোর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই জমি ক্রয়-বিক্রয়, গাড়ি কেনা, ব্যাংক হিসাব খোলাসহ বিভিন্ন সেবা নিতে ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর রিটার্ন দাখিল করেননি।
আবার অনেকেই মারা গেছেন, কেউ আবার বিদেশ চলে গেছেন। কিন্তু এসব ই-টিআইএন সিস্টেম থেকে বাতিল করা হয়নি। এদের কারো কারো নামে থাকা কর ফাইলও বাতিল করা হয়নি। নিষ্ক্রিয় বা অকেজো এমন নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ লাখ। যেখানে বর্তমানে নিবন্ধিত ই-টিআইএন সংখ্যা প্রায় ৭৯ লাখ। অর্থাৎ নিবন্ধিত ই-টিআইএনধারীর প্রায় ৩৪ দশমিক ২৩ শতাংশ নিষ্ক্রিয়। অপরদিকে, বিদায়ী ২০২১-২২ করবর্ষে রিটার্ন দাখিল হয়েছে ২৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩১৫। এর মধ্যে ব্যক্তি শ্রেণির ২৪ লাখ ৮৬০ ও কোম্পানি ২৯ হাজার ৭৮৫টি। নিবন্ধিত ই-টিআইএন হিসেবে বিদায়ী করবর্ষে রিটার্ন দাখিলের হার ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ। কর অঞ্চলগুলো বলছে, নিষ্ক্রিয় বা ইনক্টিভ এসব ই-টিআইএন বাতিল করতে। ই-টিআইএন এর সঙ্গে রিটার্ন দাখিলের পার্থক্য নিয়ে বিভিন্ন মহল প্রশ্ন তোলে। তবে এনবিআর বলছে, ই-টিআইএন সার্ভারে নিবন্ধিন বাতিল করার কোন অপশন বা সুযোগ রাখা হয়নি।
এনবিআর সূত্রমতে, ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বর্তমান ই-টিআইএনকে বলা হতো জিআইআর (জেনারেল ইনডেক্স রেজিস্ট্রেশন)। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে রেজিস্টার বইয়ে করদাতার নাম ও তথ্য নিবন্ধন করা হতো। এতে যে নাম্বার পড়তো সেটাই হতো করদাতার নাম্বার। কোন কারণে করদাতা ইনক্টিভ হয়ে গেলে যাচাই করে সেই নাম্বার বন্ধ করে দেয়া হতো। ১৯৯৩ সালে টিআইএন (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) চালু করা হয়। ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ই-টিআইএন (ইলেকট্রনিক ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) চালু করা হয়। এরপর থেকে ইনক্টিভ টিআইএন আর নিষ্ক্রিয় বা বাতিল করা হচ্ছে না।
সূত্র আরও জানায়, সচল ই-টিআইএন ও রিটার্ন এবং নিষ্ক্রিয় বা অকেজো ই-টিআইএন ও কর ফাইল জানতে কর অঞ্চলগুলোকে চিঠি দেয় এনবিআর। কর অঞ্চলগুলো নিবন্ধিত করদাতা, চালু নথি ও নথিস্থ মামলার সংখ্যা এনবিআর পাঠায়। কর অঞ্চলগুলোর হিসাব অনুযায়ী, নিষ্ক্রিয় বা ইনক্টিভ ই-টিআইএন বা কর ফাইলের সংখ্যা দাঁড়িয়ে প্রায় ২৭ লাখ। ই-টিআইএনধারী বা নিষ্ক্রিয় এসব করদাতা হয়ত বিদেশ চলে গেছেন, কেউ মারা গেছেন। আবার কেউ কোন প্রয়োজনে ই-টিআইএন নিয়ে আর রিটার্ন দাখিল করেনি। কিন্তু এসব ই-টিআইএন বা কর ফাইল বন্ধ করা হয়নি।
এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত নিবন্ধিত ই-টিআইএন সংখ্যা ৭৯ লাখ ৬ হাজার ৯২৬। এর মধ্যে কোম্পানি এক লাখ ৬৮ হাজার ৬২৮টি, ব্যক্তি ৭৭ লাখ ৩৮ হাজার ২৯৮ জন। তবে এপ্রিল পর্যন্ত ব্যক্তি নিবন্ধন ছিলো ৭২ লাখ ৪০ হাজার ৯১০টি, আর কোম্পানি ছিলো ১ লাখ ৮১ হাজার ১৮৪টি। এরমধ্যে চালু নথির সংখ্যা ছিলো ৩৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭১০টি, কোম্পানি ছিলো ৮১ হাজার ১৮৪টি। অপরদিকে, এপ্রিল পর্যন্ত নথিস্থ (ই-টিআইএন ও কর ফাইল নিষ্ক্রিয়) মামলার সংখ্যা ছিলো ২৭ লাখ ৬ হাজার ৪০৭টি। এর মধ্যে কোম্পানি ৭২ হাজার ৭২৪টি আর ব্যক্তি ২৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৩ জন। অর্থাৎ ২৭ লাখ ৬ হাজার ৪০৭টি ই-টিআইএন ইন-এক্টিভ বা অকেজো অবস্থায় রয়েছে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছে ৭৯ লাখ ৮৮ হাজার ৮২৫টি। যেখানে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত ছিলো ৬৫ লাখ ৫০ হাজার ৮৬৪। অর্থাৎ একবছরে করদাতা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৯৬১ বা ১৮ শতাংশ।
কর অঞ্চলভিত্তিক অকেজো বা নথিস্থ মামলার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বৃহৎ করদাতা ইউনিটে কোম্পানি ব্যতীত ৪১টি ও কোম্পানি ১৩টি; কর অঞ্চল-১, ঢাকার কোম্পানি ব্যতীত ৪৭ হাজার ৬৬৮টি ও কোম্পানি ৯ হাজার ৭৯৬টি; কর অঞ্চল-২, ঢাকার কোম্পানি ব্যতীত ২৩ হাজার ৪৫৭টি ও কোম্পানি ৩ হাজার ৮৪২টি; কর অঞ্চল-৩, ঢাকার কোম্পানি ব্যতীত ২ লাখ ২২ হাজার ৬২২টি ও কোম্পানি ৮ হাজার ১০২টি; কর অঞ্চল-৪, ঢাকার ৫৭ হাজার ২১৪টি ও কোম্পানি ৭ হাজার ৯৫৯টি; কর অঞ্চল-৫, ঢাকার কোম্পানি ব্যতীত ৩৪ হাজার ১৩২টি ও কোম্পানি ৪ হাজার ৫৬৭টি; কর অঞ্চল-৬, ঢাকার কোম্পানি ব্যতীত ২৫ হাজার ৫৩৩টি ও কোম্পানি ৪ হাজার ৪১০টি; কর অঞ্চল-৭, ঢাকার কোম্পানি ব্যতীত ২৪ হাজার ৩৭২টি ও কোম্পানি ৩ হাজার ১৩৩টি; কর অঞ্চল-৮, ঢাকার কোম্পানি ব্যতীত ৪৩ হাজার ৭৬৫টি ও কোম্পানি ২ হাজার ১২০টি; কর অঞ্চল-৯, ঢাকার কোম্পানি ব্যতীত ২২ হাজার ৪৮৬ ও কোম্পানি ৪ হাজার ৪২টি; কর অঞ্চল-১০ কোম্পানি ব্যতীত ৯৮ হাজার ২৭৫ ও কোম্পানি ৪ হাজার ৪০৯; কর অঞ্চল-১১ কোম্পানি ব্যতীত ৬৬ হাজার ৬৪২ ও কোম্পানি ১ হাজার ৩১৫; কর অঞ্চল-১২ কোম্পানি ব্যতীত এক লাখ ৬৫ হাজার ৩১৯ ও কোম্পানি ৩০৮; কর অঞ্চল-১৩ কোম্পানি ব্যতীত ৪৫ হাজার ১৩৩ ও কোম্পানি ৭৫৪; কর অঞ্চল-১৪ কোম্পানি ব্যতীত ৩৭ হাজার ৭৩৭ ও কোম্পানি ২ হাজার ৮৪২; কর অঞ্চল-১৫ কোম্পানি ব্যতীত ৩১ হাজার ৫৮০ ও কোম্পানি ৪ হাজার ৭৭৭।
অপরদিকে, কেন্দ্রীয় জরিপ অঞ্চল কোম্পানি এক হাজার ৫৩৮; কর অঞ্চল-১, চট্টগ্রাম কোম্পানি ব্যতীত ৪২ হাজার ৮৩৮ ও কোম্পানি ৯৪৯; কর অঞ্চল-২, চট্টগ্রাম কোম্পানি ব্যতীত ৬৯ হাজার ৪৬৯ ও কোম্পানি এক হাজার ৭৫; কর অঞ্চল-৩, চট্টগ্রাম ৮৯ হাজার ৮০৫ ও কোম্পানি এক হাজার ৮১৭; কর অঞ্চল-৪, চট্টগ্রাম কোম্পানি ব্যতীত ৯৫ হাজার ১৮০ ও কোম্পানি এক হাজার ৮৮১; কর অঞ্চল খুলনা কোম্পানি ব্যতীত এক লাখ ৭৪ হাজার ৫০৬ ও কোম্পানি এক হাজার ২৮১; কর অঞ্চল রাজশাহী কোম্পানি ব্যতীত ২ লাখ ২৭ হাজার ২৪৫ ও কোম্পানি এক হাজার ৫০; কর অঞ্চল রংপুর কোম্পানি ব্যতীত ৪৭ হাজার ৮২৫ ও কোম্পানি ১৬; কর অঞ্চল বরিশাল কোম্পানি ব্যতীত ১ লাখ ২২ হাজার ২০৭ ও কোম্পানি ৭৫; কর অঞ্চল সিলেট এক লাখ ১২ হাজার ৮৭২ ও কোম্পানি ২৮৭; কর অঞ্চল নারায়নগঞ্জ কোম্পানি ব্যতীত এক লাখ ৪৯ হাজার ৬৫১ ও কোম্পানি এক হাজার ৪০৩; কর অঞ্চল গাজীপুর কোম্পানি এক লাখ ২৩ হাজার ৮২০ ও কোম্পানি ১২; কর অঞ্চল কুমিল্লা কোম্পানি ব্যতীত দুই লাখ ৪৫ হাজার ৭৫৮ ও কোম্পানি ৩১১; কর অঞ্চল ময়মনসিংহ কোম্পানি ব্যতীত ৮২ হাজার ৯০০; কর অঞ্চল বগুড়া কোম্পানি ব্যতীত এক লাখ ২ হাজার ৯৩ ও কোম্পানি ১৭৮।
একাধিক কর কমিশনার জানিয়েছেন, যে ঠিকানায় ই-টিআইএন নেয়া হয়েছে, সেখানে চিঠি পাঠালে ফেরত আসে। আবার অনেক করদাতা মারা গেছেন, কেউ বিদেশ চলে গেছেন, কেউ কোন কাজে ই-টিআইএন নিয়ে আর রিটার্ন দেয়নি। এভাবে ই-টিআইএন সংখ্যা বেড়ে গেছে। এনবিআর উদ্যোগ নিয়ে সিস্টেম থেকে অকেজো এসব ই-টিআইএন বাতিল করতে পারবে।
###