২৫ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির সিগারেট-ব্যান্ডরোল উদ্ধার

যৌথবাহিনীর অভিযান

কিশোরগঞ্জে দুইটি সিগারেট কোম্পানির ফ্যাক্টরিতে অভিযান পরিচালনা করেছে যৌথবাহিনী। এসময় দুইটি ফ্যাক্টরি থেকে প্রায় ২৫ কোটি টাকা শুল্ককর ফাঁকি দেওয়া নকল ও ব্যবহৃত ব্যান্ডরোল উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এই অভিযান হয়েছে। কোম্পানি দুইটি হলো—হেরিটেজ টোব্যাকো এবং ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মু’মেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, বুধকার সকাল ১০টার দিকে যৌথবাহিনীর (বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নরসিংদী ভ্যাট বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ, র্যাব) দুইটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দুইটি সিগারেট কোম্পানির ফ্যাক্টরিতে অভিযান পরিচালনা করেছে। দুইটি প্রতিষ্ঠান হলো—কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের হেরিটেজ টোবাকো এবং ভৈরবের তারা ইন্টারন্যাশনাল টোবাকো। অভিযানে হেরিটেজ টোবাকো হতে আসল ও নকল ব্যান্ডরোল মিশ্রিত নিম্নস্তরের এক লাখ ৬০ হাজার শলাকা সিগারেট এবং তারা টোবাকো হতে ১৩ লাখ ১৯ হাজার ৮২০ শলাকা আটক করা হয়। যার পণ্য মূল্য ৭৩ লাখ ৯৯ হাজার ১০০ টাকা। এতে জড়িত রাজস্ব ৫৬ লাখ ২৩ হাজার ৩১৬ টাকা। এই সিগারেটগুলো ইনভেন্ট্রির মাধ্যমে আসল ও নকল আলাদা করে বিভাগীয় মামলা দায়েরের কাজ চলমান রয়েছে।

Illigal Cigaratte 2

সৈয়দ এ মু’মেন আরো জানিয়েছেন, হেরিটেজ টোবাকো হতে ৪৭ হাজার পিস এবং তারা টোবাকো হতে ৫০ হাজার পিস নিম্নস্তরের পুনঃব্যবহৃত স্ট্যাম্প আটক করা হয়েছে। যার পণ্য মূল্য ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এতে জড়িত রাজস্ব ৩৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এসব পুনঃব্যবহৃত স্ট্যাম্পের জন্য মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ অনুযায়ী মূসক ফাঁকির মামলা দায়ের করা হচ্ছে।

নকল বা জাল সন্দেহে হেরিটেজ টোবাকো হতে উচ্চস্তরের ৬ লাখ ৭৫ হাজার পিস ও অতি উচ্চস্তরের ৪ লাখ ৫০ হাজার পিস স্ট্যাম্প এবং তারা টোবাকো হতে নকল বা জাল সন্দেহে ৩ হাজার পিস নিম্নস্তরের স্ট্যাম্প আটক করা হয়েছে। যার পণ্য মূল্য ৩০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এতে জড়িত রাজস্ব ২৪ কোটি ৯৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এসব স্ট্যাম্পসমূহ দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড, গাজীপুর হতে আসল বা নকলের সত্যতা যাচাই করে ফৌজদারি মামলা দায়েরের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। অর্থাৎ হেরিটেজ টোবাকো হতে আটক করাত সিগারেট, পুনঃব্যবহৃত স্ট্যাম্প ও জাল বা নকল সন্দেহে আটককৃত স্ট্যাম্পের পণ্য মূল্য ৩০ কোটি ৯১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এতে জড়িত রাজস্ব ২৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। আর তারা টোবাকো হতে আটক করা সিগারেট, পুনঃব্যবহৃত স্ট্যাম্প ও জাল বা নকল সন্দেহে আটক করা স্ট্যাম্পের পণ্য মূল্য ৯৩ লাখ ৯৯ হাজার ১০০ টাকা। এতে জড়িত রাজস্ব ৭১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৬ টাকা। মোট পণ্য মূল্য ৩১ কোটি ৮৫ লাখ ৪৯ হাজার ১০০ টাকা। এতে জড়িত রাজস্ব ২৫ কোটি ৮৯ লাখ ২৭ হাজার ৩১৬ টাকা। এ বিষয়ে বিভাগীয় মামলা দায়ের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সৈয়দ এ মু’মেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, কুলিয়ারচর বাজারে একটি বাদাম মিল রয়েছে। মিলটি অনেক পুরোনো। মিলটির ভেতরে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর মিলমালিক রফিকুল ইসলাম আরও কয়েকজনকে নিয়ে হ্যারিটেজ টোব্যাকো কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে পাঁচ ধরনের সিগারেট প্রস্তুত হয়। কোম্পানিটির সীমানাপ্রাচীর লাগোয়া তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান। এ কারণে জনস্বাস্থ্য নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সমাজ–সচেতন ব্যক্তিরা উদ্বিগ্ন ছিলেন। প্রায়ই তাঁরা বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আনতেন, কিন্তু প্রতিকার পেতেন না।

Illigal Cigaratte 3

চট্টগ্রাম কমিশনারেট সূত্রমতে, কক্সবাজারের চকোরিয়ায় ব্যান্ডরোলবিহীন রাজস্ব ফাঁকি দেয়া সিগারেট মজুদ ও বাজারজাত করা হচ্ছে বলে গোপন তথ্য পায় চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনার। এরই প্রেক্ষিতে ভ্যাট কমিশনারেটের উপকমিশনার (সদর দপ্তর) ও রাজস্ব কর্মকর্তার নেতৃত্বে চকোরিয়া উপজেলার ফুলতলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় একটি পরিত্যক্ত ভবনের দ্বিতীয় তলায় গোডাউনে মালিকবিহীন অবস্থায় মোট ৪১ মাস্টার কার্টুন সিগারেট আটক করা হয়। মালবোরো, টি-২০ ও ব্লাক ব্র্যান্ডের ৪ লাখ ১০ হাজার শলাকার এসব সিগারেট কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলায় অবস্থিত হেরিটেজ টোব্যাকোর উৎপাদিত। কিছু সিগারেটে ব্যান্ডরোলবিহীন ও কিছু সিগারেটে পূর্বে ব্যবহৃত ব্যান্ডরোল লাগানো হয়েছে। আটক করা এসব সিগারেটের আনুমানিক বাজার মূল্য ২১ লাখ টাকা। গোডাউনটি সিলগালা করা হয়েছে। এই বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

****

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!