** সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি তারেক, মহাসচিব সেহেলা, ৩০১ সদস্যের এডহক কমিটি গঠন
** চেয়ারম্যান বিভিন্ন সভায় ও বক্তব্যে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বৈধতা ও অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ
** অধ্যাদেশ সংশোধনের লক্ষ্যে গঠিত কমিটিতে ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত না করায় ক্ষোভ, প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি দাবি করা হয়েছে
** ঐক্য পরিষদ বলছে, এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে দায়িত্বে রেখে রাজস্ব সংস্কার সম্ভব নয়। তিনি এটি বাস্তবায়ন হতে দিবেন না বলে অভিযোগ
** ** ঐক্য পরিষদ আবারো এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি জানিয়েছে
** শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকা সত্ত্বেও রাজস্ব ভবন ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে উস্কানিমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে বলে ঐক্য পরিষদ অভিযোগ করেছে
** যে কোনো ধরনের প্রতিহিংসামূলক বদলি ও নিপীড়ন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে বলে জানিয়েছে এক্য পরিষদ
** ২৩ জুন ঢাকাস্থ সকল দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এনবিআরে অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি পালন করবেন; অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্ব-স্ব দপ্তরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি পালন করবেন
আন্দোলন স্থগিতের ২৮ দিন পর আবারো আন্দোলনে যাচ্ছেন এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ২৩ জুন সোমবার ঢাকাসহ সারাদেশে কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার (২১ জুন) আগারগাঁও এনবিআরের নিচে এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ এই কর্মসূচি ঘোষণা করে। ঐক্য পরিষদের অভিযোগ, এনবিআর চেয়ারম্যান বিভিন্ন সভা ও বক্তব্যে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন। এনবিআর চেয়ারম্যান থাকলে সংস্কার কার্যক্রমে বাঁধা তৈরি হতে পারে। সেজন্য আবারো চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি করা হয়েছে। একইসঙ্গে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকা সত্ত্বেও এনবিআরের আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে উস্কানিমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে এনবিআরের ইন্ধন রয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের মহাসচিব ও অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা বলেন, আজ ২১ জুন বিকাল ৫টায় রাজস্ব ভবনের নিচ তলার মেঝেতে ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অতিরিক্ত কমিশনার (কাস্টমস) হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদারকে সভাপতি ও অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকাকে মহাসচিব করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ৩০১ সদস্যের এডহক কমিটি গঠনের চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সভায় আমাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সামগ্রিক রাজস্ব সংস্কার ভাবনার অংশ হিসাবে ‘কেমন এনবিআর চাই’-শীর্ষক সেমিনার আয়োজনের জন্য ১৯ জুন একটি প্রস্তুতিমূলক সভা আয়োজনের জন্য কক্ষ বরাদ্দ চেয়ে লিখিত চিঠি দেওয়ার পরও কক্ষ বরাদ্দ প্রদান না করায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়। ফলে রাজস্ব ভবনের নিচ তলার মেঝেতে সভাটি করা হয়। গত ২ জুনও একইভাবে কক্ষ বরাদ্দ প্রদান না করায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব ভবনের নিচ তলার মেঝেতে সভা করে ‘কেমন এনবিআর চাই’-শীর্ষক সেমিনার আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ২৫ মে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে সরকার এনবিআর বিলুপ্ত না করে বরং এটিকে সরকারের একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগের মর্যাদায় আরও শক্তিশালী করা, রাজস্ব নীতি প্রণয়ণের লক্ষ্যে আলাদা একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গঠন করা। এবং প্রয়োজনীয় সকল সংশোধনের পূর্ব পর্যন্ত জারি করা অধ্যাদেশটি কার্যকর করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তের আলোকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ, সিভিল সোসাইটি, থিংক ট্যাংক, ব্যবসায়ী সংগঠন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে দিনব্যাপী ‘কেমন এনবিআর চাই’-শীর্ষক এক সেমিনার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এনবিআরের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনো সহযোগিতা তো করা হচ্ছে-ই না, বরং সেমিনার আয়োজনের লক্ষ্যে অফিস সময়ের পর প্রস্তুতিমূলক সভা আয়োজনের জন্য কক্ষ বরাদ্দ চেয়ে লিখিত চিঠি দেওয়ার পরও কক্ষ বরাদ্দ প্রদান করা হয়নি। এমনকি অফিস সময়ের পর অধ্যাদেশ সংশোধনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদকে তাদের মতামত প্রস্তুতের লক্ষ্যে কোনো ধরনের সভা করার জন্যও কক্ষ বরাদ্দ দিতে নিষেধ করা হয়েছে বলে ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
মহাসচিব বলেন, ‘গত ১৯ জুন রাজস্ব অধ্যাদেশ সংশোধনের লক্ষ্যে এনবিআরের কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের ছয়জন সদস্য সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, এই কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এমনকি তাদের সাথে কোনোরূপ আলোচনাও করা হয়নি। আবার এনবিআর চেয়ারম্যান বিভিন্ন সভায় ও বক্তব্যে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বৈধতা ও অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। যদিও অর্থ উপদেষ্টা এই ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিদের সাথেই আলোচনায় বসেছিলেন এবং এর প্রেক্ষিতে ২৫ মে সরকারের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নাম দুই-দুই বার উল্লেখ করা হয়েছে।’
ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে শঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, ‘যে রাজস্ব অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে এতদিন কর্মসূচি চলেছে-তা জারি হওয়ার পর যে বা যারা একে স্বাগত জানিয়ে পত্রিকায় ও ফেসবুকে বক্তব্য দিয়েছিলেন, এনবিআরের তেমন সদস্যদেরকেও গঠিত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এ থেকে স্পষ্ট যে, রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারে সরকারের সদিচ্ছাকে এসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রশ্নের সম্মুখীন করা হচ্ছে। সংস্কার বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত করে সামগ্রিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করা হয়।’
ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার বলেন, ‘এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে দায়িত্বে রেখে রাজস্ব সংস্কার সম্ভব নয়। কারণ তিনি এটি বাস্তবায়ন হতে দেবেন না। পলাতক আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী যে ৪৪ জন (এর মধ্যে ছয়জনকে ইতোমধ্যে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়েছে) আমলার তালিকা করা হয়েছে-তার মধ্যে এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান তিন নম্বর ক্রমিকে রয়েছেন। সুতরাং সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে তিনি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করবেন, এটাই বরং স্বাভাবিক। ইতোমধ্যে সংস্কার কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক বদলি ও নিপীড়নের খড়গ নেমে এসেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। আবার সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকা সত্ত্বেও রাজস্ব ভবন ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে উস্কানিমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।’
ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি, অবিলম্বে এনবিআরের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। তাঁর মাধ্যমে রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক কার্যক্রম সময়ক্ষেপণ বৈ কিছু নয় বলে ঐক্য পরিষদ মনে করে। পূর্ব থেকেই ঐক্য পরিষদ রাজস্ব ভবনে চেয়ারম্যানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। আমরা স্পষ্ট ঘোষণা দিতে চাই, এনবিআর কর্তৃক গঠিত কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। যে কোনো ধরনের প্রতিহিংসামূলক বদলি ও নিপীড়ন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।’
ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, অর্থবছরের শেষ মুহূর্তে রাজস্ব আহরণের গুরুত্ব বিবেচনায় এখনই কোনো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে না। আগামীকাল বাজেট পাসের কার্যক্রম থাকায় আগামী ২৩ জুন সোমবার ঢাকাস্থ সকল দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এনবিআরে অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি পালন করবেন। এছাড়া অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্ব-স্ব দপ্তরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি পালন করবেন। ২৩ জুন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে, ২২ জুন রোববার থেকে আগারগাঁও এনবিআর ও বিডার আশপাশে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের ক্ষেত্রে এনবিআরের ভূমিকা রয়েছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে ঐক্য পরিষদের সভাপতি বলেন, আমাদের আন্দোলনকে ব্যাহত করার জন্য বিভিন্ন নিপীড়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা ধরে নিচ্ছি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কেউ কেউ এটার সঙ্গে জড়িত থাকার সুযোগ আছে।
** রাজস্ব সংস্কার কী চাই, কেন চাই
** এনবিআর সংস্কার সমন্বয় করতে ছয় সদস্যের কমিটি
** কর্মবিরতি প্রত্যাহার, চেয়ারম্যানের অপসারণে অনড়