মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, গত বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত সংস্থাটির বাৎসরিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ১২৮ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৫৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ জন, খুলনা বিভাগে ১৪ জন, বরিশাল বিভাগে সাতজন, ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচজন, রংপুর বিভাগে পাঁচজন ও সিলেট বিভাগে চারজন নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিলেন ৫১ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। ২০২৪ সালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ১৪৭টি ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিগত বছরগুলোর মতো ২০২৪ সালেও সমতল ও পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই তংগোঝিরি এলাকায় গত ২৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে পূর্ব-বেতছড়াপাড়ার ১৭টি ত্রিপুরা পরিবারের ঘরবাড়িতে আগুন লাগে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণপিটুনিতে মো. মামুন নামের এক যুবক নিহত হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাহাড়ি বাঙালির মধ্যে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সংঘর্ষ শুরু হয় পাহাড়ি বাঙালির মধ্যে। এ ঘটনায় চারজন নিহত হন ও ৫০ জন আহত হন।
আদিবাসীদের ওপর হামলার প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের পতনের পর তিন দিনে উত্তরাঞ্চলে আদিবাসীর ওপর হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে। গত ৫ আগস্ট দুপুর থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন জেলায় আদিবাসীদের প্রায় ৭০টি পরিবারের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। বিশেষ করে দিনাজপুরের ছয়টি উপজেলায় আদিবাসীদের ওপর হামলা হয়।
গণ–অভ্যুত্থানে নিহত ৮৫৮
আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মোট ৮৫৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১১ হাজার ৫৫১ জন। পত্রিকায় প্রকাশিত সূত্রে আসক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১১ জন নারী এবং ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু–কিশোর রয়েছে ১২৯ জন। জুলাই অভ্যুত্থানে বিশেষত নিজ বাসায় গুলিতে শিশুদের মৃত্যুর ঘটনাগুলো অত্যন্ত মর্মান্তিক। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী রয়েছেন।