রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সৃষ্ট অস্থিরতায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অনেকটাই পিছিয়ে থাকলেও বড় বিনিয়োগে এগিয়ে যাচ্ছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। দেশের শীর্ষস্থানীয় এই শিল্পগোষ্ঠী ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে রপ্তানিমুখী প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করতে যাচ্ছে।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে আরএফএল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে নির্মিত হচ্ছে কারখানাটি। ইতিমধ্যে কারখানা ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেও এখনো যন্ত্রপাতি আমদানি হয়নি। তবে কারখানা চালুর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের একটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৬০ লাখ মার্কিন ডলার, অর্থাৎ ৭৩ কোটি ২০ লাখ টাকার প্লাস্টিক পণ্যের ক্রয়াদেশ পেয়েছে আরএফএল গ্রুপ। এমনটাই জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
নতুন এই কারখানার যন্ত্রপাতির জন্য বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্লাস্টিক মেশিনারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হাইতিয়ান গ্রুপের সঙ্গে আজ রোববার চুক্তির কথা রয়েছে। চলতি অর্থবছরের শেষ দিকে অর্থাৎ এপ্রিল-মে মাসে কারখানার উৎপাদন শুরু হবে। কারখানাটিতে বিভিন্ন ধরনের গৃহস্থালি পণ্য উৎপাদন হবে। পাশাপাশি খেলনা ও পোষা প্রাণীর প্রয়োজনীয় পণ্যও উৎপাদনে যাবে আরএফএল।
প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে দেড় যুগের অভিজ্ঞতা রয়েছে আরএফএলের। ২০০৭ সালে ভারতে গৃহস্থালি প্লাস্টিক পণ্য পাঠানোর মধ্য দিয়ে এই খাতে তাদের রপ্তানি শুরু। বর্তমানে বিশ্বের ৮০টি দেশে আরএফএলে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ কোটি ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করেছে গ্রুপটি।
আরএফএল গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (রপ্তানি) সালাহ উদ্দিন সিকদার বলেন, ‘আমরা এত দিন ইউরোপের বাজারে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করেছি। এখন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি উত্তর আমেরিকার বাজারের দিকে দৃষ্টি দিতে চাই। কারণ, বাজারটি অনেক বড়। তা ছাড়া সেখানকার মানুষ আমাদের মতো দীর্ঘ সময়ের জন্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করে না। স্বল্প সময় ব্যবহার করে আবার নতুন পণ্য কেনে।’
বাংলাদেশ থেকে দীর্ঘদিন ধরে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হলেও তা এখনো একটি সীমিত গণ্ডির মধ্যে রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৪ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রপ্তানি হয়েছে ১৮ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। আরএফএলের নতুন কারখানায় বছরে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন সম্ভব হবে। ক্রয়াদেশ থাকলে সমপরিমাণ পণ্য রপ্তানিও করা যাবে। কারখানাটি চালু হলে আড়াই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন আরএফএলের কর্মকর্তারা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘আমরা খুবই ইতিবাচক। সংকটের সময় আমরা কাজের গতি বাড়িয়ে দিই। এমন কৌশলে আমরা সফলতাও পেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘উত্তর আমেরিকায় প্লাস্টিক পণ্যের বাজারে চীনাদের রাজত্ব। তবে খরচ বেড়ে যাওয়ায় চীনারা এই ব্যবসা থেকে সরে আসছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধও নতুন মাত্রা পেয়েছে। ফলে প্লাস্টিকের ক্রয়াদেশ আশপাশের দেশে স্থানান্তরিত হবে। আমরা সেই সুযোগটি নিতে চাই।’
**সেন্টমার্টিনে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চাকরিমেলা
**নাটোরে আরও একটি শিল্পপার্ক করবে প্রাণ-আরএফএল
**৩ পণ্য দিয়ে শুরু, এখন বিক্রি ৯৫০
**প্রাণ গ্রুপের ২৫০ কর্মকর্তার একসঙ্গে ওমরাহ