সরবরাহ শৃঙ্খলা ব্যাহত হওয়া ও ব্যয় বৃদ্ধির শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আমদানির সময় আগে করমুক্ত থাকা প্রায় ২০০টি পণ্যে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপের পরিকল্পনা নিয়েছে। করছাড় ধাপে ধাপে তুলে নেওয়া এবং কর পরিপালন বাড়ানোর অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এনবিআর আশা করছে, এ ব্যবস্থা থেকে অতিরিক্ত ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে।
এই নতুন করের আওতায় আসতে যাচ্ছে পোশাক শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল—তুলা ও মানবসৃষ্ট তন্তু। একই সঙ্গে কর আরোপের তালিকায় রয়েছে আলু, পেঁয়াজ, মসুর ডাল, ছোলা, সয়াবিন, ভুট্টার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য, সার, অপরিশোধিত তেল, চিনি এবং বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম। এ ছাড়া কম্পিউটার প্রিন্টার, রাউটার, মডেম, বিমান ইঞ্জিন ও বাসসহ নানা ধরনের ইলেকট্রনিকস ও শিল্প যন্ত্রপাতিও এ করের প্রভাবের আওতায় পড়বে।
এনবিআরের দাবি, প্রস্তাবিত এই কর ব্যবস্থা কর পরিপালন বাড়াবে এবং রাজস্ব সংগ্রহের ভিত্তি আরও বিস্তৃত করবে। তবে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ভোক্তা অধিকারকর্মীরা এই উদ্যোগের বিরূপ প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে, মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়বে এবং অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শিল্প খাতগুলো আরও বিপাকে পড়বে।
এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় ২০০টি শুল্ক লাইনে আমদানির সময় কোনো এআইটি নেই। করছাড় ধাপে ধাপে তুলে নেওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা সম্ভবত এক বা দুটি ব্যতিক্রম বাদে এই প্রায় সব পণ্যের ওপর এআইটি আরোপ করতে যাচ্ছি।’ তিনি আরও জানান, এই সপ্তাহের শেষের দিকে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত তালিকা চূড়ান্ত হবে। ‘এই প্রস্তাব ইতোমধ্যে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।’
উদ্যোক্তারা বলছেন, কাগজে কর ফেরতের সুযোগ থাকলেও বাস্তবে তা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ফলে তাদের সামনে থাকে দুইটি বিকল্প—পণ্যের দাম বাড়ানো অথবা লোকসান মেনে নেওয়া। এনজেড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালেউদ জামান খান জিতু জানান, তার প্রতিষ্ঠানের ৩০০ কোটি টাকার কাঁচামালে ২ শতাংশ এআইটি বসলে অতিরিক্ত ৬ কোটি টাকা খরচ হবে, যা ব্যবসার স্থিতিশীলতার জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
প্রস্তাবিত এ কর সম্প্রসারণের আওতায় পড়ছে চিকিৎসা সরঞ্জাম, শিল্প কাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক, বিমান ও বাস, আমদানি করা মাছ-মাংস, নেটওয়ার্কিং ডিভাইস এবং প্রিন্টার সংশ্লিষ্ট উপকরণও। নীতিনির্ধারকদের মতে, শূন্য-কর সুবিধা ধাপে ধাপে তুলে নেওয়ার এই উদ্যোগের পেছনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর চাপ অন্যতম একটি কারণ।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ব্যবসায়ী নেতারা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছেন যেন অতিরিক্ত খরচের বোঝা শিল্পগুলোর ওপর চাপানো না হয় এবং বরং উন্নয়নমুখী নীতিতে আরও মনোযোগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) শওকত আজিজ রাসেল নির্মাতাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সহায়তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, টেকসই শিল্প সম্প্রসারণ শাস্তিমূলক করের চেয়ে অনেক বেশি কর্মসংস্থান ও রাজস্ব সৃষ্টি করবে।