আমদানি-রপ্তানি পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে নতুন শর্ত দেওয়া হয়েছে। পণ্য চালান শুল্কায়নের ক্ষেত্রে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সাতটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিট ইত্যাদি বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডোর (ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো) সিস্টেমের মাধ্যমে দাখিল করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কোনো ধরনের সনাতনী সার্টিফিকেট (ওইসব সংস্থার অনলাইনে আপলোড করা নয়) গ্রহণ করবে না শুল্ক কর্তৃপক্ষ।
ওই সাতটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), বিস্ফোরক অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ন্যাশনাল অথরিটি ফর কেমিক্যাল উইপনস কনভেনশন।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এই আদেশের আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রমে যেসব কাগজপত্র লাগে, তা ওই সব সংশ্লিষ্ট দপ্তর আমদানিকারক-রপ্তানিকারকদের সার্টিফিকেট, সনদ ইত্যাদি কাগজপত্র অনলাইন সিস্টেমে সংরক্ষণ করবে, যেন শুল্ক কর্মকর্তারা যাচাই–বাছাই করতে পারেন। আগামী ১ মার্চ থেকে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সংশ্লিষ্ট ১৯টি সংস্থার সব কটিই এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আসবে। অনলাইন সিস্টেম না করলে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা নিয়ে এনবিআরের এক অনুষ্ঠানে কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেমের উদ্বোধনের সময় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আগামী মার্চ থেকে সরকারি ১৯টি দপ্তরের লাইসেন্স–সংক্রান্ত সেবা কাগজপত্র দিয়ে করা যাবে না। সব অনলাইনে করতে হবে। অন্যথায় আমাদের হাতেও অস্ত্র আছে। অনলাইনে আবেদন না হলে আমাদের অর্থসচিব সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বরাদ্দ আটকে দেবেন।’
জানা গেছে, একজন আমদানিকারক-রপ্তানিকারক এখন থেকে সব রকমের সার্টিফিকেট, লাইসেন্স, পারমিট সংগ্রহ ও পণ্য চালান খালাসের জন্য কেবল একটি সিঙ্গেল অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দাখিল করতে পারবেন। দাখিলকৃত তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে ইস্যুকৃত সার্টিফিকেটের মাধ্যমে পণ্য চালান দ্রুততম সময়ে খালাস নিতে পারবেন। এতে সময় ও খরচ বাঁচবে। ২০১৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (টিএফএ) স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। চুক্তির ১০ দশমিক ৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সব সদস্যরাষ্ট্র সিঙ্গেল উইন্ডো স্থাপনের উদ্যোগ নেবে। এনবিআরের অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প হচ্ছে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্প। প্রকল্পটি শেষ হলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজতর হবে, ব্যবসায়ীদের ব্যয় কমবে ও বন্দরে পণ্য চালান খালাসের সময় কমে যাবে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা এবং শুল্ক ফাঁকি প্রতিরোধে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় ২০১৭ সালে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর। মূলত দুটি সিস্টেমের মাধ্যমে পুরো ব্যবস্থা সচল থাকবে। দুটি সিস্টেম হলো বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো (বিএসডব্লিউ) ও অ্যাডভান্সড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এআরএমএস)। আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক বিএসডব্লিউয়ের মাধ্যমে নিজের কাঙ্ক্ষিত সেবার আবেদন করবেন এবং এআরএমএসের মাধ্যমে ওই আবেদনকারী যেকোনো সহায়তা নিতে পারবেন।