১৫০ কোটি ডলারের আমদানি বাড়াবে বাংলাদেশ

পাল্টা শুল্ক কমানোর চেষ্টা

পাল্টা শুল্ক কমানোর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৫০ কোটি ডলার বা দেড় বিলিয়ন ডলার মূল্যের আমদানি বাড়ানোর আশ্বাস দেবে। সরকার আশা করছে, বাংলাদেশের ওপর পাল্টা শুল্ক অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের তুলনায় কম হবে। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রধান লক্ষ্য বাণিজ্য ঘাটতি কমানো। এই পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ধারণা, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে আমদানি তিন বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে।

বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমানোর লক্ষ্যে তৃতীয় দফার আলোচনার জন্য বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছে। দলটিতে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী। তারা ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন দিন আলোচনা করবেন। এ দফার আলোচনায় পারস্পরিক বাণিজ্য নিয়ে নতুন চুক্তি হতে পারে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৭০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যেখানে একই সময়ে দেশটি থেকে ২৭০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে সরকার আগামী কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা করছে। এছাড়া গত সপ্তাহে পাঁচ বছর মেয়াদে প্রতিবছর সাত লাখ টন গম আমদানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করা হয়েছে। এর পাশাপাশি এলএনজি, সামরিক সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানিও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ওয়াশিংটন যাওয়ার আগে গতকাল বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, বাংলাদেশ নতুন আমদানির পরিকল্পনা অনুযায়ী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি তিন বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ভিয়েতনাম ১২৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়েও পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার চুক্তি করেছে। তাদের পক্ষে কোনোভাবেই বাণিজ্য ঘাটতি ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি কমানো সম্ভব নয়। কিন্তু বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ মাত্র ছয় বিলিয়ন ডলার। আগামী এক থেকে দেড় বছরে ঘাটতি অনেক কমে যাবে। এ কারণে তারা আশা করছেন, বাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্কহার ভিয়েতনামের চেয়েও কম হবে।

তিনি আরও বলেন, তিন দিনের আলোচনায় সমঝোতার মাধ্যমে চুক্তি স্বাক্ষর করার পরিবেশ তৈরি হবে। চুক্তির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ইস্যু আছে কিনা– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাণিজ্য ইস্যু নয়। শুল্ককেই যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে দেখছে। অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে জাতীয় নিরাপত্তা হিসেবে উপস্থাপন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।দেশের ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল নিজ উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছে বলেও জানান সচিব। তিনি বলেন, তারাও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে দেশটি থেকে আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন। বিশেষ করে গম, তুলা, সয়াবিন কেনার বিষয়ে সে দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। হয়তো তারা চুক্তিও করবেন।

যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি দল

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, তুলা, সয়াবিন ও গম আমদানি বাড়ানোর লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ওয়াশিংটন যাবে। বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেলের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই দল যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কটন কাউন্সিলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবে। বাণিজ্য সচিব জানান, তিন বছর আগে বাংলাদেশ ১.৮ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করত; আগের মাত্রায় আমদানিতে এক বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া গম ও সয়াবিন আমদানি বাড়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আরও একাধিক বৈঠকের আয়োজন রয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সয়াবিন আমদানিকারক ব্যবসায়ীরাও অংশগ্রহণ করবেন। অন্য খাতের ব্যবসায়ীরাও যুক্তরাষ্ট্রে বা অনলাইনে সভায় অংশগ্রহণ করবেন।

**পাল্টা শুল্ক: ২৫ বোয়িং বিমান কিনবে বাংলাদেশ
**বোয়িং কেনার মাধ্যমে শুল্ক কমানোর চেষ্টা
**শুল্ক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা
**‘বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক কমাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র’
**বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের
**‘শুল্কের ব্যাপারে ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশন হবে’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!