১৪ দিনে ভারত গেল ২০ কোটি টাকার ইলিশ

দুর্গাপূজার আগে সরকার এবার ১২ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে, যা ৫ অক্টোবর পর্যন্ত বৈধ থাকবে। সোমবার পর্যন্ত ভারতে রপ্তানি হয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার কেজি ইলিশ, যার মাধ্যমে আয় হয়েছে ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ডলার বা প্রায় ২০ কোটি টাকা। এই তথ্য দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এ বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। সোমবার পর্যন্ত ১৬টি প্রতিষ্ঠানই ইলিশ রপ্তানি করেছে, অর্থাৎ ২১টি প্রতিষ্ঠান এখনও কোনো ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি। রপ্তানি হয়েছে বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে। এই দুটি স্থলবন্দর বন্ধ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে আরও রপ্তানির খুব বেশি সুযোগ নেই।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, এক দশকের মধ্যে ২০১৯ সালে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়। ওই বছর চার লাখ ৭৬ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়। রপ্তানি আয় হয় ৩৯ লাখ ডলার বা ৩৩ কোটি টাকা। গত সাত বছরে সবচেয়ে বেশি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই বছর ১৭ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়। এ সময়ে রপ্তানি আয় হয় এক কোটি ৩৪ লাখ ডলার বা ১৩৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এবারই ভারতে সবচেয়ে কম ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে।

এ বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পাওয়া ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি হল চট্টগ্রামের কালুরঘাটের প্যাসিফিক সি ফুডস। প্রতিষ্ঠানটি ৪০ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছিল, তবে তার সিংহভাগ রপ্তানি করতে পারেনি। জানতে চাইলে প্যাসিফিক সি ফুডসের পরিচালক আবদুল মান্নান বলেন, স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমতে পারে এমন আশা ছিল। কিন্তু দাম কমেনি, তাই মাত্র দেড় হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি করেছি, তাতেও লোকসান হয়েছে। দাম বেশি থাকায় আর রপ্তানি করছি না।তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমারের ইলিশ রপ্তানিমূল্য কম, ফলে ভারতের বাজারে মিয়ানমারের ইলিশ বিক্রি বেশি হচ্ছে।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ভারত বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে ইলিশ আমদানি করে। দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ইলিশ মিয়ানমার থেকে আমদানি করে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (এপ্রিল-মার্চ) ভারত মিয়ানমার থেকে সাড়ে ছয় লাখ কেজি ইলিশ আমদানি করেছে, যার গড় মূল্য ছিল ৬.২৩ ডলার প্রতি কেজি। একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা ইলিশের পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ ৪২ হাজার কেজি, গড় মূল্য ১০.৯৩ ডলার প্রতি কেজি।

কত দামে ইলিশ গেল

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবার সাড়ে ১২ ডলার বা এক হাজার ৫৩২ টাকা দরে ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য বেঁধে দিয়েছে। এর মানে হলো, এর চেয়ে কমে ইলিশ রপ্তানি করা যাবে না। তবে চাইলেই বেশি দামে রপ্তানি করা যাবে।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত ন্যূনতম মূল্যে ইলিশ রপ্তানি হয়ে আসছে। সাধারণত ন্যূনতম মূল্যের চেয়ে বেশি দামে রপ্তানির ঘটনা খুব কম ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, এ বছর রপ্তানি হওয়া ৪৫টি চালানের মধ্যে ৪৪টি চালান ন্যূনতম রপ্তানিমূল্যে, অর্থাৎ সাড়ে ১২ ডলারে রপ্তানি হয়েছে। কেবল একটি চালান ন্যূনতম মূল্যের চেয়ে বেশি দামে রপ্তানি হয়েছে, যা ভোলার চরফ্যাশনের রাফিদ এন্টারপ্রাইজ করেছে। তারা ৪২০ কেজি ইলিশ প্রতি কেজি ১৩.৬০ ডলারে রপ্তানি করেছে।

অনুমতির চেয়ে কম রপ্তানি

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি এবং এনবিআরের রপ্তানির হিসাব তুলনা করে দেখা গেছে, প্রতিবারই যে পরিমাণ ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়, বাস্তবে রপ্তানি হয় খুব কম। যেমন গত বছর ২৪ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলেও বাস্তবে রপ্তানি হয়েছে পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার কেজি ইলিশ। অর্থাৎ অনুমতির ২৩ শতাংশ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এবারও এখন পর্যন্ত অনুমতির ১১ শতাংশ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম সব সময় ওঠানামা করে। বেশি পরিমাণে রপ্তানি করার আশায় অনুমোদন নিয়ে থাকেন রপ্তানিকারকেরা। তবে সব সময় স্থানীয় বাজারে দরদাম বিবেচনা করে রপ্তানি করতে হয়। স্থানীয় বাজারের দাম বেশি থাকায় এবার অনুমতি পাওয়া পরিমাণের চেয়ে অনেক কম পরিমাণে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে।

** আকার অনুযায়ী ঠিক হবে ইলিশের দাম
** ভরা মৌসুমে ইলিশ আহরণ কমেছে ২৭%

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!