১২০০ কোটি কর ফাঁকিতে ৬০০ কোটি জরিমানা

আওয়ামী সরকারের সময় বিশেষ সুবিধা পাওয়া ইউনাইটেড গ্রুপ প্রায় ১,২০০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। এনবিআরের তদন্তে কর ফাঁকির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় গ্রুপটিকে অতিরিক্ত ৬০০ কোটি টাকা জরিমানাসহ মোট ১,৮০০ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া কর ও জরিমানা না দিলে গ্রুপটির সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ খাতে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ইউনাইটেড গ্রুপ সরকারের কাছ থেকে ১,২৬০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। একই সঙ্গে গ্রুপের চারজন পরিচালক ব্যক্তিগতভাবে আরও ৪০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছেন। এছাড়া কোম্পানিটি ১৪ কোটি টাকার কেপিটাল গেইন প্রকৃত হিসেবে থাকার পরও তা বাড়িয়ে ৩৮ কোটি টাকা দেখিয়েছে।

ইউনাইটেড গ্রুপের অধীনে রয়েছে সাতটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি। এগুলো হলো: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, ইউনাইটেড পায়রা পাওয়ার লিমিটেড, ইউনাইটেড আশুগঞ্জ এনার্জি লিমিটেড, ইউনাইটেড ময়মনসিংহ পাওয়ার লিমিটেড, ইউনাইটেড এনার্জি লিমিটেড, ইউনাইটেড আনোয়ারা পাওয়ার লিমিটেড এবং ইউনাইটেড জামালপুর পাওয়ার লিমিটেড। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র দীর্ঘদিন অলসভাবে বসিয়ে রেখে আগের সরকারের সহযোগিতায় ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ বাবদ আগেই ৭,৮৮০ কোটি টাকা আদায় করেছে গ্রুপটি। এর পরও নতুন করে আরও ১,২৬০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে তারা।

কর ফাঁকির অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউনাইটেড গ্রুপের পরিচালক কুতুবুদ্দিন আকতার রশিদ বলেন, বিদ্যুৎ খাত থেকে প্রাপ্ত সকল ধরনের আয় করমুক্ত, তাই কর আরোপের বিষয়টি অযৌক্তিক। তিনি দাবি করেন, আয়কর বিভাগ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন অভিযোগ তুলছে। সরকারের বিভিন্ন সময়ে জারি করা এসআরও অনুযায়ী, বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ থেকে পরবর্তী ১৫ বছর শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে অর্জিত আয় করমুক্ত থাকে। এই সুযোগকে কেন্দ্র করেই মূল সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড রাজস্ব ফাঁকিতে যুক্ত হয়েছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড পাওয়ার বিভিন্ন করবর্ষে শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করেছে। ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৭-১৮ করবর্ষ পর্যন্ত উৎসে আয়কর কর্তন করলেও ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৪-২৫ করবর্ষ পর্যন্ত তা ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ সময় সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশে কর কাটা হলেও নিজস্ব মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশে কর কর্তন করা হয়নি। এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মো. আব্দুর রাকিব জানান, কর ফাঁকির কারণে ইউনাইটেড গ্রুপকে ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত জরিমানা গুনতে হবে। ফলে মোট আদায়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ১,৮০০ কোটি টাকা।

রাজস্ব ফাঁকি ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা

ইউনাইটেড ময়মনসিংহ পাওয়ার লিমিটেড ২০১৯-২০ করবর্ষে ৮৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, ২০২০-২১ করবর্ষে ১৪৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, ২০২১-২২ করবর্ষে ১৬৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, ২০২২-২৩ করবর্ষে ২১৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, ২০২৩-২৪ করবর্ষে ২২৩ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং ২০২৪-২৫ করবর্ষে ৯১ কোটি ৮২ লাখ টাকা আয়কর ফাঁকি দিয়েছে। এই ছয় করবর্ষে মোট ফাঁকি দেওয়া করের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৩৭ কোটি ৮৮ লাখ ৭১ হাজার ৩১৯ টাকা।

চার পরিচালকের ফাঁকি ৪০ কোটি টাকা

গ্রুপের চারজন পরিচালক তাদের আয়কর নথিতে করমুক্ত আয় দেখিয়েছেন। তারা হলেন—মঈনুদ্দিন হাসান রশিদ, হাসান মাহমুদ রাজা, খন্দকার মঈনুল আহসান শামীম এবং ফরিদুর রহমান খান। এর মধ্যে মঈনুদ্দিন হাসান ২০১৭-১৮ করবর্ষে ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন। হাসান মাহমুদ ২০১৭-১৮ করবর্ষে ১২ কোটি ৭১ লাখ টাকা এবং ২০১৮-১৯ করবর্ষে ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন। খন্দকার মঈনুল আহসান ২০১৬-১৭ করবর্ষে ১২ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং ২০১৭-১৮ করবর্ষে ৪ কোটি ২ লাখ টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন। এছাড়া ফরিদুর রহমান ২০১৭-১৮ করবর্ষে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন। পরে এই কর ফাঁকির টাকা ঝুঁকি এড়াতে করযোগ্য লভ্যাংশ আয়ের ওপর করমুক্ত থাকার দাবি করে তারা রেফারেন্স মামলা করেন।

** হাসিনার লুটের সহযোগী ‘ইউনাইটেড গ্রুপ’
** ইউনাইটেড গ্রুপের ইউআইইউ’র ভ্যাট ফাঁকি
** ৯ মাসে ইউনাইটেড পাওয়ারের মুনাফা ১,১৩৫ কোটি
** ইউনাইটেডের কর ফাঁকি ১২৬০ কোটি টাকা
** সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের শেয়ার দখলে ইউনাইটেড
** ইউনাটেডের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘বিশেষ’ সুবিধা বাতিল

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!