** অজন্তা শিপিং লাইন্সের মালিক চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে লাইসেন্স নবায়ন করেনি, তাহলে নবায়ন করলো কে?
** আমদানি চালানের বেশিরভাগই উচ্চ শুল্কের পণ্য, খালাস হয়েছে রেয়াতি সুবিধার ৪০টি চালান
** মোংলা কাস্টম হাউসে অজন্তা শিপিং এর মূল লাইসেন্স বাতিল হলেও তার কোন ফাইল খুঁজে পাওয়া যায়নি
মোংলা কাস্টম হাউসে সিঅ্যান্ডএফ এর মূল লাইসেন্স। এই সিঅ্যান্ডএফ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে রেফারেন্স লাইসেন্স নেয়। মূল লাইসেন্সটি ২০১০ সালে মোংলা কাস্টম হাউস বাতিল করে দেয়। মূল লাইসেন্স বাতিল হলে রেফারেন্স লাইসেন্স অটো বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু হয়েছে উল্টো। রেফারেন্স লাইসেন্স বাতিল হওয়া তো দূরের কথা, এই লাইসেন্স দিয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৬৭১টি চালান খালাস হয়েছে। খালাস হওয়া পণ্যের বেশিরভাগ উচ্চ শুল্কের পণ্য। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে অজন্তা শিপিং লাইন্স নামের একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের ক্ষেত্রে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। অনুসন্ধান বলছে, হাউসের একটি চক্রের সহায়তায় এই লাইসেন্স দিয়ে বিপুল পরিমাণ উচ্চশুল্কের পণ্য নামমাত্র ঘোষণা দিয়ে খালাস করে নিয়ে গেছে। যাতে বিপুল পরিমাণ শুল্ককর ফাঁকি হতে পারে।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের স্বত্তাধিকারী মালিকের দাবি—২০১০ সালে মূল লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পর তিনি আর কোন ডকুমেন্টের কাজ করেননি। লাইসেন্স নবায়নও করেননি। লাইসেন্স নবায়ন করলো কে আর এই বিপুল পরিমাণ চালান খালাস করলো কে—এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মোংলা কাস্টম হাউসে এই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের ফাইল খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর ঘটনাটি জানাজানি হলে কোন অনুসন্ধান বা তদন্ত ছাড়াই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস তড়িঘড়ি করে ২০২২ সালে লাইসেন্সটি বাতিল করে দেয়। বাতিল লাইসেন্স দিয়ে অপকর্ম যারা করেছেন—তাদের খুঁজে বের করতে দুই কাস্টম হাউসের যৌথভাবে অনুসন্ধান করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ফাইন্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরকে একটি ‘অভিযোগ’ তদন্ত করতে চিঠি দেয়। অভিযোগে দেখা যায়, চট্টগ্রামভিত্তিক মেসার্স এস শিপিং লাইন নামে একটি প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে ‘বাণিজ্যিক জাহাজ’ আমদানির ঘোষণা দিয়ে দুইটি ‘স্ক্র্যাপ জাহাজ’ আমদানি করেছে। অর্থাৎ নতুন জাহাজ ঘোষণা দিয়ে পুরাতন জাহাজ আমদানির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করা হয়েছে। আর এই দুইটি জাহাজ শুল্কায়ন ও খালাসের দায়িত্বে ছিলো সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অজন্তা শিপিং লাইন্স। সিঅ্যান্ডএফ এর মালিক মো. শহিদ উল আলম। কাস্টমস গোয়েন্দা দুইটি জাহাজের তদন্ত করতে গিয়ে অজন্তা শিপিং লাইন্স এর বিষয়টি সামনে আসে। পরে অজন্তার তথ্য যাচাই করার পর মোংলা কাস্টম হাউসে মূল লাইসেন্স বাতিল, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রেফারেন্স লাইসেন্স সচল, বাতিল লাইসেন্স দিয়ে ৬৭১টি চালান খালাসের চাঞ্চল্যকর রহস্য উদ্ঘাটিত হয়। আর কাস্টমস গোয়েন্দা থেকে বিষয়টি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে অবহিত করার পর কাস্টম হাউসের ঘুম ভাঙ্গে। পরবর্তীতে লাইসেন্সটি তড়িঘড়ি করে বাতিল করা হয়।
অপরদিকে, কাস্টমস গোয়েন্দা মো. শহিদ উল আলমের বক্তব্য জানতে তাকে ডেকে পাঠায়। কাস্টমস গোয়েন্দায় হাজির হয়ে জানায়, দুইটি জাহাজ খালাসের কাজ তিনি করেননি। ২০১০ সালে মোংলায় মূল লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পর তিনি ব্যবসা বন্ধ করে দেন। এরপর থেকে আর কোন ডকুমেন্টের কাজ তিনি করেননি। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে তার লাইসেন্স দিয়ে ৬৭১টি চালান খালাসের সঙ্গে তিনি জড়িত নন।
অনুসন্ধান বলছে, ২০০১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে মেসার্স অজন্তা শিপিং লাইন্স এর নামে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট লাইসেন্স (রেফারেন্স লাইসেন্স, নং-২৯৬৬/০১, এআইএন নং-৩০১-০১২৯৬৬) ইস্যু করা হয়। আর মোংলা কাস্টম হাউস অজন্তা শিপিং লাইন্স এর নামে মূল লাইসেন্স ইস্যু করে। তবে মোংলা কাস্টম হাউস কবে মূল লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে তার কোন তথ্য মোংলা কাস্টম হাউস থেকে পাওয়া যায়নি। অ্যাসাইকুডার তথ্য বলছে, ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর অ্যাসাইকুডা সিস্টেম থেকে লাইসেন্সটির কার্যক্রম লক করেন উপকমিশনার নুরুন নাহার লিলি।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নথি বলছে, ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কাস্টম হাউস অজন্তা শিপিং লাইন্স এর লাইসেন্স বাতিল করে আদেশ জারি করে। আদেশে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি লাইসেন্স দেওয়ার পর ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত লাইসেন্সের মেয়াদ বলবৎ ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে নবায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করার ক্ষেত্রে মূল লাইসেন্সের নবায়নের হাল-নাগাদ কপি দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মূল লাইসেন্স মোংলা কাস্টম হাউসে নবায়ন না হওয়ায় বাতিল হওয়ার প্রেক্ষাপটে লাইসেন্সের স্বত্তাধিকারী এই দপ্তরের রেফারেন্স লাইসেন্সও স্বেচ্ছায় বাতিলের আবেদন করেছেন। লাইসেন্সের মূল স্টেশনের কার্যক্রম বাতিল হওয়ার প্রেক্ষিতে রেফারেন্স লাইসেন্সও বাতিল করা হলো। এই লাইন্সের কোন প্রকার দলিলপত্র গ্রহণ না করার জন্য সব কাস্টম হাউস, শুল্ক স্টেশন ও ভ্যাট কমিশনারেটকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।
অন্যদিকে, কাস্টমস গোয়েন্দার তৎপরতা দেখে সচল থাকা রেফারেন্স লাইসেন্সটি তড়িঘড়ি করে বন্ধের উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। মো. শহিদ উল আলমকে হাউস থেকে ডেকে পাঠানো হয়। তিনি কমিশনার বরাবর লাইসেন্সটি বাতিল করার জন্য একটি আবেদন দেন। যাতে তিনি উল্লেখ করেন, অজন্তা শিপিং লাইন্স এর ১০ বছর ধরে কোন কার্যক্রম নেই। কারণ ২০১০ সালে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের লাইসেন্সিং সেকশন হতে জানানো হয়েছে যে, আমার মূল লাইসেন্স মোংলা কাস্টম হাউস নবায়ন না হয়ে বাতিল হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রেফারেন্স লাইসেন্স নবায়ন করা সম্ভব নয়। আমাকে লাইসেন্সিং সেকশন থেকে ‘মৌখিকভাবে’ জানানোর পর আমি সব ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। ব্যবসা বন্ধ থাকায় আর্থিক, শারীরিক, মানসিকভাবে আমি বিপর্যস্ত। ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কাস্টমস গোয়েন্দার প্রধান কার্যালয়ে আমাকে হাজির হতে বলা হয়। হাজির হয়ে জানতে পারি, আমার লাইসেন্সটি দিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ৬৭১টি চালান খালাস হয়েছে। এতে আমি বিস্মিত হই এবং অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমি যেহেতু লাইসেন্স নবায়ন করিনি, কাজ করিনি। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা এবং লাইসেন্সটি বন্ধ করার অনুরোধ জানান।
অপরদিকে, মোংলা কাস্টম হাউসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অজন্তা শিপিং লাইন বাতিল হয়েছে কিনা—তা শিউর না। বাতিল করা হলেও হয়ত এআইএন লক করে দেওয়া হয়নি। দিলে তো পণ্য আমদানি করতে পারতো না। তবে ২০১০ সালে কি কারণে অজন্তার লাইসেন্স বাতিল হয়েছে তা জানা যায়নি। এই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের ফাইলও মোংলা কাস্টম হাউসে পাওয়া যায়নি।
একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, অজন্তা শিপিং লাইন লাইসেন্স দিয়ে দুই ব্যক্তি ডকুমেন্টের কাজ করেছেন। এর মধ্যে একজন হলেন-এনবিআরের কাস্টমস বিভাগের সাবেক একজন প্রভাবশালী সদস্যের কথিত ভাই। অপরজন হলেন-বর্তমানে কাস্টমস বিভাগের একজন কমিশনারের ভাই। তবে তদন্ত করলে বিষয়টি সামনে আসবে বলে মনে করেন একাধিক কর্মকর্তা।
মোংলা কাস্টম হাউসের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০১০ এর আগে ও পরে এই কাস্টম হাউস দিয়ে বহু অপকর্ম হয়েছে। কর্মকর্তাদের সহায়তায় অসাধু সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও ব্যবসায়ীরা রাজস্ব ফাঁকি দিতে নানান অপকর্ম করেছে। শুধু অপকর্ম করেই ক্ষান্ত হয়নি, তার সকল প্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে। যার ফলে অজন্তা শিপিং এজেন্টের লাইসেন্স কি কারণে বাতিল হয়েছে—তার কোন রেকর্ড হাউসে নেই।
অপরদিকে, মোংলা কাস্টম হাউসে কি কারণে বা কোন অপরাধের কারণে অজন্তা শিপিং লাইন্স এর লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে—তার কোন কারণ জানা যায়নি। মোংলা কাস্টম হাউসে এই প্রতিষ্ঠানের ফাইলও পাওয়া যায়নি। মোংলা কাস্টম হাউসের মূল লাইসেন্সের অধীনে প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে লাইসেন্স নিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, মোংলা কাস্টম হাউস ২০১০ সালে লাইসেন্স বাতিল করার সঙ্গে সঙ্গে সিস্টেম থেকে এআইএন লক করে দেওয়ার কথা। আবার মোংলা কাস্টম হাউস এই প্রতিষ্ঠানের মূল লাইসেন্স বাতিল করার পর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসসহ সব কাস্টম হাউস, শুল্ক স্টেশন ও সব ভ্যাট কমিশনারেটকে অবহিত করার কথা। অবহিত করা হয়েছে কিনা—তা জানা যায়নি। এমন কি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসেও এই সংক্রান্ত কোন নথি পাওয়া যায়নি। ফলে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স সচল ছিলো। শুধু সচলই নয়—এই লাইসেন্স দিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ৬৭১টি চালান খালাস নেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধান বলছে, এত চালান বের হয়ে যাওয়ার পরও চট্টগ্রাম বা মোংলা কাস্টম হাউসের কেউই লাইসেন্সটি সচল থাকার বিষয়ে জানতো না। বা জানলেও একটি চক্র এই লাইসেন্স দিয়ে পণ্য খালাস করেছে। এতে মিথ্যা ঘোষণা, ঘোষণার অতিরিক্ত বা নিষিদ্ধ কোন পণ্যও বের হয়ে গেছে কিনা—তা তদন্ত করলে বের হতে পারে। তবে কাস্টমস কর্মকর্তাদের সহায়তা ছাড়া বাতিল লাইসেন্স দিয়ে এমন কাজ করা সম্ভব নয়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এই লাইসেন্স দিয়ে কি কি অপকর্ম হচ্ছে—তা জানতো না। কাস্টমস গোয়েন্দার অনুসন্ধান শুরু করার পর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ঘুম ভাঙ্গে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মূল লাইসেন্স বাতিল হলে রেফারেন্স লাইসেন্সও বাতিল হবে। সারাদেশে সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স সিস্টেম অটোমেটেড না। যার ফলে ম্যানুপুলেশন করার খুবই সহজ। মোংলা কাস্টম হাউস দিয়ে লাইসেন্স বাতিল করে থাকে। তাহলে তারা বাতিলের সেই চিঠি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসসহ সব কাস্টম হাউস, শুল্ক স্টেশন ও ভ্যাট কমিশনারেটে দিয়েছে। এখন যদি দুষ্টমি করে বাতিলের সেই কাগজপত্র লুকিয়ে ফেলে—তাহলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের পক্ষে কোনভাবেই জানা সম্ভব নয় যে এই লাইসেন্সটি বাতিল হয়েছে। আমরা ৪-৫ বছর পর যখন লাইসেন্স রিভিউ করি নবায়নের সময়। নবায়নের সময় মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্র, আয়কর সনদসহ যাবতীয় কাগজপত্র নেয়া হয়।
অজন্তা শিপিং লাইন্স এর মালিককে ২০১০ সালে জানানো হয়েছে যে তার লাইসেন্স বাতিল। তাহলে লাইসেন্স নবায়ন হলো কিভাবে, কাজ করলো কারা—এমন প্রশ্নে বলেন, খোঁজ নিতে হবে কি কারণে বাতিল হয়েছে। যদি ২০১০ সালে লাইসেন্স বাতিল হয়, তাহলে ৩-৫ বছর পর নবায়নের সময় তো তাকে কাগজপত্র জমা দিতে হয়েছে। নবায়নের সময় কিন্তু তাকে আবেদন করতে হবে। সে সময় তার আয়কর সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, অ্যাসোসিয়েশনের অনাপত্তি থাকতে হবে। অন্যথায় তার নবায়ন হবে না। আমার মনে হয় মালিকের এই বিবৃতি সঠিক ছিলো না বলেই হয়ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এই লাইসেন্স বাতিল করেছে। আমি নিশ্চিত লাইসেন্স বাতিল করার আগে অনেক কিছুই দেখা হয়েছে।
অপরদিকে, এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে অজন্তা শিপিং লাইন্স এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. শহিদ উল আলম এর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে কয়েকদিন ধরে ফোন দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। লাইসেন্স নেওয়ার সময় যে মোবাইল ও ফোন নাম্বার দেওয়া ছিলো—তাও বন্ধ পাওয়া গেছে।
অপরদিকে, অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত (১০ বছর) অজন্তা শিপিং লাইন্স এর কার্যক্রম যাচাই করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ৬৭১টি চালানের বিল অব এন্ট্রি দাখিল, শুল্কায়ন ও খালাস করেছে। যার মধ্যে বেশির ভাগ উচ্চ শুল্কের পণ্যের চালান। তবে জালিয়াতি করে মিথ্যা ঘোষণায় অন্য পণ্য বের করেছে কিনা—তা অ্যাসাইকুডায় ‘ফুট প্রিন্ট’ যাচাই করে বের করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন একাধিক সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞ।
অ্যাসাইকুডা যাচাইয়ে দেখা গেছে, অজন্তা শিপিং লাইন এর লাইসেন্স দিয়ে ১০ বছরে ৬৭১টি চালানে প্রায় ৭১৬ কোটি টাকার পণ্য খালাস নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি চালান ‘রেয়াতি সুবিধায়’ খালাস করা হয়েছে। এর মধ্যে—সিপিসি ১২০ সুবিধায় (মূলধানী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানি) সাতটি, সিপিসি ১২১ সুবিধায় (মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানি, আগাম কর অব্যাহতি) দুইটি, সিপিসি ১৭৩ সুবিধায় (আগাম কর অব্যাহতি) ১৮টি, সিপিসি ১৭০ সুবিধায় দুইটি, সিপিসি ২২০ সুবিধায় ১০টি চালান খালাস নেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ পণ্য আমদানি হয়েছে চীন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও পাকিস্থান থেকে। আমদানি করা পণ্যের মধ্যে বেশিরভাগ পণ্যই উচ্চ শুল্কের। তবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশিরভাগ নামসর্বস প্রতিষ্ঠান। ফলে শুল্ককর ফাঁকির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি রয়েছে মর্মে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
আমদানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে—বিভিন্ন প্রকার প্রসাধনী, রূপ চর্চার সামগ্রী, শ্যাম্পু, বডি স্প্রে, বিভিন্ন প্রকার সুতা, কার্ড, টিস্যু পেপার, ফ্রোজেন ফিস, টয়লেটের কমোড, বেসিন, ফ্যাক্স মেশিন, ফটোকপি মেশিন, কপি মেশিন, কম্পিউটার প্রিন্টার, স্ক্যানার, ওয়াটার ও রাইস কুকার, মাইক্রোওভেন, ওয়াশিং মেশিন, লুব ওয়েল, রেফ্রিজারেটর, সিসিটিভি, ডিভিডি, কম্পিউটার, জেনারেটিং সেট, আর্ট কার্ড, ডুপ্লেক্স বোর্ড, প্রিন্টিং কালি, টেক্সটাইল মেশিন, গুঁড়ো দুধ, কফি, ক্রিম ও লোশন, সাবান, কিচেন ভেন্টিলেটর, ইয়ার ফোন, ব্যাগ, জুয়েলারি সামগ্রী, টিভি রিমোর্ট, মোবাইল কভার, প্যাকেজিং মেশিন, বাইসাইকেল পার্টস, কার পার্টস, চার্জার, ইলেকট্রিক তার, মোবাইল স্পিকার, প্লাস্টিক পণ্য তৈরির মেশিন, এম্বুডারি মেশিন, থ্রি হুইলার পার্টস, এসিড, পুরাতন ও নতুন জাহাজ, অলিভ ওয়েল, সুইট কর্ন, ঘ্যানডিং মেশিন, মোবাইল এক্সেসরিজ, পিভিসি শীট, মিউজিক সিস্টেম, হিটার, চামড়া, প্যান্ট, টি-শার্ট, জুতা, ঘড়ি, জেনারেটর, হটপট, তেল, সোফা সেট, ফ্যান, ওয়াশিং মেশিন, সুটকেস, বিভিন্ন প্রকার রিমোর্ট ইত্যাদি।
এই বিষয়ে এনবিআরের একজন সদস্য বলেন, লাইসেন্স বাতিল হলেই সব কাস্টম হাউস, স্টেশন, ভ্যাট কমিশনারেট জানবে। মালিক বলছে তিনি কাজ করেনি, নবায়ন করেননি। তাহলে খালাস করলো কে, আর নবায়ন করলো কে? দুই কাস্টম হাউসের উচিত হবে তদন্ত করে বের করা, কারা কাজ করেছেন। এতে কাস্টমস কর্মকর্তারা যে জড়িত নই, তা বলা যাবে না। সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স দেওয়া, নবায়নের ক্ষেত্রে আরো কঠোর হতে হবে। কোন অভিযোগে বাতিল হলেও এই লাইসেন্সের প্রতি হাউসের নজর রাখতে হবে। তাহলে কোন চক্র এই অপকর্ম করতে পারবে না।
***