১০% পরিবার আয়ের ৭৫% খরচ করছে খাদ্যে

জাতীয় পর্যায়ে ১০.২% পরিবার তাদের মোট আয়ের ৭৫% খরচ করছে খাদ্য কেনার জন্য। এছাড়া ৬২% পরিবার তাদের আয়ের অর্ধেক ব্যবহার করছে খাদ্যে। ফলে তারা খাদ্যবহির্ভূত অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে খুব বেশি ব্যয় করতে পারছে না। এই পরিস্থিতি খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকি তৈরি করছে। এসব তথ্য উঠে এসেছে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর ফুড সিকিউরিটি সিচুয়েশন অ্যান্ড কোপিং ম্যাকানিজম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস সম্মেলনকক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থা। প্রতিবেদনের প্রস্তুতিতে সহায়তা করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আকতার, বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব মাসুদ রানা চৌধুরী। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফোকাল পয়েন্ট অফিসার মেহেনা তাবাসসুম, এবং বক্তব্য দেন বিবিএস’র উপ-মহাপরিচালক ওবায়দুল হক।

বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপে অংশ নেওয়া পরিবারগুলোর মধ্যে মাত্র ১৫% নিয়মিত আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেয়েছে। অন্যদিকে ৯% পরিবার জরিপের সময় থেকে এক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত কোনো আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেনি। বরিশালে ১৯% পরিবার একই সময়ে শূন্য আয়রনসমৃদ্ধ খাবার নিয়েছে। রাজশাহী বিভাগে ২৬% পরিবার প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গ্রামীণ এলাকায় ৩১.৬% পরিবার এবং শহরে ২৫.৫% পরিবার খাদ্যের জন্য আয়ের ৬৫% বা তার বেশি ব্যয় করছে। তবে সিটি করপোরেশন এলাকায় মাত্র ৬.৫% মানুষ একই হারে খাদ্যে ব্যয় করছে।

আঞ্চলিক বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ৪০–৪৬% পরিবার আয়ের ৫০% বা তার কম খরচ করছে খাদ্যের জন্য। অন্যদিকে সিলেট, রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহে মাত্র ২৫–৩৫% পরিবার আয়ের ৭৫% বা তার বেশি খরচ করছে খাদ্যপণ্যে। এই পরিস্থিতি খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকি তৈরি করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয়ভাবে ১০ জনের তিনজনের পরিবার দারিদ্র্যসীমার মধ্যে আছে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মোকাবিলায় চারটি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো-খাদ্য নিরাপত্তাহীন মোকাবিলায় সামগ্রিকভাবে সমন্বিত পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার প্রকৃত কারণগুলো খুঁজে বের করতে অধিক গবেষণা প্রয়োজন। গ্রামীণভিত্তিক কৌশল নির্ধারণে গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রধান অতিথি আলেয়া আকতার বলেন, প্রতিবেদনে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও মোকাবিলার কৌশল তুলে ধরা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বহুস্তরবিশিষ্ট সমস্যা। এটি মোকাবিলায় সমন্বিত ও সার্বিক পদ্ধতির প্রয়োজন। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার চেষ্টা যথেষ্ট নয়; সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, পুষ্টি শিক্ষা এবং খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নও অপরিহার্য।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!