১০১ অর্থ পাচারকারী শনাক্ত, ২০০ কোটি করে পাচার

নতুন করে আরও ১০১ জন অর্থ পাচারকারী শনাক্ত হয়েছে। প্রত্যেকেই সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং পাচারের অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর আগে ১১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছিল, যারা একাই কয়েক হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে; তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার মামলা করেছে।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি ব্যাংক খাতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, একটি ব্যাংকের মোট ঋণের ৯৫ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে, কারণ ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং তার বন্ধু-মিত্ররা সব টাকা নিয়ে চলে গেছেন। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে ব্যাংক খাতে এত বড় লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি। আগামী চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা এখনও দূর করা যায়নি এবং সেখানে কর্মরত মানুষদের ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এই কাজটি শুরু করা হয়েছে এবং নির্বাচিত সরকারের জন্য এটি অব্যাহত রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর এক বছরে অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা সন্তোষজনক পর্যায়ে এসেছে। কিছুটা দ্বিমত থাকতে পারে, তবে তিনি উল্লেখ করেন, সুশাসনের ঘাটতি, অর্থপাচার ও দুর্নীতির কারণে আগে আর্থিক খাত বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। এখন তা কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সামষ্টিক অর্থনীতির সব সূচক নেতিবাচক ছিল, যা এখন ইতিবাচক। তিনি আরও বলেন, আইএমএফের শর্ত পূরণে মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের নিয়ন্ত্রণে রেখে আমরা কোনো ভুল করিনি, যদিও শুরুতে শঙ্কা ছিল।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে উপদেষ্টা জানান, জুনে তা ৬ শতাংশে নেমে আসবে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে এবং জুলাইয়ে তা ১৪ শতাংশে পৌঁছেছে। ব্যাংক খাতের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের লুটপাটকৃত টাকা সাধারণ মানুষের অর্থ এবং ঋণের টাকা। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সমস্যায় রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ করা হবে।

ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য চলতি বাজেটে কত টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা জানাননি। তবে তিনি উল্লেখ করেন, বরাদ্দটি পর্যাপ্ত নয় এবং সেখানে আইএমএফও অর্থ দেবে। তিনি আশ্বাস দেন, ব্যাংকের আমানতকারীদের অর্থ নিয়ে কোনো খেয়ানত হবে না এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যাংকগুলো একীভূত করার বিষয়ে তিনি বলেন, কতগুলো ব্যাংক একীভূত করা হবে তা প্রকাশ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যাংক সমন্বয় মানে দেশীয় ভাষায় “শেষ হয়ে গেছে, তাই এই তথ্য এখন প্রকাশ করা হবে না। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনা করবে।

নির্বাচিত সরকার ব্যাংক খাত সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে নাও পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে কোনো প্রতিশ্রুতি নেবেন কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে কিছু আলোচনা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো যদি ব্যাংক সংস্কার কার্যক্রম উল্টো-পাল্টো করে, তবে আমানতকারীরা ওই ব্যাংক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

টাকা ফেরত আনার বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা জানান, ইতিমধ্যেই বড় ধরনের ১১টি মামলা দাখিল করা হয়েছে। পাচারকারীরা শনাক্ত হয়েছে এবং কোন কোন দেশে তারা টাকা পাচার করেছে তাও চিহ্নিত হয়েছে। এখন এসব টাকা ফেরত আনার জন্য সংশ্লিষ্ট ১২টি দেশের সঙ্গে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএলএ) করার চিঠি পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি আইনজীবীর মাধ্যমে চেষ্টা করা হচ্ছে।

ব্রিফিংয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, রিটার্নে আয়-ব্যয়, সম্পদ ও দায় সম্পর্কিত ভুল বা অসত্য তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য নয়, বরং সচেতন করার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন কোনো আইন তৈরি করা হয়নি, শুধু বিদ্যমান আইন সম্পর্কে মানুষকে স্মরণ করানো হচ্ছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন দোকানে ফরম পূরণ শেখানো হচ্ছে যাতে শূন্য রিটার্ন দেওয়া যায়। এটি বিপজ্জনক এবং আমরা সেটিই সতর্ক করতে চেয়েছি। যখন করদাতার ফাইল অডিটে পড়বে, মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় কোনো জবাব দেওয়া সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, অসত্য তথ্য প্রদান শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে করদাতাদের সুবিধার্থে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, যা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ হাজার লোক অনলাইনে কর দিচ্ছেন। এটি মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করার অংশ, এবং এর মধ্যে কোনো ভয়ভীতি নেই।

আন্দোলনকারী এনবিআর কর্মীদের গণহারে ছাঁটাইয়ের অভিযোগের বিষয়ে আবদুর রহমান খান বলেন, এমন কোনো সিদ্ধান্ত কাগজে-কলমে নেওয়া হয়নি। সীমা লঙ্ঘনকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শোকজসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গণহারে চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটেনি এবং সরকারও কর্মী হ্রাস করতে চায় না। শুধুমাত্র সেই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যারা মিডিয়ার সামনে তাদের বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী।

**অর্থ পাচারকারীদের সঙ্গে সমঝোতার ইঙ্গিত সরকারের
**অর্থ পাচারকারীদের জীবন কঠিন করে ফেলা হবে
**অর্থপাচারকারীরা শান্তিতে থাকতে পারবে না: হাইকোর্ট
**বাণিজ্যের আড়ালে ৭৫ শতাংশ অর্থপাচার হয়
**অর্থপাচার ব্যাংক ও কাস্টমসের ব্যর্থতা: চেয়ারম্যান
**অডিট দুর্বলতায় অর্থপাচার ও ঋণ খেলাপি বেড়েছে
**অর্থপাচারে স্বামীসহ ফেঁসে যাচ্ছেন সাঈদা মুনা
**অর্থপাচারে অভিযুক্ত ৩৭৮ জনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
**অর্থপাচার ও ব্যাংক ধ্বংস: রক্ষকরা ভক্ষক
**টিউলিপরে অর্থপাচার ১২ দেশে তদন্ত হচ্ছে
**মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আড়ালে দম্পতির অর্থপাচার
**মেঘনা গ্রুপের এক লাখ কোটি টাকা পাচার
**ছয় মাসে পাচার সম্পদ ফ্রিজে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় ব্যাংক
**ইউসিবির সাবেক পরিচালকের অর্থপাচারের অভিযোগ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!