১০১৯ কোটি টাকার প্রকল্পে সেবা বাড়াবে এনবিআর

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেবা নিতে গিয়ে অনেক সময়ই ভোগান্তিতে পড়েন অনেকে। সেবাগ্রহীতারা যেন ঘরে বসেই শতভাগ সেবা নিতে পারেন এবার তেমনই পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ভোগান্তি দূর করে মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। সেবা ও রাজস্ব বাড়ানোর পাশাপাশি এনবিআরকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেজন্য ‘স্ট্রেনদেনিং ডোমেস্টিক রেভিনিউ মোবিলাইজেশন’ নামে কারিগরি সহায়তা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ১৯ কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকারি ব্যয় ১৯ কোটি টাকা আর বাকি এক হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে এনবিআর।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. আব্দুর রউফ জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় এনবিআরের সক্ষমতা বৃদ্ধির একটি প্রস্তাবনা আমাদের হাতে এসেছে। প্রকল্পের সার্বিক বিষয় নিয়ে সভা হয়েছে। আমরা এনবিআরকে কিছু কোয়াইরি দিয়েছি। এনবিআর এখনো বিষয়গুলো ঠিক করে দেয়নি। ঠিক করে দিলে সামনে আবারও সভা হবে। এরপরেই চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে।

এনবিআর সূত্রমতে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে এনবিআর ডিজিটালাইজ করা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট বিজনেস প্রসেস প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা গ্রহণ, প্রশিক্ষণ, বিশ্লেষণী ও নীতি বিশ্লেষণ সক্ষমতা জোরদারকরণ, অভ্যন্তরীণ ও বহিঃযোগাযোগ ব্যবস্থাপনা করা হবে। পাশাপাশি একটি শক্তিশালী গবেষণা ও পরিসংখ্যান ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হবে। এছাড়াও আয়কর প্রশাসনকে শক্তিশালীকরণে সহজীকৃত প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়করণ এবং বিদ্যমান ও নতুন সিস্টেমগুলোর মধ্যে কার্যকর আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা হবে। এর আওতায় বিদ্যমান ই-টিআইএন, ই-রিটার্ন, ই-ট্যাক্স, ই-টিডিএস ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হবে। ই-অডিট, ই-ট্যাক্স অফিস, ই-ট্যাক্স ওয়ার্ল্ড, ই-সাপোর্ট, ই-কানেক্ট ইত্যাদিতে নতুন নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন ও পারস্পরিক ইন্টারোপারেবিলিটি (আন্তঃকার্যক্ষমতা) নিশ্চিত করা হবে।

সূত্র আর জানিয়েছে, প্রকল্পটির মাধ্যমে ভ্যাট প্রশাসনকে আধুনিকায়নের জন্য এসএডি কম্পিটেন্সি সেন্টার বা বিশেষ কার্যক্রম বিভাগ দক্ষতা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, ইন্টিগ্রেটেড ভ্যাট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম ও সংশ্লিষ্ট অইটি অবকাঠামোর পূর্ণাঙ্গ উন্নয়ন করা হবে। ইন্টিগ্রেটেড ভ্যাট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম সফটওয়্যাকের কার্যকর একীভূতকরণ, কাস্টমস আধুনিকায়ন, আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) উভয়ের জন্য একটি সমন্বিত ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন এবং করদাতাদের জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় কল সেন্টারও প্রতিষ্ঠা করা হবে। একই সঙ্গে প্রকল্পের আওতায় এনবিআরের জনবল, কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের জন্য একটি আধুনিক ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে।

নতুন প্রকল্প সম্পর্কে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এনবিআরের সব সেবা আরও সহজ করা হবে। যেন ঘরে বসেই মানুষ শতভাগ সেবা নিতে পারেন। সেজন্য বিশাল পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। যেখানে সেবাগ্রহীতাদের জন্য একই বৃত্তে নানা ধরনের সুবিধা থাকবে। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। একটি সভাও হয়েছে, আরও সভা হবে। প্রকল্পটি অন দ্য প্রসেসে আছে। পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা হবে। আমরা এ কাজটি শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারলে সেবা পেতে মানুষের ভোগান্তি যেমন কমবে, সেবা পাওয়াটাও অনেক সহজ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজস্ব লাগবে, ফলে রাজস্ব আহরণ আরও বাড়াতে হবে। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে আমাদের বিশ্বাস সেবা নিতে কাউকে অফিসে (এনবিআরে) আসতে হবে না। ঘরে বসেই সব সুযোগ-সুবিধা মিলবে। সামনে শতভাগ রিটার্ন অনলাইনে হয়ে যাবে। অডিট সিস্টেম ম্যানুয়াল থাকবে না। সবকিছু মেশিন ঠিক করবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!