সাগরে লাল-সবুজের পতাকা বহনে এগিয়ে এসেছে ১৭টি প্রতিষ্ঠান। ফলে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০০-তে। এর মধ্যে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ রয়েছে মাত্র পাঁচটি, বাকিগুলো বেসরকারি খাতের মালিকানায়। তবে এ খাতে মূল নেতৃত্ব দিচ্ছে মাত্র পাঁচটি গ্রুপ—কবির, মেঘনা, আকিজ, কর্ণফুলী ও ভ্যানগার্ড। ১০০ জাহাজের মধ্যে ৭৭টির মালিক এ পাঁচ প্রতিষ্ঠানই।
বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা কমলেও বেসরকারি খাতে বড় গ্রুপগুলোর এগিয়ে আসায় বিনিয়োগ বেড়েছে। বিশেষ করে করোনা পরবর্তী সময়ে, ২০২১ ও ২০২২ সালে উল্লেখযোগ্যভাবে বহর সম্প্রসারণ হয়—শুধু এই দুই বছরে ২৬টি জাহাজ যুক্ত হয়। ফলে ২০২৩ সালে জাহাজের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৫-এ। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ স্পর্শ করে শতকের মাইলফলক। তবে ২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে নৌ বাণিজ্য দপ্তরে কোনো নতুন জাহাজ নিবন্ধিত হয়নি।
২০২৪ সালে যেখানে জাহাজের সংখ্যা ছিল ১০২, চলতি বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০০-তে। দুর্ঘটনার কারণে বিএসসির দুটি জাহাজ এ বছর পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে নতুন চারটি জাহাজ এ বছর যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্ত হলে বছর শেষে মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ১০৪-এ। নতুন জাহাজগুলোর মধ্যে দুটি যুক্ত করবে বিএসসি এবং দুটি আনবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভ্যানগার্ড ও ইস্টকোস্ট গ্রুপ।
সমুদ্রগামী জাহাজ মালিক সমিতির হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে এই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ার পেছনে পাঁচটি কারণকে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হচ্ছে—করোনার সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজের দাম কমে যাওয়া, বড় জাহাজ আমদানিতে শুল্ক ছাড়, দেশীয় জাহাজকে বন্দরের জেটিতে ভেড়ানোর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার, বড় শিল্পগ্রুপগুলোর আমদানি বৃদ্ধি এবং পুরোনো জাহাজ আমদানির সুযোগ বৃদ্ধি। বর্তমানে বহরে থাকা ১০০ জাহাজের মধ্যে ৮২টি বাল্ক জাহাজ (খোলা পণ্য পরিবহনকারী), ৯টি ট্যাঙ্কার (তেল পরিবহনকারী), ৮টি কনটেইনার জাহাজ এবং ১টি কার্গো জাহাজ।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম সফরে নৌ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দেশের পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। বর্তমানে যারা এই খাত পরিচালনা করছেন, তাদের কারণে দেশে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহিত হচ্ছে এবং দক্ষ নাবিকদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সেক্টরের উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি। শিগগিরই বিএসসির বহরে দুটি নতুন জাহাজ যুক্ত হবে এবং এর পর আরও তিনটি জাহাজ আসবে।
কার নিয়ন্ত্রণে কত জাহাজ
সমুদ্র বাণিজ্যে শীর্ষস্থান দখল করেছে কেএসআরএম গ্রুপ, যারা এসআর শিপিং লিমিটেডের মাধ্যমে জাহাজ ব্যবসা পরিচালনা করছে। তাদের বহরে বর্তমানে ২৮টি জাহাজ রয়েছে এবং পণ্য পরিবহন ক্ষমতা ১৩ লাখ টনের বেশি। কেএসআরএমের কাছাকাছি অবস্থানে আছে মেঘনা গ্রুপ অব কোম্পানিজ (এমজিআই), যার বহরে ২৫টি সমুদ্রগামী জাহাজ আছে। তৃতীয় স্থানে রয়েছে আকিজ গ্রুপ, যাদের বহরে ১০টি জাহাজ আছে। কর্ণফুলী লিমিটেডের এইচআর লাইন্সের কাছে ৮টি জাহাজ, ভ্যানগার্ড গ্রুপের কাছে ৬টি জাহাজ, এবং বসুন্ধরা গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বহরে মোট ৭টি জাহাজ রয়েছে। বড় গ্রুপগুলোর মধ্যে ওরিয়ন গ্রুপ ও এমজেএলের বহরে একটি করে জাহাজ আছে।
নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পিএনএন শিপিং লাইন্স, সানশাইন নেভিগেশন, পিএইচ নেভিগেশন, টিকে, পরিন, দরিয়া শিপিং ও ডরিন শিপিং লাইন্সের জাহাজ রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বহরে পাঁচটি জাহাজ রয়েছে। সবমিলিয়ে ১৭টি প্রতিষ্ঠান ৯৯টি জাহাজ পরিচালনা করছে।