‘১০০ জনে ৭০ জনই শূন্য কর দেয়, যা অবিশ্বাসযোগ্য’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ক্ষেত্রে অডিট করা খুবই জরুরি। সংস্থাটির মতে, প্রতি ১০০ জনে ৭০ জনই জিরো ট্যাক্স দেয়, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। যে ৭০ ভাগ শূন্য কর দেখাচ্ছে তাদের হিসাব খতিয়ে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত অডিট অ্যান্ড একাউন্টিং সামিটের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে এফআরসির চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ হোসেন ভুঁইয়া প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিতে অডিটিং-অ্যাকাউন্টটি বড় বিষয়। তবে যারা এসব কাজে জড়িত তাদের স্বচ্ছতা ও সততা সবার আগে বড় বিষয়। অনেক প্রতিষ্ঠান অডিটের যে পেপার সাবমিট করে যার বেশিরভাগই মানসম্পন্ন না।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ক্ষেত্রে অডিট করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী প্রতি ১০০ জন করদাতার মধ্যে ৭০ জনই জিরো ট্যাক্স দেখান, যা বিশ্বাসযোগ্য নয়। শূন্য কর দেখানো এ ৭০ শতাংশ করদাতার আয়-ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ১৮ লাখ রিটার্ন জমা পড়ার যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে, তাতেও গড়মিল থাকতে পারে। যারা অডিটের দায়িত্বে আছেন, তাদের ‘অন্তর দৃষ্টি’ দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

বিদেশি বিনিয়োগ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ খাতে গতি আনতে অডিট ও একাউন্টিং ব্যবস্থাকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। আর্থিক খাতের সংস্কার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকেই ধারণা করেন এসব সংস্কার বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফের চাপে হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে সরকারের নিজস্ব উদ্যোগেও এই প্রক্রিয়া এগোচ্ছে। তবে বিশ্বব্যাংক কিংবা আইএমএফ যদি ভালো কোনো পরামর্শ দেয়, তা গ্রহণে সরকারের আপত্তি নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, অধিকাংশ ব্যাংকের অডিট প্রতিবেদনে গড়মিল পাওয়া যায়, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আঘাত হানে। তিনি জানান, ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি (রিস্ক বেসড সুপারভিশন) পুরোপুরি কার্যকর হবে। এ সময় তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হলে অডিট রিপোর্টে স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্য তথ্য থাকতে হবে এবং এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক যৌথভাবে কাজ করবে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, পাওনা বিষয়ে চারটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে অডিট করতে গেলে তারা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেনি। এ ধরনের অনাগ্রহ দূর করতে এবং কেউ একাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ না করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন অডিটরদের সৎ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি শুধুমাত্র অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে বিচার করা হয়, তাহলে সৎ অডিটর খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। তিনি উল্লেখ করেন, আইএফআইসি ব্যাংকে নানা ধরনের কেলেঙ্কারি ঘটেছে এবং সালমান এফ রহমান অডিট রিপোর্টের সহায়তায় একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলে বিপুল অর্থ নিয়েছেন। গত শাসনামলে ব্যাংক খাতে একের পর এক অনিয়ম হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, এসব অনিয়ম আড়াল করতে যেসব অডিট রিপোর্ট ব্যবহার করা হয়েছে, তা উদঘাটনে শীর্ষ অডিট ফার্মকে চিহ্নিত করাটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ হলেও তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!