সাউথইস্ট ব্যাংকের বর্তমান পরিচালক আলমগীর কবির হিসাবের কারসাজিতে বড় অঙ্কের ঋণ জালিয়াতি করেছেন। ২০০৪ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ২০ বছর ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যাংকে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। একজন পরিচালক হিসেবে সাড়ে ১৩ কোটি টাকার ঋণের অনুমতি থাকলেও তিনি প্রায় ৪০০ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন পাঁচজন প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। যদিও পরবর্তীতে সেই ঋণ সমন্বয় করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সাউথইস্ট ব্যাংকের বর্তমান পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়, তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (বিএলআইএল)-কে প্রতিদিন জামানতবিহীন বিশেষ ঋণ সুবিধা দেওয়া হতো, যা ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬১ কোটি টাকা ঋণ এবং ১৭১ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতে (এফডিআর) দাঁড়ায়।
ব্যাংকটি প্রতিদিন মানি অ্যাট কলে ঋণ দিয়ে পরদিন তা সমন্বয়ের নামে কাগজে-কলমে লেনদেন দেখাতো। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি ৭২ কোটি টাকা সমন্বয় করে আবার ৭৩ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়, যা প্রতিদিন ভিন্ন পরিমাণে চলতে থাকে। এছাড়া, সাউথইস্ট ব্যাংক নিজেই তারল্য সংকটে থাকার পরও উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে বিএলআইএল-কে কম সুদে ঋণ দিয়েছে। যেমন, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে ৯.৫০% সুদে ৮২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিএলআইএল-কে ৯.২৫% সুদে ৬২ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ২০২৩ সালে ৮২.৮১ কোটি টাকা নিট ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং প্রতিষ্ঠানটির পুঞ্জীভূত ক্ষতি দাঁড়ায় ১৭২ কোটি টাকা। ফলে সাউথইস্ট ব্যাংকের পাওনা পরিশোধের সক্ষমতা তাদের নেই।
এছাড়া, পরিচালকের স্বজনদের নামে ঋণের অনিয়ম ধরা পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, আলমগীর কবিরের ভাতিজা ও বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের পরিচালক জুবায়ের কবিরের ১৫.২৬ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে মাত্র ৩.৭০ কোটি টাকা পরিশোধের শর্তে ১১.৫৬ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করা হয়।
এসব অনিয়ম ব্যাংক কোম্পানি আইনের লঙ্ঘন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। গণ-অভ্যুত্থানের পর ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলেও আলমগীর কবির এখনো পরিচালকের পদে বহাল আছেন। তার বক্তব্য নেওয়ার জন্য তিন দিন যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি। ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন।