দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংকের অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শনিবার (৯ আগস্ট) সকালে হিলি স্থলবন্দর পরিদর্শনকালে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এই নির্দেশ দেন। পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা স্থল শুল্ক স্টেশন ও পানামা পোর্ট লিংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম নিয়ে মত বিনিময় করেন। এ সময় তিনি পানামা পোর্ট লিংকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পান। তার ভিত্তিতে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মানজারুল মান্নানকে এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। পরে তিনি শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা ও পানামা পোর্ট লিংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন।
মতবিনিময় সভায় ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানির সময় বৃদ্ধি করা, পণ্য ওঠানামায় বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের বাড়তি মজুরি আদায়, পণ্য আমদানি আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় রাজস্ব আয়ের ঘাটতি ও শ্রমিকদের কর্মহীন হয়ে পড়ার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। মতবিনিময় সভা শেষে বেলা পৌনে একটায় সংবাদকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘হিলি স্থলবন্দর চুক্তিভিত্তিক বন্দর। এই বন্দরকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যেহেতু চুক্তি হয়ে গেছে, আমরা তার বিকল্প কিছু করতে পারব না। যেসব বন্দর আমরা পরিচালনা করছি, সেগুলোর অনেক আধুনিকায়ন হয়েছে। বেনাপোল, ভোমরা, বুড়িমারী, তামাবিলে অনেক কাজ হচ্ছে। যত দূর মর্ডান করা যায়, তত দূর। হিলি স্থলবন্দরটা দেখলাম, রাজশাহীতে সোনা মসজিদ দেখলাম—দুটিই বড়। দুটিই চুক্তিতে দেওয়া হয়েছে। বন্দর চুক্তিতে দেওয়া ভালো। আগে বন্দর ২৪টি ছিল। সেখান থেকে ৪টি বাদ দেওয়া হয়েছে, ২০টি বন্দরের সব তো চালানো কঠিন। তাই আমরা কিছু বন্দর, বিশেষ করে ২-৪টি নদীবন্দর বেসরকারি খাতে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
নৌপরিবহন উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এখনো যে ২০টির মতো বন্দর আছে, সেখানে কার্যকর বন্দর যদি বলি, ১২টির বেশি নেই। সারা বছর যেখানে ১০ হাজার, ১৫ হাজার, ২০ হাজার, ৩০ হাজার টাকা আয় হয়; খরচ তার চেয়ে বেশি।’
তিনি আরো বলেন, ‘উন্নয়নশীল স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনাও প্রণয়ন করা হচ্ছে এবং ধাপে ধাপে এসব বন্দরের সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ হিলি স্থলবন্দর সভাকক্ষে কাস্টমস, বন্দরের কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্যবসায়ীরা রাস্তা-ঘাট সংস্কার, ওয়্যারহাউজ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে দ্রুত সেসব সমাধানের অনুরোধ করেন।
নৌপরিবহন উপদেষ্টার পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রংপুর ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার অরুণ কুমার বিশ্বাস, হিলি শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার এ এস এম আকরাম, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ২০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফুল দৌলা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, বিরামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মঞ্জুরুল ইসলাম, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক, হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম, হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ।
** চার স্থলবন্দর বন্ধের সুপারিশ
** তামাবিল স্থলবন্দরে মাসে ৩ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি
** মিয়ানমার থেকে পণ্য আসছে না টেকনাফ স্থলবন্দরে
** চাতলাপুর স্টেশনে চার বছর ধরে বন্ধ আমদানি
** ঘুস নিয়ে শুল্ক ছাড়াই পণ্য ছাড়, দুদকের অভিযান
** সোনাহাট ও চিলমারী বন্দরে ‘যোগসাজশে’ শুল্কফাঁকি
** তামাবিল বন্দরে বছরে হাতিয়ে নিচ্ছে ২২ কোটি টাকা
** বন্দরের দুই কর্মকর্তা বরখাস্ত, শাস্তি পায়নি কাস্টমস কর্মকর্তারা!