হিরু দম্পতিকে ১৯ কোটি টাকা জরিমানা: শেয়ার কারসাজি

স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে সঙ্গে নিয়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করেছেন আলোচিত বিনিয়োগকারী এবং সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক মো. আবুল খায়ের হিরু। শেয়ার কারসাজির প্রমাণ পাওয়ার পর, হিরু, তার স্ত্রী এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে ১৯ কোটি টাকা জরিমানা করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়। হিরু, তার স্ত্রী ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান একাধিক বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব খুলে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে মুনাফা অর্জন করেন। তাদের কার্যক্রমের ফলে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দাম ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ১১৪ টাকা ১০ পয়সা হয়ে যায়, অর্থাৎ প্রতি শেয়ারের দাম ৫৪ টাকা ১০ পয়সা বা ৯০ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে যায়।

শেয়ারবাজারে কয়েক বছর ধরে গুঞ্জন ছিল এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করেছিল হিরু ও তার সহযোগীরা। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। অবশেষে তদন্ত সাপেক্ষে কোম্পানির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায়ে আনলো বিএসইসি।

বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা শেয়ার কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির দায়ে সিকিউরিটीज অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) অনুযায়ী মো. আবুল খায়েরকে ৪ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একইভাবে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২) এবং সেকশন ১৭(ই)(৫) এর অধীনে ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ৫ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২), সেকশন ১৭(ই)(৩) এবং সেকশন ১৭(ই)(৫) অনুযায়ী আবুল খায়েরের স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ফলে অভিযুক্তদের মোট ১৯ কোটি টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। এর আগে, বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করার কারণে হিরু ও তার সহযোগীদের একাধিকবার বড় অঙ্কের জরিমানা করেছে বিএসইসি। ৩১তম বিসিএসের (সমবায়) কর্মকর্তা আবুল খায়ের হিরু ১০ বছর আগে বিনিয়োগকারীদের কাছে খুব পরিচিত ছিলেন না, কিন্তু পাঁচ বছর আগে তিনি শেয়ারবাজারে আলোচিত ও সমালোচিত বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত হন।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, আবুল খায়ের হিরু স্বল্প সময়ে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের বিপুলসংখ্যক শেয়ার সিরিজ লেনদেন করে। এর ফলে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যায়, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি ও শেয়ারবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়ের জন্য প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। এই আইন ইচ্ছেকৃতভাবে লঙ্ঘনের ফলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।

ডিআইটি কো-অপারেটিভ ও কাজী সাদিয়া হাসানের বিও হিসাবের মাধ্যমে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের বিপুলসংখ্যক শেয়ার সিরিজ লেনদেন করা হয়, যার ফলে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যায়। এটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২) ও সেকশন ১৭(ই)(৫) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ডিআইটি কো-অপারেটিভ শেয়ার সিরিজ লেনদেনের মাধ্যমে একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি করে, যা শেয়ারবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়ের জন্য প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে।

কাজী সাদিয়া হাসান ও ডিআইটি কো-অপারেটিভের বিও হিসাবের মাধ্যমে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের বিপুলসংখ্যক শেয়ার সিরিজ লেনদেন করা হয়, যার ফলে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যায়। এটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কাজী সাদিয়া হাসান তার দুটি বিও হিসাবের মাধ্যমে শেয়ার লেনদেন করলেও বেনিফিশিয়ারি ওনার্সশিপে কোনো পরিবর্তন হয়নি, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৩) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

কাজী সাদিয়া হাসান স্বল্প সময়ে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার সিরিজ লেনদেন করে, যার ফলে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যায়, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি করে শেয়ারবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়ের জন্য প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। শেয়ার কারসাজিতে জড়িতদের বক্তব্য অনুযায়ী, তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে, অভিযোগসমূহ সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং এই কর্মকাণ্ডের ফলে শেয়ারবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযুক্তদের কর্মকাণ্ড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫), সেকশন ১৭(ই)(২) এবং সেকশন ১৭(ই)(৩) লঙ্ঘন করেছে, যা সিকিউরিটিজ আইনের পরিপন্থি। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ অনুযায়ী, সিকিউরিটিজ আইন ও বিধি-বিধান পরিপালনে ব্যর্থতা এবং শেয়ারবাজারের শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জনস্বার্থ রক্ষায় অভিযুক্তদের জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!