হাতিয়া ও সন্দ্বীপের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ভারি বৃষ্টি হয়েছে। উঁচু জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে উপকূলীয় অনেক এলাকা। নদ-নদীতে পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় ভোলা ও পটুয়াখালীসহ কয়েকটি স্থানে ভেঙে গেছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে দেশের মূল ভূখণ্ডের সব ধরনের নৌ যোগাযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। ভারি জোয়ারের পানিতে নিঝুমদ্বীপের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায়ও সকল নৌপথে চলাচল স্থগিত করেছে প্রশাসন। এদিকে স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় আড়াই থেকে তিন ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে।

নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ফেনী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনায় বন্যা সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। আবহাওয়ার একটি বিশেষ সতর্কবার্তায় জানানো হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়া হিসেবে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। এ কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে অস্বাভাবিকভাবে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় নিঝুমদ্বীপসহ নোয়াখালীর হাতিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। গবাদিপশু নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা। জোয়ারের পানি ঢুকেছে হাতিয়ার নলচিরা, বয়ারচর, চরকিং ও নাঙ্গলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায়। পাশাপাশি দিনভর টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে নোয়াখালী পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে।

Tiro Bangla 17

নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্বাভাবিকের তুলনায় তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ার আসে। এতে পর্যটন কেন্দ্র নিঝুম দ্বীপের নামার বাজার, হরিণ বাজার ও উপরের বাজারসহ প্রায় সব এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। নিচু এলাকাগুলোর বেশিরভাগ কাঁচাঘর বুকসমান পানিতে ডুবে গেছে। গরু-মহিষসহ গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী সাইক্লোন শেল্টার, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নামার বাজারের আবাসিক হোটেলগুলোতে।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানান, ৩ নম্বর সতর্কসংকেত জারি থাকায় বুধবার সকাল ১০টা থেকে হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। পাশাপাশি ঘাটে অবস্থান করা ছোট নৌযানগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামের বঙ্গোপসাগরবেষ্টিত সন্দ্বীপ উপজেলা সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় উপজেলার সব নৌপথে চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে সমুদ্রের পানি উপজেলায় স্থাপিত বেড়িবাঁধ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!