দেশে সচল স্যামসাং ব্র্যান্ডের মোবাইল হ্যান্ডসেটের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি ৩১ লাখ। যার মধ্যে প্রায় এক কোটি ৪৯ লাখ হ্যান্ডসেট বৈধ পথে আসেনি। অর্থাৎ এসব হ্যান্ডসেট রাজস্ব পরিশোধ করে আমদানি হয়নি। বিশ্বের নামি এই হ্যান্ডসেট বৈধ পথে আমদানি না হওয়ায় একদিকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে। অপরদিকে অবৈধ এসব হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারীরা যেকোন অপরাধ করলে তাদের খুঁজে বের করাও কষ্ট হবে। এই বিপুল পরিমাণ হ্যান্ডসেট কিভাবে দেশে এসেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
একাধিক সূত্রমতে, দেশের চারটি মোবাইল ফোন অপারেটর রয়েছে। এসব অপারেটরের নেটওয়ার্কে স্যামসাং ব্র্যান্ডের মোবাইল হ্যান্ডসেট সচল রয়েছে দুই কোটি ৩১ লাখ ২৯ হাজার। এরমধ্যে এক কোটি ৪৯ লাখ ২৬ হাজার হ্যান্ডসেট অবৈধ। এসব ফোন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ‘নক অটোমেশন অ্যান্ড আইএমইআই ডেটাবেইজ (এনএআইডি)’ সিস্টেমে নিবন্ধন করা হয়নি। অর্থাৎ এসব মোবাইল হ্যান্ডসেট বৈধ পথে আমদানি হয়নি। কারণ বৈধ পথে আমদানি করা হ্যান্ডসেট হলে তা এনএআইডি-তে নিবন্ধিত হতো।
বিটিআরসির পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন নেটওয়ার্কে এক কোটি ৫ লাখ ৯৪ হাজার স্যামসাং হ্যান্ডসেট, রবিতে ৮৫ লাখ, বাংলালিংকে ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার এবং টেলিটকে দুই লাখ ৭০ হাজার স্যামসাং হ্যান্ডসেট সচল রয়েছে। এরমধ্যে এনএআইডি সিস্টেমে দেশের বৈধ আমদানিকারক হতে বা বৈধ পথে আসা হিসেবে নিবন্ধিত স্যামসাং হ্যান্ডসেট সংখ্যা ৮২ লাখ ২ হাজার।
বিটিআরসির হিসাবমতে, বৈধ-অবৈধ মিলে চার অপারেটরে সচল মোবাইল হ্যান্ডসেটের সংখ্যা ১৭ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার। এরমধ্যে টেলিটকে আইফোন-স্যামস্যাং ব্র্যান্ড ছাড়া অন্যান্য ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন, ফিচার ফোন, ‘আইডেন্টিফাই করা যায়নি’ এমন হ্যান্ডসেটের হিসাব যুক্ত নেই। বাংলালিংকেরও ‘আইডেন্টিফাই করা যায়নি’ এমন হ্যান্ডসেটের হিসাব যুক্ত নেই। এ হিসাবে গ্রামীণফোনে রয়েছে ৮ কোটি ৭৬ লাখ ৯৩ হাজার, রবিতে ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৭৭ হাজার, বাংলালিংকে ‘৩ কোটি ৩৫ লাখ ৬৬ হাজার’ এবং টেলিটকে ‘২ লাখ ৯০ হাজার’ হ্যান্ডসেট।
এই বিষয়ে মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইওবি) সভাপতি জাকারিয়া শাহিদ বলেন, বিটিআরসি এসব অবৈধ হ্যান্ডসেট সহজে সনাক্ত করতে পারে। আর এনবিআর এসব হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারীদের কাছে রাজস্ব চেয়ে নোটিশ দিতে পারে।
সংগঠনের সহ-সভাপতি ও ইস্মার্টু টেকনোলজির সিইও রেজওয়ানুল হক বলেন, দেশে মোট মোবাইল-হ্যান্ডসেটের বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশই অবৈধ-নকল হ্যান্ডসেটের পেটে। এদের দাপটে বৈধ ও আসল মোবাইল ফোন নিয়ে অস্তিত্ব সংকটে স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফোন কারখানা স্থাপনকারীরা। তাই ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) পুরোপুরি সক্রিয় করে অবৈধ ফোন বন্ধ করতে হবে।
অপরদিকে, দেশে স্যামসাংয়ের কারখানা স্থাপনকারী ও ব্যবাসয়ীরা বলছেন, ব্যবসায়িক গ্রুপ ফেয়ার গ্রুপের কনসার্ন ফেয়ার ইলেক্ট্রনিক্স ২০১৮ সালে দেশে স্যামসাং কারখানা করেছে। ব্র্যান্ডটির বিপণনকারী অন্যতম ব্যবসায়িক গ্রুপ লাবিব গ্রুপের সিসটার কনসার্ন এক্সেল টেলিকম। তারও সম্প্রতি ব্র্যান্ডটির কারখানা স্থাপন করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবৈধ ফোনে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এ খাতে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি ঠেকাতে এবং বিনিয়োগকারীর সুরক্ষায় অবৈধ ফোন বন্ধের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তারা।
** অবৈধ হ্যান্ডসেটে রাজস্ব হাওয়া দুই হাজার কোটি
** রেয়াতি সুবিধার অপব্যবহার শীর্ষে সিম্ফনি-অপোরেয়াতি সুবিধার অপব্যবহার শীর্ষে সিম্ফনি-অপো
** ‘অপো’ দেয় শুল্ককর ফাঁকি
** মোবাইল বিক্রির সঠিক হিসাব রিটার্নে দেখায় না ‘রিয়েলমি’
** মোবাইল বিক্রির সঠিক হিসাব রিটার্নে দেখায় না ‘অপো’