** কলেজ শিক্ষক স্ত্রী আমেনা আখতারের সম্পদ স্বামী হেলাল হোসেনের চেয়ে প্রায় ৮ গুণ বেশি
** চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে স্ত্রী তিনটি ও স্বামী একটি প্রতিষ্ঠান খুলেছেন, যা আয়কর নথিতে নেই
** স্বামী-স্ত্রী বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন, পেয়েছেন মুনাফা-যা আয়কর নথিতে দেখাননি
** ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার মূল্য ৪ কোটি টাকা, কিন্তু মূল্য দেখিয়েছেন ৩৬ লাখ টাকা
** ফ্ল্যাট আত্মীয় চিকিৎসককে দান করেছেন উল্লেখ করলেও চিকিৎসক বলেছেন তিনি কিনে নিয়েছেন
** স্বামীর করফাঁকি ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা হলেও স্ত্রীর করফাঁকি প্রায় ৯ কোটি ১৫ লাখ টকা
২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছিলেন খুলনার জেলা প্রশাসক (ডিসি)। অর্থাৎ ২০১৮ সালের রাতের ভোটের কারিগর ছিলেন। নিজে সরকারি চাকরি করলেও চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে খুলেছেন নিজ নামে প্রতিষ্ঠান। যাতে লেনদেন হয় কোটি কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন, তাতে বিপুল পরিমাণ লাভ করেছেন। নিজ আয়কর ফাইলে এই ব্যবসা, শেয়ার ও শেয়ারের লাভ-কিছুই দেখাননি। এছাড়া বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্যও করফাইলে দেখাননি। স্ত্রী একটি বেসরকারি কলেজের (এমপিওভুক্ত) শিক্ষকতা করেন। তিনিও চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে গড়ে তুলেছেন তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কিনেছেন শেয়ার, তাতে লাভও হয়েছে। গড়েছেন সম্পদ। কিন্তু তিনি ব্যবসা, ব্যবসার আয়, শেয়ার ও সম্পদ-কিছুই আয়কর নথিতে দেখাননি।
রাতের ভোটের এই ডিসি হলে মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। আর তার স্ত্রী হলেন আমেনা আখতার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের অনুসন্ধানে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বিশেষ এই গোয়েন্দা ইউনিটের অনুসন্ধান করে স্বামী মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের চেয়ে স্ত্রী আমেনা আখতারের আটগুণ বেশি সম্পদ পেয়েছেন, যার বেশিরভাগের বৈধ আয়ের উৎস নেই। আর দুইজনের ব্যবসা, শেয়ার ও সম্পদ কিনে প্রায় ১০ কোটি ৩৯ লাখ টাকার আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। আয়কর গোয়েন্দা থেকে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্রমতে, খুলনা জেলার সাবেক ডিসি মোহাম্মদ হেলাল হোসেন সর্বশেষ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব পদে ছিলেন। চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি সরকার ২০১৮ সালের রাতের ভোটের ৩৩ ডিসিকে ওএসডি করে, যার মধ্যে হেলাল হোসেনও রয়েছেন। বর্তমানে তিনি ওএসডি অবস্থায় আছেন। স্ত্রী আমেনা আখতার ধানমন্ডির শুক্রাবাদস্থ নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। বেসরকারি হলেও এটি এমপিওভুক্ত কলেজ।
আয়কর গোয়েন্দার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মোহাম্মদ হেলাল হোসেন খুলনার জেলা প্রশাসক থাকাকালে সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে তাজমীন ফ্যাশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছর ১ কোটি ৩৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা জমা হয়েছে। একইভাবে প্রতিবছর এই ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকা জমা হয়েছে। তিনি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শেয়ারবাজার থেকে ৫ কোটি ১০ লাখ ৪১ হাজার ৭৪৩ টাকার শেয়ার ক্রয় করেছেন। যার বিপরীতে মুনাফা পেয়েছেন ২৮ লাখ টাকা। আবার এই শেয়ারের বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, প্রতিষ্ঠানের লেনদেন, আয়কর, শেয়ার কেনা, শেয়ারের মুনাফা, শেয়ারের বিপরীতে ব্যাংক ঋণ-এসবের কিছুই মোহাম্মদ হেলাল হোসেন তার আয়কর রিটার্নে দেখাননি। ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত হেলাল হোসেনের প্রাথমিকভাবে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকার কর ফাঁকি পেয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
অপরদিকে, অনুসন্ধানে আরো দেখা গেছে, আমেনা আখতার এমপিওভুক্ত কলেজ শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে থেকেই তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন। যদিও চাকরিবিধি অনুযায়ী এটা আচরণবিধির লঙ্ঘন। যেহেতু তিনি এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে বেতনের সিংহভাগ অর্থ পান সরকারের তহবিল থেকে। ফলে সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি মানতে বাধ্য। কিন্তু আচরণবিধির কোনো তোয়াক্কা না করেই আখতার এন্টারপ্রাইজ, তাহমিদ গার্মেন্টস এবং এইচ এ ফ্যাশন নামে তিনটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। আমেনা আখতারের এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসেবে প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকা জমা হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আমেনা আখতার ২০২৩-২৪ অর্থবছর ২৩ কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৭৬০ টাকার শেয়ার ক্রয় করেছেন। এসব শেয়ারের লভ্যাংশ পেয়েছেন ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। যার কিছুই তিনি আয়কর রিটার্নে দেখাননি। তবে রিটার্নে তিনি ৭৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকার বিনিয়োগ দেখিয়েছেন। এ বিনিয়োগের অর্থ কোথা থেকে এসেছে, তার কিছুই রিটার্নে উল্লেখ নেই। এমনকি তার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণও আয়কর নথিতে নেই। আবাসন কোম্পানি আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে ধানমন্ডিতে তিনি ২২৩০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার ঠিকানা হলো-বাড়ি নং ৪১/এ, রোড ৪/এ, ধানমন্ডি। ফ্ল্যাটটির প্রকৃত মূল্য ৪ কোটি ১২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি আয়কর নথিতে মূল্য দেখিয়েছেন ৩৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এবং ১০ লাখ টাকা ব্যক্তিগত বিশেষ ডিসকাউন্ট পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও ফ্ল্যাটটির মূল্য পরিশোধ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রে উল্লেখ রয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭৬ টাকা তিনি আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনকে পরিশোধ করেছেন। ৫ আগস্টের পর ফ্ল্যাটটি এক নিকট আত্মীয় চিকিৎসককে দান করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আয়কর গোয়েন্দা ইউনিটের কর্মকর্তারা অনুসন্ধান করে দেখেছেন, যে ফ্ল্যাটটি তিনি দান করেননি। ফ্ল্যাটটি ওই চিকিৎসকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। আমেনা আখতারের ব্যবসা, শেয়ার ক্রয়, মুনাফা অর্জন, ফ্ল্যাট ক্রয়সহ বেশিরভাগ সম্পদের সঠিক হিসাব তিনি দিতে পারেননি। যাতে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৯ কোটি ১৫ লাখ টাকার আয়কর ফাঁকি পেয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
** ১১ এয়ারলাইন্সে ভাড়া কারসাজি
** ফ্ল্যাট কিনে কালো টাকা সাদা করেছেন সাবেক প্রেস সচিব
** ইউনাইটেডের কর ফাঁকি ১২৬০ কোটি টাকা
** সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের শেয়ার দখলে ইউনাইটেড
** ৮০ হাজার টাকা বেতনের এসিটি থাকেন ১২ কোটি টাকার ফ্ল্যাটে
** ‘ট্যাক্স এক্সপার্ট’র সহায়তায় পাচারের অর্থে আদায় হবে কর
** ১৩৩৯ গাড়ি রিটার্নে নেই, ৪০৯ মালিক রিটার্ন দেন না
** রিটার্নে ২৩৭ কোটি টাকা যোগ করে ফাঁসলেন সালাহউদ্দিন
** পাচার ২২ লাখ কোটি টাকা, বেশিরভাগ এলসিতে
** পাচারের টাকায় দুবাইয়ে বাপবেটার অট্টালিকা
** হুন্ডির রাজা আল হারামাইন পারফিউমস!
** সামিট পাওয়ারের উৎসে করফাঁকি ১১১২ কোটি টাকা
** অনন্ত গ্রুপ এমডি-পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ
** বাতিল হওয়া সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্সে ৬৭১ চালান খালাস!
** টাকা বৈধ করতে ‘কুমির-বাঘের’ ভয় দেখান কমিশনার!
** বেক্সিমকোর নয়টিসহ ৩২ প্রতিষ্ঠান ৮৫৯ কোটি টাকা দেশে আনেনি
** ৯০ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ, করফাঁকি ১৩ কোটি
** ৪ প্রতিষ্ঠানের এক এমডি, করছেন করফাঁকি-অর্থপাচার
** বাটারফ্লাইয়ের শত কোটি টাকার করফাঁকি
** বিএসআরএম’র ৯৪ কোটি টাকার অবৈধ রেয়াত-ভ্যাট ফাঁকি
** সিটি গ্রুপের ২৬ কোটি টাকা শুল্ককর ফাঁকি
** আইওএফ’র ৬০০ কোটি লুট তদন্তে আয়কর গোয়েন্দা
** এয়ার টিকিট সিন্ডিকেট আয়কর গোয়েন্দার নজরদারিতে
** আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের পথচলা শুরু
** সচিব শহীদ খান ও স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে কর গোয়েন্দা
** গোয়েন্দার চিঠি পেয়ে টাকা সরালেন এমডি
** পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের আয়কর নথি তলব
** রাতের ভোটের ১১৬ ডিসি-এসপি কর গোয়েন্দার জালে
** বিদেশে ভরপুর সম্পদ, আয়কর নথিতে নেই
** রিটার্ন দিয়েও নাগরিকত্ব অস্বীকার টিউলিপের!
** কানাডায় টাকা পাচার, বিকাশ-রকেট-ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন
** সালাম মুর্শেদীর ২২ কোটি টাকা করফাঁকি, ব্যাংক হিসাব জব্দ
** এফডিআর ভাঙ্গে-গড়ে, রিটার্নে দেখান না কর আইনজীবী!
** বিআরটিএ পরিচালকের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
** ৩০০ প্রকৌশলীর করফাঁকি তদন্ত হচ্ছে
** করের টাকায় বাড়ি-গাড়ি, করেন নথি গায়েব-চালান জালিয়াতি
** ১৮৩ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ১৮৭৪ কোটি টাকা ফাঁকি উদ্ঘাটন
** ১৬৫৭২ অভিযান, ৯৯৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়
** ১২০০ কোটি কর ফাঁকিতে ৬০০ কোটি জরিমানা
** হাজার কোটি টাকার আয় গোপন, করফাঁকি শত কোটি!
** বিক্রয় রেজিস্টার জাল করে ভ্যাট ফাঁকি দেয় ‘মদিনা সিমেন্ট’