সম্প্রতি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের একাধিক ক্রেডিট কার্ডধারী একই ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। আকস্মিকভাবে তাদের মোবাইলে ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) পৌঁছানোর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কার্ড থেকে বিপুল অর্থ উধাও হয়ে যায়। অথচ ভুক্তভোগীরা কেউই ওটিপি শেয়ার করেননি বা কোনো সন্দেহজনক ওয়েবসাইট/অ্যাপে প্রবেশ করেননি। এ বিষয়ে ব্যাংক দায় স্বীকার না করে জানিয়েছে, তাদের সিস্টেম—যার মধ্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম ও নিরাপত্তা কাঠামো অন্তর্ভুক্ত—অক্ষত রয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনার জন্য তারা দায় চাপিয়েছে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে (যেমন বিকাশ, নগদ) ডিজিটাল লেনদেনের ওপর।
ভুক্তভোগী হাসিন হায়দার জানান, গত ২৬ আগস্ট রাত ৭টা ৪৩ মিনিটে তাঁর ফোনে হঠাৎ দুটি ওটিপি আসে। তিনি কোনো ওয়েবসাইটে লগইন করেননি কিংবা কারও কাছে ওটিপি শেয়ারও করেননি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দেখা যায়, তাঁর কার্ড থেকে ৫০ হাজার টাকা বিকাশে ট্রান্সফার হয়ে গেছে। ঘটনার পরপরই তিনি কার্ড ব্লক করার চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যাংকের হেল্পলাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।
এক গ্রাহক জানান, জরুরি অবস্থায় কার্ড ব্লক করার জন্য সরাসরি কোনো সুবিধা নেই। কল সেন্টারের কর্মীরা ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন—কেউ বলছেন স্টেটমেন্ট না আসা পর্যন্ত অভিযোগ নেওয়া যাবে না, আবার কেউ বলছেন অভিযোগ তাৎক্ষণিক নেওয়া সম্ভব। শেষ পর্যন্ত হাসিন হায়দারের অভিযোগ গ্রহণ করা হলেও তিনি জানিয়েছেন, তাঁর কমপ্লেইন কেস নম্বর ২০২৫০৮২৬৯৭৮৫৪৩। এ অবস্থাকে তিনি ‘সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল’ বলে উল্লেখ করেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শুরু থেকেই স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে সরাসরি বলা হয়েছে, যেহেতু ওটিপি ব্যবহার হয়েছে, তাই ব্যাংকের করণীয় কিছু নেই।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ওটিপি গ্রাহকের ফোনে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই যদি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে লেনদেন সম্পন্ন হয়ে যায়, তবে ব্যাংকের সিস্টেমে ত্রুটি বা কোনো অভ্যন্তরীণ অসৎ কর্মীর সম্পৃক্ততা থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোতে ‘জিরো লাইয়াবিলিটি পলিসি’ কার্যকর থাকে, যেখানে গ্রাহক ওটিপি বা কার্ডের তথ্য শেয়ার না করলে পুরো দায়ভার ব্যাংক গ্রহণ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশেও একই ধরনের নিয়ম চালু করা অত্যন্ত জরুরি। এদিকে ভুক্তভোগীরা বিষয়টি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে জানিয়ে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই ফেসবুক ও লিংকডইনে অনেক গ্রাহক একই ধরনের প্রতারণার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংককে ই-মেইল করা হয়। জবাবে ব্যাংকের ওয়েলথ অ্যান্ড রিটেইল ব্যাংকিং প্রধান লুৎফুল হাবিব জানান, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অন্যান্য মাধ্যমে যে প্রতারণার অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো মূলত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে (যেমন বিকাশ, নগদ) ডিজিটাল লেনদেনের সঙ্গে সম্পর্কিত।
তিনি বলেন, গ্রাহকের আস্থা ও আর্থিক নিরাপত্তা রক্ষা করা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রিপোর্ট হওয়া এসব লেনদেন বহিরাগত সিস্টেম থেকে সম্পন্ন হয়েছে এবং ওটিপি যাচাইয়ের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়েছে। ব্যাংকের সিস্টেমসমূহ—যার মধ্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম ও নিরাপত্তা কাঠামো অন্তর্ভুক্ত—কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
লুৎফুল হাবিব আরও জানান, কার্ডধারীদের সতর্ক করা হয়েছে যেন তারা তাদের এক্সেস এবং পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রমাণীকরণ ব্যবস্থা যথাযথভাবে সুরক্ষিত রাখেন। পাশাপাশি এসব ঘটনার তথ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হয়েছে এবং তারা বিষয়টি তদন্ত করছে। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, গ্রাহকদের পাশে রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এবং নতুন কোনো তথ্য পাওয়া গেলে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।