সেমিকন্ডাক্টর খাতে কর-শুল্কে বিশেষ সুবিধার সুপারিশ

বাংলাদেশের সেমিকন্ডাক্টর খাত থেকে বর্তমানে বছরে প্রায় ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের রপ্তানি আয় হচ্ছে। তবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই আয় বাড়িয়ে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা সম্ভব বলে মনে করছে জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটি। এ লক্ষ্য অর্জনে খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ১০ বছর কর অব্যাহতি, নির্দিষ্ট যন্ত্রাংশে শুল্ক ছাড় এবং বিশেষ তহবিল সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সেমিকন্ডাক্টর টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (আশিক চৌধুরী), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম হারুন-উর-রশিদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সৈয়দ মাহফুজুল আজিজ এবং সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি উল্কাসেমির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ এনায়েতুর রহমান।

বাংলাদেশের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণে সুপারিশ তৈরি করতে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গঠনের সময় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, এক মাসের মধ্যে টাস্কফোর্সকে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। তবে বাস্তবে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে টাস্কফোর্স আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেয়। আজ (৩ জুলাই) সেই প্রতিবেদন ও সুপারিশ গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করা হয়।

দেশের সেমিকন্ডাক্টর খাতের টেকসই উন্নয়নে তিনটি প্রধান অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে একটি পথনকশা প্রস্তাব করেছে টাস্কফোর্স। অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে রয়েছে—দক্ষতা উন্নয়ন, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ ও নীতিগত সহায়তা, এবং আন্তর্জাতিক সংযোগ জোরদার। এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং নীতিগত সহায়তার সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেমিকন্ডাক্টর খাত মূলত তিনটি ধাপে বিভক্ত—চিপ ডিজাইন, উৎপাদন এবং টেস্টিং ও প্যাকেজিং। এর মধ্যে চিপ ডিজাইন খাতে বাংলাদেশ তাৎক্ষণিকভাবে প্রবেশের সক্ষমতা রাখে। টেস্টিং ও প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রেও স্বল্প ও মধ্যমেয়াদে অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে চিপ উৎপাদনে যেতে হলে বড় ধরনের বিনিয়োগ এবং উচ্চমাত্রার দক্ষ জনবল প্রয়োজন, যা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, সেমিকন্ডাক্টর খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ২০২৫-২৬ সালের মধ্যেই লক্ষ্যভিত্তিক ও কার্যকর কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, চিপ অ্যাসেম্বলিং ও প্যাকেজিং কারখানায় গবেষণার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট শর্তে ১০ বছর পর্যন্ত কর অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে এ খাতের জন্য বন্ড সুবিধা এবং শুল্ক ও কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজ করার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ বা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে একটি ‘সেমিকন্ডাক্টর তহবিল’ গঠনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট কিছু আমদানি করা যন্ত্রাংশ—যেমন সার্ভার, নেটওয়ার্ক ডিভাইস ও সাইবার নিরাপত্তা সরঞ্জামে শুল্ক মওকুফের সুপারিশও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে স্বল্প মেয়াদে অবকাঠামো খাতে কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হাইটেক পার্কে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা বরাদ্দ করতে হবে এবং সেখানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে একটি ‘ক্লিনরুম’ স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে প্রাথমিকভাবে চিপ টেস্টিং ও প্যাকেজিং মেশিন বসানো সম্ভব হবে।

২০২৭ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় সেমিকন্ডাক্টর খাতে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য একটি জাতীয় কর্মসূচি প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত মডেলগুলো অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দক্ষতা উন্নয়নের জন্য মধ্যমেয়াদে নির্দিষ্ট কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রে বিশেষ কোর্স চালুর সুপারিশ রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০৩০ সালের পর নির্বাচিত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিকন্ডাক্টর বিষয়ে স্নাতকোত্তর, পিএইচডি এবং পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স চালুর প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

** ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সম্ভাবনা
** সম্মেলনে ৩১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে
** বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কর অবকাশের ‘শর্ত শিথিল’
** বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে প্রণোদনার পরিকল্পনা
** চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন ২ অর্থনৈতিক অঞ্চল
** বাংলাদেশে বিনিয়োগে পাঁচটি বড় বাধা
** স্যামসাং, মেটা, উবার, টেলিনর যেসব ব্র্যান্ড আসছে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!