সেবা বিবেচনায় ‘কাগজপত্রে’ উড়োজাহাজ জব্দ

বিমানকে কাস্টমস গোয়েন্দার চিঠি

** উড়োজাহাজ আটকের বিষয়টি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে প্রথমে ফোনে, এখন চিঠি দিয়ে জানিয়েছে কাস্টমস গোয়েন্দা
** সোনা চোরাচালানে উড়োজাহাজ আটকের প্রতিবেদন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে দেওয়া হয়েছে, কমিশনার শোকজ ও বিচারাদেশ দেবেন

সোনা চোরাচালানের দায়ে ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ জব্দ করে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। তবে ‘ন্যাশনাল ক্যারিয়ার’ ও ‘প্যাসেঞ্জার ফাসিলিটেশন’ বিবেচনায় ওই উড়োজাহাজটি ‘ফিজিক্যালি নয়’ দালিলিকভাবে জব্দ করা হয়েছে। জব্দ তালিকা অনুযায়ী প্রতিবেদন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে পাঠিয়ে কাস্টমস গোয়েন্দা। কাস্টম হাউস থেকে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স উড়োজাহাজ জব্দের বিষয়টিকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আর কাস্টমস গোয়েন্দা বলছে, উড়োজাহাজ জব্দের বিষয়টি টেলিফোনে বিমানকে ওইদিন জানানো হয়েছে। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।

সূত্র বলছে, রোববার কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স চট্টগ্রামের স্টেশন ইনচার্জকে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কাস্টমস গোয়েন্দার সহকারী পরিচালক মো. বিল্লাল হোসেন সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর কাস্টমস গোয়েন্দা ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এর যৌথ অভিযানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর একটি উড়োজাহাজের (এয়ারক্রাফট ৭৭৭-ইআর) সিটের নিচ থেকে (ফ্লাইট-বিজি১৪৮ এর সিট নং-৯জে) লুকায়িত অবস্থায় ২০টি স্বর্ণবার উদ্ধার করা হয়। যার ওজন দুই দশমিক ৩২ কেজি। উদ্ধার করা সোনা চোরাচালানের দায়ে এক যাত্রীকে আটক ও তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সিচের নিচে বিশেষভাবে লুকায়িত অবস্থায় চোরাচালানের সেই স্বর্ণবার পরিবহন করার দায়ে উড়োজাহাজটি কাস্টমস আইন, ২০২৩ অনুযায়ী দালিলিকভাবে জব্দ করা হয়। তবে বিমান প্রতিনিধির সাথে টেলিফোনিক আলোচনা ও ‘ন্যাশনাল ক্যারিয়ার’ এবং ‘প্যাসেঞ্জার ফাসিলিটেশন’ বিবেচনায় উড়োজাহাজটি ‘ফিজিক্যাল ডিটেইন’ করা হয়নি। আটক প্রতিবেদন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে পাঠানো হয়েছে।

CIID
অপরদিকে, শুক্রবার বিমানের জনসংযোগ শাখা থেকে মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম সই করা বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জব্দ করেছে বলে একটি ‘বিভ্রান্তিকর সংবাদ’ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যা বিমান কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সোনা চোরাচালানের ঘটনায় যাত্রীকে আটকের পর চট্টগ্রামগামী অন্যান্য যাত্রীদের সেখানে নামার অনুমতি দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যাত্রী নামানোর পরে ঢাকার অন্যান্য যাত্রীদের নিয়ে ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করে এবং পরবর্তীতে উড়োজাহাজটি যথারীতি যাত্রী নিয়ে রিয়াদের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজ জব্দের বিষয়ে বিমানকে ‘কোন পত্র বা ডকুমেন্ট দেয়নি বা এ ধরণের কোন তথ্য জানায়নি’।

কাস্টমস গোয়েন্দা সূত্রমতে, কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এর আগে উড়োজাহাজে সোনা চোরাচালানের বিষয়ে দেশের চার এয়ারলাইন্সকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। দেশে যত সোনা চোরাচালান হয়, তার সিংহভাগই হয় উড়োজাহাজের মাধ্যমে। সোনা চোরাচালান প্রতিরোধে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর পদক্ষেপ নেয়। বিশেষ করে ২৭ অক্টোবর ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজে সোনা আটকের পর কাস্টমস গোয়েন্দা উদ্যোগ নেন যে, যে উড়োজাহাজে সোনা চোরাচালান হবে, সেই উড়োজাহাজ জব্দ করা হবে। একইসঙ্গে ওই উড়োজাহাজ কোম্পানির এমডি বা সিইও-কে গ্রেফতার করা হবে। উড়োজাহাজে সোনা আটকের ঘটনায় কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে-তা জানাতে ১২ নভেম্বর ইউএস বাংলাকে চিঠি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ দেশের চার বিমান কোম্পানিকে এই চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে সোনা চোরাচালানে অভিযুক্ত হলে উড়োজাহাজ জব্দ করা, এমডি-সিইও-কে গ্রেফতারের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে বৃহষ্পতিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ওই উড়োজাহাজ জব্দ করা হয়েছে। এক দশক আগে ঢাকায় চোরাচালানের সোনা বহন করায় দুটি উড়োজাহাজ জব্দ করার নজির রয়েছে।

কাস্টমস গোয়েন্দার একজন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কাস্টম হাউসে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। কমিশনার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করবেন। নিয়ম অনুযায়ী বিমান কর্তৃপক্ষকে হাউসের কমিশনারের কাছে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে উড়োজাহাজ জিম্মায় নেয়ার আবেদন করতে হবে। কমিশনার আবেদন মঞ্জুর করলে বিমানের জিম্মায় থাকবে উড়োজাহাজ। বিমান কর্তৃপক্ষ নিজেরা তদন্ত করে এই চোরাচালানের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেন। উড়োজাহাজে সিসি ক্যামেরা থাকলে—সেখান থেকে ফুটেজ নিয়ে দেখতে পারে কারা সিটের নিচে সোনা রেখেছেন। আর হাউসের কমিশনার বিমান কর্তৃপক্ষকে শোকজ করবেন, যার মধ্য দিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে সেবার দিক বিবেচনায় বিমান ফিজিক্যালি নয়, কাগজপত্রে জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি জানিয়ে বিমান কর্তৃপক্ষকে আমরা চিঠি দিয়েছি।

** সোনা চোরাচালান: বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ জব্দ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!