ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে সেনাবাহিনী। তারা জানিয়েছে, সে সময় আশ্রয়প্রার্থীদের জীবন রক্ষা করা ছিল মূলত মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে নেওয়া সিদ্ধান্ত, যার লক্ষ্য ছিল আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ করা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উদ্ভূত জনরোষ এড়াতে দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন মোট ৬২৬ জন, যাদের মধ্যে ৫১৫ জনই ছিলেন পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে ৪৩৫ জন, অর্থাৎ প্রায় ৮৫ শতাংশ, আশ্রয় নিয়েছিলেন ঢাকার সাভার সেনানিবাসে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের একটি সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করেছে।
আইএসপিআরের তথ্য অনুযায়ী, সাভারে আশ্রয় নেওয়া ৪৩৬ জনের মধ্যে ৪৩৫ জন ছিলেন পুলিশ সদস্য এবং একজন ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) কর্মকর্তা। আশ্রয় নেওয়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ৩ জন পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর), ১১ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই), ২৩ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), ২ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট টাউন সাব-ইন্সপেক্টর (এটিএসআই), ৩ জন সার্জেন্ট, ৬ জন নায়েক এবং ৩৮৭ জন কনস্টেবল ছিলেন। এসব পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়, তখন সাভার ও আশপাশের এলাকার পরিস্থিতি কতটা উত্তেজনাপূর্ণ ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, জুলাই-আগস্ট মাসে সাভার ছিল দেশের অন্যতম ‘মারাত্মক হত্যাকাণ্ডের এলাকা’। ৫ আগস্ট সরকার পতনের ঘোষণা আসার পর আন্দোলনকারীরা সাভারসহ আশপাশের থানাগুলো ঘিরে ফেলে, আর তখন পুলিশের গুলিতে অনেক মানুষ নিহত হন। ঘটনার পরদিন সন্ধ্যায় বিক্ষুব্ধ জনতা সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়, ফলে এসব থানা কার্যত পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে। পরে, ১০ আগস্ট থেকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ ধীরে ধীরে থানাগুলোতে ফিরে আসতে শুরু করে।
সরকার পতনের দুই দিন পর, ৭ আগস্ট সাভারের বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র ৫ আগস্টেই অন্তত ৩৬ জন আন্দোলনকারী নিহত হন। নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন সাভার থানা এলাকার বাসিন্দা। পরে, আশুলিয়ায় ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে নিহত কয়েকজনের মরদেহে আগুন দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।